বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা তরুণদের মধ্যে যুদ্ধের প্রস্তুতি সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। তারা সীমান্ত পেরিয়ে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, সংগঠন তৈরি করছে এবং সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলার এক তদন্তে এমনই এক বিরক্তিকর ও উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে।
২০১৭ সালে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর গণহত্যা, ধর্ষণ এবং নিপীড়নের মুখে ৭ লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। বর্তমানে কক্সবাজারসহ বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। ছয় বছরেরও বেশি সময় পরেও তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও কার্যকর অগ্রগতি হয়নি। ফলস্বরূপ, অনেক রোহিঙ্গা তরুণ ক্রোধ ও হতাশা থেকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে শরণার্থী শিবিরের তরুণদের মধ্যে সশস্ত্র সংগঠনের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। তারা স্বাধীন রাখাইন প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধ এবং জিহাদি মতাদর্শে জড়িয়ে পড়ছে। শিবির জুড়ে আরাকান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ক্যাম্পজুড়ে চলছে বৈঠক, আলোচনা ও সংগঠিত হওয়ার প্রক্রিয়া।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নিজেদের মধ্যকার বিরোধ ভুলে এখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এবং নতুন সদস্য নিয়োগ করছে। ধর্মীয় আবেগ ও ভাষা ব্যবহার করে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তরুণদের একটি বড় অংশ জিহাদের জন্য প্রস্তুত। আরসা ও আরএসও—এই দুই সংগঠন একসঙ্গে কাজ করছে। তাদের মূল লক্ষ্য, রোহিঙ্গা স্বাধীনতা। ক্যাম্পে থাকা চারটি সক্রিয় গোষ্ঠী—আরসা, আরএসও, ইসলামিক মাহাজ ও এয়ারে—সদস্য সংগ্রহ ও প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে। ক্যাম্পজুড়ে চলছে বৈঠক, আলোচনা ও সংগঠিত হওয়ার প্রক্রিয়া।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নিজেদের মধ্যকার বিরোধ ভুলে এখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এবং নতুন সদস্য নিয়োগ করছে। ধর্মীয় আবেগ ও ভাষা ব্যবহার করে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
বিবিসির মতে, ক্যাম্পগুলিতে সরাসরি সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া না হলেও, অনেকে সীমান্ত অতিক্রম করে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এক বা দুই বছর প্রশিক্ষণের পর তারা ক্যাম্পে ফিরে আসে। স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, ক্যাম্পে শারীরিক অনুশীলন, কারাতে এবং দলগত চলাচলের মতো কার্যক্রম দেখা যায়। মাঝেমধ্যে শত শত রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে রাখাইনে যুদ্ধে যোগ দেয়।
এদিকে, বাংলাদেশ সরকার এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি ক্যাম্পে সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতার কথা অস্বীকার করেছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেছেন যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোনও সশস্ত্র সংগঠন সক্রিয় নেই। আরসা এবং আরএসও মিয়ানমারে গঠিত সংগঠন এবং বাংলাদেশ সরকার এই সংগঠনগুলিকে কোনওভাবেই সমর্থন করে না। বিপরীতে, এই সংগঠনগুলির নেতাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এপিবিএন ডিআইজি প্রলয় চিসিম বলেছেন যে ক্যাম্পে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম ছাড়া অন্য কিছু সহ্য করা হবে না। তিনি বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ক্যাম্পে নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রোহিঙ্গা তরুণদের এই সশস্ত্র পথে ঝুঁকে পড়া বাংলাদেশের জন্য কেবল মানবিক নয়, বরং বড় ধরনের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক হুমকি। সীমান্তে যে ধরনের প্রস্তুতি চলছে, তা ভবিষ্যতের জন্য একটি গভীর সংকেত। এতে শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নয়, গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতিও হুমকির মুখে পড়তে পারে।

