এবার নতুন কৌশল, যে সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে সোমালীয় জলদস্যুরা

সোমালি জলদস্যুরা ব্রিটিশ ও ভারতীয় নৌ জাহাজের আক্রমণ এড়াতে নাবিকদের জিম্মি করে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে দ্রুত স্থানান্তর করছে।

সোমবার (১৮ মার্চ) প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, জাহাজটি গেরাকেড এলাকা থেকে তিনবার উত্তর দিকে সরে যায় এবং সোমালি উপকূল থেকে মাত্র ৪ নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে।

বলা হয়, জলদস্যুরা নিজেদের দেশের ১২ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে বিদেশি জাহাজ ঢুকতে না দেওয়ার আন্তর্জাতিক আইনের সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে।

এদিকে, বাংলাদেশ নাবিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে হামলার পরিবর্তে মুক্তিপণের মাধ্যমে জিম্মি পরিস্থিতির অবসানের পরামর্শ দিয়েছে।

নৌ বাণিজ্য বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ বলেন, ‌‘বল প্রয়োগের মাধ্যমে যদি ঝুঁকি থাকে সেটাকে আমরা উৎসাহিত করতে চাচ্ছি না। আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি প্রথমে কর্মীদের উদ্ধার করায়, তারপর জাহাজ এবং মালামাল।’

মাস্টার মেরিনার ক্যাপ্টেন এম আনাম চৌধুরী বলেন, ‘আমি মনে করি, শান্তিপূর্ণ আলোচনাই এখন একমাত্র উপায়। আমাদের জান-মাল সবকিছুর নিরাপত্তার জন্য এটিই হলো উত্তম পন্থা।’

এর আগে ২০১০ সালে একই গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজ এমভি জাহান মনি ছিনতাই হওয়ার ১০০ দিন পর মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে এনেছিল গ্রুপটি। সেই জাহাজে ২৫ নাবিকসহ ২৬ জনকে জিম্মি করা হয়েছে। তাদের একজন ছিলেন মো. ইদ্রিস। তিনি বলেন, সেবার ২৬ জন নাবিক বেঁচে আছেন কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের সঙ্গে টাকা লেনদেন করা হয়।

তিনি জানান, পার্শ্ববর্তী দেশ কেনিয়ার একটা বিমান ওয়াটারপ্রুফ দুটি ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে প্যারাসুটের মাধ্যমে সমুদ্রে ফেলে। জলদস্যুরা সেটা তুলে জাহাজে নিয়ে আসে। সেই টাকা দেখার পর মুক্তি দিয়েছিল তাদের।

এদিকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবরে বলা হয়েছে, এমভি আব্দুল্লাহ এবং এতে থাকা ২৩ নাবিককে উদ্ধারে অভিযান শুরু করার প্রস্তুতি নিয়েছে সোমালিয়ার পুলিশ এবং আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর সম্মিলিত দল।

সোমবার (১৮ মার্চ) এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে যে সোমালিয়ার পুন্টল্যান্ড অঞ্চলে অসংখ্য জলদস্যু গ্যাং রয়েছে। আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পুলিশ বাহিনী বলেছে যে তারা উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে এবং এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করা জলদস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযানে অংশ নিতে প্রস্তুত রয়েছে।

তবে জাহাজটির মালিকপক্ষ কবির গ্রুপ এই ধরনের অভিযানের বিষয়ে কিছু জানে না বলে দাবি করেছে।

সংস্থার মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, “আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে নাবিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনা। এ ধরনের অভিযানের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীকে একটি সুস্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর এ ধরনের অভিযান সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই।

কবির গ্রুপের মুখপাত্র মিজানুল ইসলাম বলেন, এখানে হামলা হলে আমাদের নাবিকদের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। তাই আমাদের কোম্পানি সে পথে হাঁটবে না। আমরা নাবিকদের জীবিত তাদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিতে চাই।

গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ সোমালি জলদস্যুদের হাতে আটক হয়। ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা বহনকারী জাহাজের ২৩ জন নাবিক বাংলাদেশি।

Scroll to Top