নিজ গর্ভধারিণী মাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র হত্যা মামলায় ফাঁসালেন ছেলে

৬৭ বছর বয়সী আনোয়ারা বেগম, যিনি রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থিত ‘কার হাউজ লিমিটেড’-এর অর্ধেক মালিক, বর্তমানে কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন। জীবনের এই সময়ে সন্তান-পরিজন নিয়ে শান্তিতে থাকার কথা থাকলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক হত্যা মামলার আসামি হিসেবে তিনি আটক রয়েছেন।

পরিবার ও আইনজীবীদের অভিযোগ, আনোয়ারা বেগম সম্পূর্ণ নির্দোষ হলেও পারিবারিক সম্পত্তি দখলের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। তাদের দাবি, নিজের ছোট ছেলে তৌহিদ আনোয়ার অভিক মায়ের অংশীদারিত্ব দখল করতে ব্যর্থ হয়ে একের পর এক মিথ্যা মামলায় তাকে জড়াচ্ছে।

তাদের মতে, ২০২৩ সালে স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে তিন সন্তানের মধ্যে ছোট ছেলে অভিক মায়ের মালিকানা অংশ নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। কিন্তু আইনি কারণে তা সম্ভব না হওয়ায় জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে দায়ের হওয়া মামলাগুলোতে ‘মামলাবাজদের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে’ মায়ের নাম অন্তর্ভুক্ত করান তিনি।

মামলার ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রথমে ৩ মার্চ যাত্রাবাড়ী থানায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এক হত্যা মামলায় ১৬৭ নম্বর আসামি করা হয় আনোয়ারা বেগমকে। এরপর ৪ মে উত্তরা পূর্ব থানার আরেক মামলায় তাকে ১৪০ নম্বর আসামি করা হয়। সর্বশেষ ২৪ জুলাই দায়ের হওয়া মামলায় তার নাম ওঠে ৬৪ নম্বর আসামি হিসেবে। সব মামলাই জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত।

এমনকি পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়। আনোয়ারার ভাই মেজবাহ উদ্দিন লিটন বলেন,
“আমার বোন সাধারণ মানুষ। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য। অথচ মামলাগুলোতে তাকে আওয়ামী লীগ নেত্রী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু মায়ের অংশীদারিত্বের লোভে নিজের জন্মদাত্রীকে এভাবে হয়রানি করা নজিরবিহীন।”

বিএনপির স্থানীয় নেতারাও নিশ্চিত করেছেন যে আনোয়ারা বেগম নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।

পুলিশ প্রথমে তাকে ৯ জুলাই ৫৪ ধারায় আটক করে এবং পরদিন আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। পরে যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা পূর্ব থানার মামলায় জামিন পান তিনি। পুলিশের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে আনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে হত্যার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বাদীপক্ষের কাছ থেকেও এমন কোনো সাক্ষ্য মেলেনি।

তবে বর্তমানে তিনি মোহাম্মদপুর থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর শুনানির অপেক্ষায় রয়েছেন। আইনজীবীরা বলছেন, সাম্প্রতিক একটি আদালতের আদেশ ‘বিধিবহির্ভূত’, যা তার মুক্তির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আনোয়ারা বেগমের আইনজীবী এডভোকেট রিয়াদ বলেন,”এটি নিছক একটি পারিবারিক সম্পত্তি দখলের মামলা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নামে অনেক নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। আনোয়ারা বেগম তাদের মধ্যে একজন।”

অন্যদিকে ছেলে তৌহিদ আনোয়ার অভিক এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন তিনি অসুস্থ এবং পরিবারের আনা অভিযোগ সত্য নয়।

Scroll to Top