Monday , May 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এক জনমে আর কত কষ্ট বাকি তোমার, লামিশার বাবাকে ডিআইজি

এক জনমে আর কত কষ্ট বাকি তোমার, লামিশার বাবাকে ডিআইজি

রাজধানীর বেইলি রোডের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুলিশ সদর দফতরে কর্মরত অতিরিক্ত ডিআইজি মো. নাসিরুল ইসলামের মেয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী লামিশা ইসলাম মারা গেছেন।

‘বাবা আমি আটকা পড়েছি, আমাকে বাঁচাও’-  মৃত্যুর আগে লামিশা তার বাবাকে ফোন করে এই শেষ কথা বলেছিলেন। লামিশার চাচা রফিকুল ইসলাম জানান,  মেয়ের আকুতির সামনে অসহায় বাবা মেয়েকে হারিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেছেন।

জানা যায়, ২০১৮ সালে লামিশার মা আফরিনা মাহমুদ মিতু মারা গেলেও মেয়ের দিকে তাকিয়ে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেননি নাসিরুল। তিনি তার দুই মেয়েকে নিয়ে ঢাকার অফিসার্স ক্লাবে থাকতেন। তার দুঃখে তার সহকর্মীরাও সমানভাবে মর্মাহত। নাসিরুলের এমনই একজন সিনিয়র সহকর্মী হলেন পুলিশের ডিআইজি রুহুল আমিন শিপার। যিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নাসিরুলকে নিয়ে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন। ‘অগ্নিপরীক্ষা’ শিরোনামে দেওয়া ওই পোস্টে নাসিরুলের জীবনের কঠিন পথের নানা দিক তুলে ধরেছেন তিনি।

পাঠকদের জন্য ডিআইজি রুহুল আমিন শিপারের পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

#অগ্নি_পরীক্ষা

প্রায় বছর ছয়েক আগের কথা। নাসির পাথরের মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। বিএসএমএমইউ (পিজি) হাসপাতালের ডি ব্লক-এর সামনে একটা ফ্রিজার ভ্যানে ওর স্ত্রীর মরদেহ রাখা। বিয়ের আগে ওরা মামাতো ফুপাতো ভাই-বোন ছিল।

নাসিরের জিম্মায় ছোট্ট দুটি মেয়ে রেখে ভাবি একা চলে গেলেন। একটু পরে তখনকার আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী স্যার এলেন। এরপর দাফনের জন্য নারায়ণগঞ্জে নেওয়া হলো মরদেহ।

২২তম বিসিএস ব্যাচের অফিসার অতিরিক্ত ডিআইজি নাসির পদার্থবিদ্যা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে। আমার পাশের ফজলুল হক হলে থাকতো। এখনো আমরা একই কম্পাউন্ডে থাকি এবং একই অফিসে কাজ করি। কয়েক বছর আগের কথা। তখন বেনজীর আহমেদ স্যার র‌্যাবের মহাপরিচালক। পুলিশ সদরদপ্তরে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে নাসিরের একটা প্রেজেন্টেশন দেখে প্রকাশ্যে বলে ফেললেন, ইউ আর সো ইন্টেলিজেন্ট। কিন্তু আমি তোমাকে চিনি না কেন?

এরপর বেনজীর স্যার আইজিপি হয়ে পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়া সংস্কারে হাত দিলেন। এআইজি রিক্রুটমেন্ট হিসেবে মেধাবী নাসির একটা অসাধারণ নিয়োগ কাঠামো তৈরি করে দেয়। যেখানে চাইলেও দুর্নীতি কিংবা পক্ষপাতিত্ব করা প্রায় অসম্ভব। বর্তমানে সেই কাঠামোতেই নিয়োগ চলছে।

দুই মেয়ে নিয়ে নাসিরের একার সংসার। একদিন শুধু বলেছিলাম, আর বিয়েশাদি করলে না? একটু হেসে মাথা নেড়ে ও বললো, না, স্যার।

ওর মেয়েরা খুবই মেধাবী। বড় মেয়ে সম্ভবত ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ফার্স্ট গার্ল ছিল। কলেজ শেষ করে সে বুয়েটে ভর্তি হয়েছিল।

নাসিরের জীবনে ছয় বছর আগের সেই রাত আবার ফিরে এলো। গতরাতে (২৯ ফেব্রুয়ারি) আগুন লাগার সময় বেইলি রোডের সেই রেস্তোরাঁয় ওর বুয়েট পড়ুয়া মেয়েটা ছিল। সে আর ফেরেনি, চলে গেছে জীবনের ওপারে।

বছর ছয়েক আগে স্ত্রী মরে যাওয়ার রাতে নাসিরের সেই চেহারার কথা স্পষ্ট মনে আছে আমার। এবার অবশ্য ওর সাথে দেখা হয়নি। মেয়ের মরদেহ নিয়ে ফরিদপুরের পথে আছে সে।

ওকে ফোন দিতে মন চাইছে না। তাই হোয়াটসঅ্যাপে শুধু নিচের মেসেজটা দিয়েছি- ‘নাসির, আমার অন্তরটা ছিঁড়ে যাচ্ছে। বাসায় বসে এখন কাঁদছি। এক জনমে আর কত কষ্ট বাকি তোমার?’

About Nasimul Islam

Check Also

অবন্তিকার পর এবার একই পথে হাঁটল মীম

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আ/ত্মহত্যা করেছে। শিক্ষার্থীর নাম শারভীন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *