‘নতুন সরকার’ গঠনের মিশনে এসে গ্রেপ্তার মার্কিন নাগরিক

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীর উচ্চ নিরাপত্তা-বেষ্টিত মিন্টো রোডের মন্ত্রিপাড়ায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করার সময় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীকে (৫৫) গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশের দাবি, তিনি বাংলাদেশে এসেছেন বর্তমান সরকারকে অপসারণ করে একটি “নতুন জাতীয় সরকার” বা “তত্ত্বাবধায়ক সরকার” গঠনের উদ্দেশ্যে। এছাড়া তিনি নিজেকে একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার “চুক্তিভিত্তিক এজেন্ট” হিসেবেও দাবি করেছেন।

গ্রেপ্তারের পর শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) তাকে ঢাকার একটি আদালতে হাজির করে পুলিশ ১৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। তবে আদালত তাৎক্ষণিকভাবে রিমান্ড মঞ্জুর না করে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর শুনানির তারিখ ধার্য করেন এবং এর মধ্যে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, “এনায়েত করিমকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা প্রাথমিকভাবে তার ফোন বিশ্লেষণ করেছি, যেখানে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক তথ্য পাওয়া গেছে। বিষয়টি বিস্তারিত যাচাই করতে আমরা রিমান্ড আবেদন করেছি।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা তথ্য পেয়েছি, এ ব্যক্তি কিছু রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে গোপনে সাক্ষাৎ করেছেন।”

রমনা থানায় করা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) অনুযায়ী, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এনায়েত করিম একটি প্রাডো গাড়িতে করে মিন্টো রোড এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিলেন। তার চলাফেরা সন্দেহজনক মনে হলে পুলিশ গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সন্তোষজনক উত্তর দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তাকে আটক করা হয়।

পুলিশ তার কাছ থেকে দুটি আইফোন জব্দ করেছে। প্রাথমিক বিশ্লেষণে ওই ফোনগুলোতে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক তথ্য পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম জানিয়েছেন, তিনি গত ৬ সেপ্টেম্বর কাতার এয়ারওয়েজে নিউইয়র্ক থেকে ঢাকায় আসেন। প্রথমে সোনারগাঁও হোটেলে অবস্থান করেন, পরে গুলশানের একটি বাসায় ওঠেন। এ সময়ে তিনি বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা এবং ব্যবসায়ী নেতার সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেছেন।

তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মো. আজিজুল হাকিম বলেন, “তার কর্মকাণ্ড অত্যন্ত সন্দেহজনক। আমরা তদন্ত করছি, তার কার্যকলাপ কোনো বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে কি না।”

শনিবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথির আদালতে তাকে হাজির করলে পুলিশ সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে। আদালত তখন রিমান্ড শুনানির জন্য ১৫ সেপ্টেম্বর তারিখ নির্ধারণ করে এবং তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এমন সময় যখন বাংলাদেশ নির্বাচনের আগে উত্তপ্ত পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে, তখন একজন বিদেশি নাগরিকের এ ধরনের “গোপন তৎপরতা” উদ্বেগের বিষয়। সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের সঙ্গে তার যোগাযোগের দাবি জাতীয় নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুতর ইঙ্গিত বহন করে।

Scroll to Top