ফের রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় হচ্ছে আ.লীগ, উত্তপ্ত টুঙ্গিপাড়া

সারা দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া নতুন উত্তেজনার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ধানমন্ডি-৩২-এ হামলা, দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে আক্রমণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে এবং শেখ হাসিনাসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর প্রত্যাহার ও হরতালের সমর্থনে মশাল মিছিল করেছে।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্র ঘোষিত হরতাল ও মশাল মিছিলের বিরোধিতা করে উপজেলা বিএনপি পাল্টা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। ফলে টুঙ্গিপাড়ায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে আয়োজিত মশাল মিছিলের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া ও গোপালপুরে মশাল মিছিল বের করে এবং বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। তারা ধানমন্ডি-৩২-এ হামলার প্রতিবাদ, দেশব্যাপী নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, অগ্নিসংযোগের নিন্দা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে শ্লোগান দেয়।

অপরদিকে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্র ঘোষিত হরতাল ও মশাল মিছিলের প্রতিবাদে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে উপজেলা বিএনপি। সোমবার রাতে পাটগাতীর টুঙ্গিপাড়া মাল্টিপারপাস পৌর সুপার মার্কেট চত্ত্বর থেকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে, যা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

পরে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি নেতারা আওয়ামী লীগের ডাকা হরতাল প্রতিহতের ঘোষণা দেন এবং গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সমাবেশ সফলভাবে সম্পন্ন করার অঙ্গীকার করেন।

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে টুঙ্গিপাড়ার পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে, শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে টুঙ্গিপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানান, আওয়ামী লীগের মশাল মিছিলের খবর পাওয়া গেছে এবং এটি উপজেলার সীমান্ত এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।


স্থানীয় নির্বাচন আগে চায় জামায়াত বিএনপি চায় পরে, রাজনৈতিক কৌশলে কার লাভ?

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বিরাজ করছে। জাতীয় নির্বাচন আগে হবে নাকি স্থানীয় নির্বাচন, এই বিতর্কে বিভক্ত রাজনৈতিক দলগুলো। বিএনপিসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিতে চায়, অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী স্থানীয় নির্বাচন আগে সম্পন্ন করার পক্ষে। এ নিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দিল্লির ভূমিকাও তুলে ধরা হয়েছে, যা সামাজিক মাধ্যমে বেশ আলোড়ন তুলেছে। গত কয়েকদিন ধরে এ বিষয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে।

কিন্তু স্থানীয় নির্বাচন আগে হলে কার লাভ? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সরকার চাইবে প্রথমে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজন করে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করতে। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মতে, আওয়ামী লীগ এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে নিজেদের সংগঠন পুনর্গঠনের চেষ্টা করতে পারে, যা তাদের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সহায়ক হবে। পক্ষান্তরে, জাতীয় নির্বাচন আগে হলে বিরোধী দলগুলো সরাসরি নির্বাচনী লড়াইয়ে যেতে পারবে, যেখানে আওয়ামী লীগের এমন সুবিধা থাকবে না।

এছাড়া, স্থানীয় নির্বাচন আগে হলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে, যা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্যও চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। অনেকের মতে, এটি একটি পরিকল্পিত কৌশল, যার মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে।

এ নিয়ে ইতিমধ্যে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলো জামায়াতের অবস্থানের বিরোধিতা করেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সভাপতি ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা জাতীয় নির্বাচন আগে করার দাবি জানিয়েছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও মনে করেন, নির্বাচনের দেরি হলে ষড়যন্ত্রের সুযোগ বাড়বে।

সামাজিক মাধ্যমে অনেকে বলছেন, জাতীয় নির্বাচন পেছানোর পেছনে রাজনৈতিক কৌশল কাজ করছে এবং জনগণ ও অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। এখন দেখার বিষয়, রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ শেষে কোন কৌশল বাস্তবায়িত হয়।