ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অভিন্ন নদী তিস্তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে। তবে শুষ্ক মৌসুমে এই নদীর পানি বণ্টনের চুক্তি এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরোধিতার কারণে গত এক দশকেও এই চুক্তি আলোর মুখ দেখেনি। অন্যদিকে, ভারত উজানে তিস্তার পানি পুনঃনিয়ন্ত্রণ করায় বাংলাদেশের কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, যা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে।
এছাড়াও, সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক নিরীহ বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো অব্যাহত রয়েছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের জন্য গ্রেপ্তার করা গেলেও প্রাণঘাতী হামলা আইনসম্মত নয়। কিন্তু ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী এ ধরনের ঘটনা অব্যাহত রেখেছে, যা আন্তর্জাতিক নীতিমালার পরিপন্থী।
এই পরিস্থিতিতে বিএনপি তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা এবং সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবিতে তাদের আন্দোলন শুরু করেছে। দলের পক্ষ থেকে ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের শর্ত হিসেবে দুটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি তুলে ধরা হয়েছে।
লালমনিরহাটে এক আন্দোলন কর্মসূচির উদ্বোধনী বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “ভারতের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক চাই, তবে সেটা হতে হবে সমতার ভিত্তিতে। প্রথমত, তিস্তার পানি বণ্টনের ন্যায্য চুক্তি করতে হবে এবং দ্বিতীয়ত, সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা বন্ধ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ভারত থেকে ৫৪টি নদী বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়। এসব নদীর পানি উজানে আটকে রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে ভারত, যার ফলে আমাদের কৃষি ও মৎস্যখাত ক্ষতির মুখে পড়ছে। নদীগুলোতে পানি না থাকায় কৃষকেরা জমিতে চাষ করতে পারছে না, জেলেরা মাছ ধরতে পারছে না। এমন পরিস্থিতি চলতে দেওয়া যায় না।”
বিএনপি লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার ১১টি পয়েন্টে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। এতে সব বয়সের মানুষ অংশ নিয়েছে এবং “জাগো বাহে তিস্তা” স্লোগানে তিস্তা নদীর ১২৫ কিলোমিটার জুড়ে আন্দোলন চলছে।
এভাবে বিএনপি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত না হলে ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছাবে না। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ও সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবিতে তারা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।