Sunday , December 15 2024
Breaking News
Home / Countrywide / ১০ বছর পর দুই সন্তান নিখোঁজ মাকে ফিরে পেলো

১০ বছর পর দুই সন্তান নিখোঁজ মাকে ফিরে পেলো

অনেক সময় মানুষ ভারসাম্য হারিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। তবে তিনি আর তার জিন বাড়িতে ফিরতে পারেন না। দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান। এই সময় তার পরিবার থেকে খোঁজ নেওয়া হলেও তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। তবে দীর্ঘ কয়েক বছর পর আবারও হারিয়ে যাওয়া পরিবার তাদের হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে খুঁজে পান। এবার তেমনি এক মাকে তার সন্তারা দীর্ঘ ১০ বচর পর খুঁজে পেলেন। এই মহিলা দীর্ঘ ১০ বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে পাগলের মত ঘুড়ে বেড়িয়েছে। তবে অবশেষে মাকে খুঁজে পেয়ে দুই সন্তান অনেক খুশি হয়েছেন। এবার দুই সন্তানের মায়ের সম্পর্কে সংবাদ উঠে এল।

ফেনীর সোনাগাজী পৌর এলাকায় গত দেড় মাস ধরে সড়কে ও পাড়ার অলিগলিতে অজ্ঞাত পরিচয়ের মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীকে দেখতে পেতো স্থানীয় বাসিন্দারা। অনেক সময় বি”ব”স্ত্র অবস্থায় রাস্তায় চলাচল করতে দেখা যেত মধ্যবয়সী ওই নারীকে। নিখোঁজের ১০ বছর পর সোনাগাজী বাজার এলাকায় ঘোরাফেরা করা মানসিক ভারসাম্যহীন নারীটিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন।

সোনাগাজীর ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিখন বনিক ও সোনাগাজী পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন’র উপস্থিতিতে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বড় ছেলে শাওনের কাছে ভারসাম্যহীন সুফিয়াকে হস্তান্তর করে স্থানীয় সামাজিক সংগঠন সহায়। এসময় সুফিয়ার চিকিৎসা খরচ বাবদ তার ছেলের হাতে নগদ অর্থ সহায়তা তুলে দেন মেয়র খোকন। সহায় সংগঠনের নিজস্ব এম্বুলেন্সে করে রাতেই তাকে ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় নেওয়া হয়। ঢাকায় পৌঁছালে সেখানে সুফিয়ার বাবা মোহাম্মদ আলী তাকে গ্রহণ করেন। বুধবার সকালে তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হবে বলে স্বজনরা জানায়।

ফেনীর মানবিক ও সামাজিক সংগঠন সহায়’র প্রধান সমন্বয়ক মঞ্জিলা আক্তার মিমি জানান, ‘অ’জ্ঞাত এই নারীর বিষয়টি মেয়র খোকন আমাদের জানালে আমাদের সংগঠনের সদস্যরা গত ৩রা সেপ্টেম্বর বিকালে সোনাগাজী পৌরসভার বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি বিকল মিনি বাসের ভিতরে বিবস্ত্র ও জ্বরে আক্রান্ত অবস্থায় নারীটিকে উদ্ধার করে। পরে তাকে ফেনীর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা সেবা ও পরিচর্যা শুরু করি।’

অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ওই নারী মিমিকে বলেন, তার নাম সুফিয়া।

তবে তিনি নির্দিষ্ট করে তখন অন্য কোন পরিচয় দিতে পারছিল না। তার দেওয়া আংশিক তথ্য মতে তার পরিবারের খোঁজ নেওয়া শুরু করে সহায় টিম। ফেনী জেলাসহ আশপাশের থানাগুলোতে পরিচয় শনাক্তের জন্য নারীটির ছবি ও তথ্য সরবরাহ করে সহায় টিম। গত ৫ সেপ্টেম্বর রাতে শাওন নামে এক ব্যক্তি মোবাইল ফোনে জানান, কুমিল্লা জেলার হোমনা থানা পুলিশের ফেসবুক পেইজে পরিবারের খোঁজ পেতে যে মহিলার ছবি ও তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে তিনি তার মা। তার মায়ের নাম সুফিয়া বেগম। তিনি গত ১০ বছর যাবৎ নিখোঁজ ছিলেন।

বড় ছেলে মোহাম্মদ শাওন বলেন, তার মা সুফিয় বেগম। বয়স অনুমান ৪০ বছর। স্বামী মোহাম্মদ আলম। বাড়ি নরসিংদী জেলার মাধবদী উপজেলার পুরান চর এলাকায়। গত দশ বছর আগে শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামীর অমানবিক অত্যাচারের এক পর্যায়ে মস্তিষ্কে বিকৃতি দেখা দেয়। পরে মানসিক ভারসাম্যহীন অপবাদে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন স্বামী মোহাম্মদ আলম। পরে ২০১১ সালে সুফিয়াকে ঢাকার কমলাপুর এলাকায় দেখতে পান তার গ্রামের এক প্রতিবেশী। তারপর সুফিয়ার দুই ছেলে সন্তান ও স্বজনরা নানা স্থানে খুঁজেও তার আর সন্ধান পায়নি।

সুফিয়ার পরিচয় শনাক্তের পরে গত ৬ই সেপ্টেম্বর দুপুরে তার বড় ছেলে শাওন ও তার ফুফাতো ভাই সিফাত ফেনীতে আসেন এবং মোবাইল ফোনে ভিডিওকলের মাধ্যমে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে আ’বেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সুফিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা। এসময় একজন অপরজনকে চিনতে সক্ষম হয়।

সুফিয়ার ১৬ বছর বয়সী বড় ছেলে মোহাম্মদ শাওন আরও জানায়, ‘তার ১৪ বছর বয়সী মোহাম্মদ আরমান নামে আরেকটি ছোট ভাই আছে। সে অভাবের তাড়নায় গ্রামে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। শাওন ঢাকার আলরাজী হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় পদে চাকরি করেন। বাবা মোহাম্মদ আলম ১০ বছর আগে তার মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পর থেকে তারা দুই ভাই নানার বাড়ির পরিবারের সহযোগিতার মাধ্যমে বেড়ে উঠেন। মাকে হারিয়ে ফেলার পর ঢাকা শহরে সবসময়ই মাকে খুঁজে বেড়াতেন শাওন।’

মোহাম্মদ শাওন বলেন, ‘মাকে হারিয়ে আমরা দুই ভাই খুব হতাশ হয়েছিলাম। এখন সেই হতাশা কাটিয়ে উঠেছি। তবে আমাদের অসচ্ছল পরিবার হওয়ায়, আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে মায়ের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার জন্য বিত্তশালীদের কাছে সহযোগিতা চাই।’

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ইকবাল হোসেন ভূইয়া জানান, সুফিয়ার মনোবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা ও পরিবারে সদস্যদের সঙ্গ পেলে তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন।

এদিকে, দুই সন্তান তাদের মাকে খুঁজে পাওয়ায় অনেক আনন্দিত হয়েছে। অনেক মানুষ বর্তমানে তাদের হারিয়ে যাওয়া মাকে দেখতে আসছেন। তবে বর্তমানে তারা মাকে সুস্থ করার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন। দীর্ঘদিন ধরে তাদের মা দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছে। বর্তমানে তাদের মায়ের শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। এই দুই সন্তান জানা্য তাদের মা হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে তারা যেখানেই যেতেন তাদের মাকে খোঁজতেন। অবশেষে তাদের মাকে খুঁজে পেয়ে তারা অনেক খুশি হয়েছেন।

About

Check Also

আবার ঢাকায় ফিরলেন পিটার হাস

বাংলাদেশে তিন বছরের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব শেষ করে গত জুলাই মাসে ঢাকা ছেড়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য সাবেক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *