সেনাবাহিনীতে র’ এর মাস্টারমাইন্ড ছিলেন জেনারেল মুজিব

লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ইতিহাসে অন্যতম বিতর্কিত নাম। একসময় শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন সহযোগী হিসেবে তিনি দেশের সামরিক কাঠামোর কেন্দ্রে অবস্থান করতেন। সেনাবাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস পদে থেকে তিনি শুধু সামরিক ঘাঁটির কৌশলগত শক্তি ও দুর্বলতার খবরই জানতেন না, বরং অপারেশনাল নিয়ন্ত্রণও তার হাতে ছিল। এই ক্ষমতা ব্যবহার করে তিনি ধীরে ধীরে একটি ছায়া নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন, যা কাজ করছিল ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রয়য়ের হয়ে।

তদন্তে জানা যায়, জেনারেল মুজিব ও শেখ হাসিনার উপদেষ্টা জেনারেল তারেক সিদ্দিক যৌথভাবে সেনা ও পুলিশ বাহিনীতে রয়এর অনুপ্রবেশ ঘটান। বিমান বাহিনীতে রয়এর শ্যাডো রিক্রুটার স্কড লিডার আবদুল্লাহ ইবনে আলতাফ গ্রেফতার হওয়ার পর উন্মোচিত হয় পুরো চক্রের চিত্র। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, এমনকি পুলিশ, র্যাব, এএসএফ সর্বত্রই বসানো হয়েছিল রয়এর ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের। ১৪ই আগস্ট আলতাফের গ্রেফতারের পর অদ্ভুতভাবে মুজিবও ময়মনসিংহে বদলি হন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দিল্লিতে পালিয়ে যাওয়ার পরের দিন, অর্থাৎ ৬ আগস্ট, জেনারেল মুজিব সেনাবাহিনীতে ঘোষণা দেন যে সরকার নেই এবং দেশের নিয়ন্ত্রণ এখন সশস্ত্র বাহিনীর হাতে। এভাবেই তিনি অভিযোগ অনুযায়ী সামরিক শাসন শুরু করার চেষ্টা করেন। এই প্রচেষ্টায় কয়েকজন প্রভাবশালী সাবেক ও কর্মরত কর্মকর্তা যুক্ত ছিলেন বলে জানা যায়, তাদের মধ্যে রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল হামিদুল হক, এনএসআইডিসি মোহাম্মদ হোসেন আল মুরশেদ, বরখাস্ত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আকবর হোসেন, তাবরেজ শাম চৌধুরী, মো. শাহিনুল হক এবং সাইফুল আলম। তবে সেনাপ্রধান ওয়াকারুজ্জামানের কঠোর পদক্ষেপে অভ্যুত্থানের চেষ্টা ভেস্তে যায়।

দুর্নীতির ক্ষেত্রেও মুজিবের সাম্রাজ্য ছিল বিশাল। দুর্নীতি দমন কমিশনের তথ্যমতে, মুজিব ও তার স্ত্রী তাসরিন মুজিবের নামে ঢাকায় রয়েছে ৩৪টি ব্যাংক হিসাব, দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, পূর্বাচলে ১০টি প্লট, ২০ বিঘা জমি এবং নিউ ইয়র্কে দুটি অ্যাপার্টমেন্ট। শেখ হাসিনার সাথে দেখা করিয়ে দেওয়ার নামে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঘুষ ও বিলাসবহুল গাড়ি নেওয়া ছিল তার নিত্যদিনের রুটিন। ব্যারিস্টার সোয়ার হোসেনের হিসাবে, এই দুর্নীতির পরিমাণ প্রায় ২১০০ কোটি টাকা।

বর্তমানে মুজিব দিল্লিতে অবস্থান করছেন, তার সঙ্গে আছেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আকবর ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল। অভিযোগ রয়েছে, তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সরিয়ে শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় আনার পরিকল্পনা করছেন।

নিরাপত্তা সূত্র জানায়, দেশের সাম্প্রতিক নাশকতার ঘটনাগুলোর সাথে তাদের যোগসূত্র রয়েছে। প্রশ্ন হলো, কীভাবে একজন জেনারেল সেনাবাহিনীর ভেতরে ‘র’-এর শাখা অফিস বসিয়ে দিলেন? কীভাবে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের পতাকা ধীরে ধীরে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করলেন? যদি এমন রাষ্ট্রদ্রোহীকে বিচার ছাড়া ছেড়ে দেওয়া হয়, তবে ভবিষ্যতে দেশের সরকার ষড়যন্ত্র ঠেকাতে কতটা সক্ষম হবে—সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।

Scroll to Top