Sunday , May 19 2024
Breaking News
Home / opinion / নৈশভোটকে মিথ্যা বলার সুযোগ নেই, বিদায়ী সাক্ষাৎকারে স্বীকার করে গেলেন মাহবুব তালুকদার

নৈশভোটকে মিথ্যা বলার সুযোগ নেই, বিদায়ী সাক্ষাৎকারে স্বীকার করে গেলেন মাহবুব তালুকদার

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারী। জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ নানা ধরণের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলকে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে দোষী হয়ে এসেছিলো এই কমিশন। যদিও সিইসি বরাবরই সকল অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছিলো, ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই নির্বাচন কমিশনের একজন অন্য়তম সদস্য় মাহবুব তালুকদার আজ সাক্ষাৎকারে নতুনভাবেই যেন সকল অভিযোগের সত্যতা মেনে নিলেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সবচেয়ে বড় অভিযোগ রাত্রিকালীন নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। নির্বাচনের আগের রাতে বাক্স ভর্তি ব্যালটের ছবি বিবিসির সংবাদদাতা প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে নির্বাচনের পূর্বে বিরোধী নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন আমাদের দেশে একটা কালচার হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে গায়েবি মামলার হিড়িক পড়ে যায়। আমি সবসময় এর বিরোধিতা করেছি। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন কাউকে গ্রেফতার করে তখন উচ্চ আদালতের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা অনুযায়ী করে না। এ কথা বলে লাভ নেই।’

এপ্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আগের রাতে ভোট দেওয়া হয়েছে, এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য। এই নির্বাচনে অভিযোগসমূহ তদন্তের জন্য আদালত বা অন্য কারও নির্দেশনার প্রয়োজন ছিল না। আমার ধারণা রাতের ভোটের বিষয়টি তদন্ত করলে নিজেদের ওপরই দায় এসে পড়ত বলে তদন্ত হয়নি।’

এসময়ে তিনি জানান, ‘দলীয় সরকারের আমলে নির্বাচন করতে আমার ওপর কোনো চাপ ছিল না। তবে মন্ত্রীরা বিভিন্ন সময় আমার সমালোচনা করেছেন, পদত্যাগ করতে বলেছেন। আমি তা গ্রাহ্য করিনি। তবে নির্বাচন কমিশনের ভিতরে থেকে চাপে ছিলাম। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন বা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতা প্রয়োজন।’

সাক্ষাৎকারে মাহবুব তালুকদার আরও জানান, ‘নির্বাচন কমিশন সভার কার্যবিবরণীতে বক্তব্য বিস্তারিতভাবে লিপিবদ্ধ হয় না। আমার অনেক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য কমিশন সভার কার্যবিবরণীতে স্থান পায়নি। ভিন্ন মত হলে তো কথাই নেই। কয়েকটি ক্ষেত্রে আমার লিখিত বক্তব্য কার্যবিবরণীতে সংযুক্ত করতে বলেছি। তবে আমার ভিন্ন মত যাতে হারিয়ে না যায়, সেজন্য আমি অসংখ্যবার ইউ, ও নোটের (আনঅফিশিয়াল নোট) মাধ্যমে সিইসি, কমিশনারবৃন্দ ও সচিবকে জ্ঞাত করেছি। এ ছাড়া আমি ভিন্ন মত পোষণ করে কয়েকবার ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছি। কমিশন সভায় আমাকে বক্তব্য রাখতে না দেওয়ার জন্য ঘোষণা দিয়ে সভা বর্জন পর্যন্ত করেছি।’

সর্বপ্রথমবারের মত ইভিএম এর প্রণয়ন ও তার ব্য়বহার সম্পর্কে মাহবুব তালুকদার জানান, ‘ইভিএম-এর আরম্ভলগ্নে আমি ইভিএমের বিরোধিতা করেছি। জনগণ অভ্যস্ত না হলে এর ব্যবহার ঠিক হবে না বলেছি। ইভিএম ব্যবহারের পূর্বে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। সে প্রতিশ্রুতি রক্ষিত হয়নি। অজ্ঞাত কারণে আমাদের ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্তের পূর্বেই ইভিএম কেনা হয়ে যায়। আমার কাছে ইভিএম মেশিন অপূর্ণাঙ্গ মনে হয়। নাসিক নির্বাচনে দেখেছি ইভিএমের কার্যকারিতা বেশ স্লো। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার ঠিক হবে কি না, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

নির্বাচন কমিশনার হিসেবে কমিশনের বিভিন্ন কার্যাবলীতে বঞ্চিত ও উপেক্ষিত হলেও ব্য়ক্তিগতভাবে গত পাঁচ বছরকে নিজের জীবনের জন্য় এক নতুন অভিজ্ঞতা বলে মনে করছেন মাহবুব তালুকদার। জানালেন নির্বাচন কমিশনের দিন গুলো নিয়ে ১২০০ পৃষ্ঠার ‘নির্বাচননামা’ নামক ডকুমেন্টেশন প্রকাশের কাজও শুরু করতে যাচ্ছেন।

About

Check Also

ভারতীয় হাই কমিশন সেলস কলে যায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে রোগী যাওয়া কমে গেলে: পিনাকী

সম্প্রতি দ্বাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগ আবারও একতরফা ভোট করে ক্ষমতা দখল করেছে।আর আওয়ামীলীগকে অবৈধ্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *