অনেক কাজ করেছি, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো দিন হয়নি : আসিফ নজরুল

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বল্প সময়ে তিনি এমন অনেক কাজ করেছেন যা বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনও করা হয়নি।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সিলেট সদর উপজেলার বিমানবন্দর এলাকার একটি বিলাসবহুল হোটেলে বাধ্যতামূলক প্রাক-বিচার মধ্যস্থতা কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

আইন উপদেষ্টা বলেন, আমি তো ফুটবল খেলোয়াড় বা মঞ্চের অভিনেতা না যে, যা করছি তা দেখতে পারবেন। আমরা প্রায়ই শুনি-আপনি কি করেছেন? শহীদের রক্তের ওপর এখানে বসেছেন? আমরা আপনাকে এখানে বসিয়েছি?

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের আওতাধীন জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, এখন থেকে আর পারিবারিক বিরোধ, পিতা-মাতার ভরণপোষণ, বাড়ি ভাড়া, যৌতুকসহ ৮টি বিষয়ে সরাসরি মামলা করা যাবে না। মামলা দায়েরের আগে বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতা বিধান রেখে আইন কার্যকর হচ্ছে।

আসিফ নজরুল বলেন, আইন ও বিচার সম্পর্কিত যে পরিবর্তন করে দিয়েছি তা পরবর্তী সরকার অব্যাহত রাখলে দেশের সাধারণ মানুষ সঠিক বিচার পাবে। এমন আরও অনেক কাজ করা হয়েছে যার ফল পরবর্তীতে পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, এ উদ্যোগ সামাজিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তিতে সহায়ক হবে, যা মামলাজট কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। অনেকের মামলা ছাড়া কম সময় ও কম খরচে বিরোধ সমাধান হচ্ছে। মামলা করার আগে বাধ্যতামূলক মামলাপূর্ব মধ্যস্থতার কার্যক্রমের দারস্থ হতে হবে। পরে চাইলে মামলায় যেতে পারবেন। এর ফলে বিচারপ্রার্থীরা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আইনগত সহায়তা পাবেন।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার আইন ও বিচার সম্পর্কিত যে পরিবর্তন এনে দিয়েছে তা পরবর্তী সরকার অব্যাহত রাখলে দেশের মানুষ সহজে ন্যায়বিচার পাবেন।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আইনগত সহায়তা সম্প্রসারণ ও আরও গতিশীল করতে ইতোমধ্যে আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করা হয়েছে। অধ্যাদেশের আওতাভুক্ত বিষয়গুলো হচ্ছে— পারিবারিক বিরোধ, পিতামাতার ভরণপোষণ, বাড়ি ভাড়া, ক্রয়, বণ্টন, যৌতুক ইত্যাদি এখন থেকে মামলাপূর্ব মধ্যস্থতার আওতায় আনা হচ্ছে।

এই কর্মসূচিটি সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী, রাঙ্গামাটি জেলায় আইনি সহায়তা (সংশোধন) অধ্যাদেশের আওতায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে শুরু হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের ১২টি জেলায় এই বাধ্যতামূলক বিধান বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ও সিনিয়র জেলা জজ শেখ আশফাকুর রহমান আইনি সহায়তা আইনের সাম্প্রতিক সংস্কারের উপর বক্তব্য রাখেন এবং সিলেট জেলা আইনি সহায়তা কমিটির চেয়ারম্যান, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ হালিম উল্লাহ চৌধুরী প্রাক-মোকদ্দমা মধ্যস্থতা বাস্তবায়নে জেলা বিচার বিভাগের ভূমিকা সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন।

তারা বলেন, এই ধরনের সময়োপযোগী সংস্কার বিচার ব্যবস্থাকে আরও গতিশীল এবং জনবান্ধব করে তুলবে। তারা আশা প্রকাশ করেন যে জেলা আইনগত সহায়তা জনগণের আস্থার প্রতীক হবে। এছাড়াও, জিআইজেড বাংলাদেশের বর্তমান কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্টিনা বারকার্ড একটি বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ এবং উন্নয়ন অংশীদারের প্রতিনিধি হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন – সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী পিপিএম, সিলেটের ডেপুটি কমিশনার মো. সারওয়ার আলম, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো. মুশফেকুর রহমান, জেলা দায়রা জজ আব্দুল হালিম, সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইলিয়াস আহমেদ, সিলেট জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান এবং বিভিন্ন সরকারি বিভাগের কর্মকর্তারা।

Scroll to Top