দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে নতুন করে পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। চীন, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতের কৌশলগত উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে। প্রভাবশালী ভারতীয় সংবাদমাধ্যম India.com দাবি করেছে যে এই তিনটি দেশ এক ধরণের ত্রিপক্ষীয় জোট গঠনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যার প্রভাব আঞ্চলিক ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
সম্প্রতি চীনের কুনমিং শহরে একটি ব্যতিক্রমী ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান ওয়েইডং, বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী এবং পাকিস্তানের অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন।
বৈঠকে সমুদ্র নিরাপত্তা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং বাণিজ্যের মতো বিষয়গুলি আলোচনায় উঠে আসে। চীন বলেছে যে এই বৈঠক কোনও দেশের বিরুদ্ধে নয়; বরং এটি একটি নতুন আঞ্চলিক সহযোগিতামূলক উদ্যোগ। তবে, ভারতের দৃষ্টিতে, এটি কেবল সহযোগিতা নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত কৌশল যার মাধ্যমে ভারতকে ঘিরে একটি কূটনৈতিক বলয় তৈরি করা হচ্ছে।
ভারতের মতে, পাকিস্তানের সাথে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক আরও জোরদার করে এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিজের দিকে টেনে এনে চীন ভারতের প্রভাব বলয় ভেঙে ফেলছে।
বিশেষ করে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতের উদ্বেগ বহুগুণ বেড়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যম বিশ্বাস করে যে, দক্ষিণ এশিয়ায় একসময় ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে বিবেচিত বাংলাদেশ এখন চীন ও পাকিস্তানের কৌশলগত বৃত্তে প্রবেশ করছে।
নতুন পাকিস্তান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই আলোচনায় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং সম্পর্কের উন্নয়নের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এমনকি ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানি হাইকমিশনারকেও সরকারি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে দেখা হয়েছে।
চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের একটি সিদ্ধান্ত আরও বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান এবং নোবেল বিজয়ী ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং তার জন্য একটি বিশেষ চার্টার্ড বিমান পাঠানো হয়েছে। ভারতীয় কূটনীতিকদের মতে, এটি কেবল সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়, বরং একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা।
ত্রিপক্ষীয় বৈঠক শেষে তিন দেশ একটি যৌথ বিবৃতিতে জানায়, তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনিয়োগ এবং সামুদ্রিক নিরাপত্তা ইস্যুতে কাজ করতে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করবে। ভারতের মতে, এখানেই লুকিয়ে রয়েছে কৌশলগত সংকেত। কারণ ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর ঘিরে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI) আগেই সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান যদি এই বলয়ের অংশ হয়, তাহলে ভারতের বাণিজ্য ভারসাম্য এবং কৌশলগত নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে।
সব মিলিয়ে বলা যেতে পারে যে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক দৃশ্যপট দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। ভারত, যা একসময় আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণে শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে ছিল, এখন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এবং এই সুযোগেই চীন একটি নতুন কৌশল গ্রহণ করছে, বন্ধুত্বের আড়ালে কূটনৈতিক জোট গঠন করে, ভারতের উপর সব দিক থেকে চাপ সৃষ্টি করছে – ভারতীয় বিশ্লেষক এবং মিডিয়ার ধারণা এটাই।

