বিএনপি নেতার হুঁশিয়ারি, ‘ড. ইউনুসের পদত্যাগের দাবিতে যাতে রাস্তায় নামতে না হয়’

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারওয়ার আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকারের অনেক অসৎ উদ্দেশ্য ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে। মনে রাখা উচিত যে নির্বাচনের দাবিতে যাতে আন্দোলন করতে না হয়। শুধু নির্বাচন নয়, বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্ব ড. ইউনূসের পদত্যাগও যাতে রাস্তায় নামার প্রয়োজন না হয়। তাই তিনি কৌশলের আশ্রয় না নিয়ে দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

গতকাল ফটিকছড়ি সরকারি কলেজ মাঠে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফিরাত, খালেদা জিয়ার আরোগ্য ও তারেক রহমানের সুস্বাস্থ্য এবং দেশবাসীর মঙ্গল কামনা করেন। সারওয়ার আলমগীর বলেন, দেশ ও বিএনপির বিরুদ্ধে কোনও ষড়যন্ত্র সফল হবে না। এই দল জিয়াউর রহমানের আদর্শের দল, জনতার দল। স্বাধীনতার পর যারা আওয়ামী লীগের সাথে জোট করে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না। তিনি বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলার অবনতি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেশের জনগণকে নিরাপত্তা দিতে হবে। প্রশাসনে এখনও আওয়ামী লীগের বন্ধুরা ঘুরে বেড়াচ্ছে।

তিনি ভারতের মসজিদ ও মুসলিমদের উপর হামলা এবং তারাবিহ নামাজ পড়ার সময় মাজারে হামলার তীব্র নিন্দা জানান। পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মোবারক হোসেন কাঞ্চনের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, এসএম মনসুর চৌধুরী এবং জালাল উদ্দিনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে বক্তৃতা করেন বিএনপির সিনিয়র নেতা আহমেদ হোসেন তালুকদার, জেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব নাজিম উদ্দিন শাহীন, উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নুরুল হুদা চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল আলম চৌধুরী প্রমুখ।


বোনকে ফ্ল্যাট পাইয়ে দিতে স্বাক্ষর জাল করেছিলেন টিউলিপ

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রাক্তন ব্রিটিশ নগরমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সম্পদ হস্তান্তরের জন্য জাল নথি ব্যবহার করার অভিযোগ এনেছে। টিউলিপ তার বোন আজমিনা সিদ্দিকের নামে সম্পত্তি হস্তান্তরের জন্য জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে ঢাকার পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পে নিজের এবং তার পরিবারের জন্য সরকারি প্লট দখলের অভিযোগ রয়েছে। টিউলিপ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জমি বরাদ্দ থেকে অবৈধভাবে এই সম্পদ অর্জন করেছিলেন। বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমস এই সংবাদ সহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে যে টিউলিপ তার বোনকে সম্পদ পাইয়ে দিতে নথিতে জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি। পরিবার এবং নিজের জন্য ঢাকার পূর্বাচলের নিউ টাউনে প্লট পেতে অবৈধ পথ অবলম্বন করেছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক।

বৃহস্পতিবার দুদক কর্তৃক প্রকাশিত একটি নথিতে বলা হয়েছে যে তার বোন আজমিনা সিদ্দিককে একটি পৃথক ফ্ল্যাট প্রদানের জন্য জাল নথি ব্যবহার করা হয়েছিল। যেখানে অন্য ব্যক্তির স্বাক্ষর জাল করা হয়েছিল। চার্জশিট এখন আদালতে জমা দেওয়া হবে। কারণ, মামলাটি বিচারের জন্য আনার জন্য আদালতের অনুমতি প্রয়োজন। টিউলিপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এটাই প্রথম নয়। এর আগে ফিনান্সিয়াল টাইমসের একটি প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কথা প্রকাশ করা হয়েছিল। ফলস্বরূপ,শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হন টিউলিপ সিদ্দিক। তার খালা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দল আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির কাছ থেকে উপঢৌকন গ্রহণ করেছিলেন তিনি। যে খবর প্রকাশ হওয়ায় বিশ্ব জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। অভিযোগ অস্বীকার করলেও শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।

দুদক বাংলাদেশে টিউলিপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করছে। সংস্থাটি জানিয়েছে যে তারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ সম্পর্কিত দুর্নীতির অভিযোগের বিস্তৃত তদন্তের অংশ হিসাবে টিউলিপ এবং তার বেশ কয়েকজন আত্মীয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। সংস্থাটি দাবি করেছে যে হাসিনা এবং তার আত্মীয়রা নিয়ম-কানুনকে তোয়াক্কা না করেই রাষ্ট্রীয় সম্পদ দখল করেছেন। দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন ফিনান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন যে এটি তাদের দুর্নীতির একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী এবং তার পরিবারের ব্যাপক দুর্নীতি সহ আরও অনেক অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ বছর ধরে কর্তৃত্ববাদী পদ্ধতিতে বাংলাদেশ শাসন করেছিলেন, যা গত বছরের আগস্টে শেষ হয়েছিল। হাসিনার ক্ষমতা রক্তাক্ত বিদ্রোহের মাধ্যমে শেষ হয়েছিল। বিভিন্ন কমিশনের তদন্তে ইতিমধ্যেই হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অবৈধ জমি দখল এবং অর্থ পাচারের বেশ কয়েকটি অভিযোগ উঠে এসেছে। দুদকের দাবি, ঢাকার উপকণ্ঠে পূর্বাচল নিউ টাউন প্রকল্পে ৬০ কাঠা জমি অবৈধভাবে হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বরাদ্দ করা হয়েছিল। তদন্তকারীরা অভিযোগ করেছেন যে অবৈধভাবে সম্পদ গ্রহণে ঢাকায় আরেকটি ফ্ল্যাট নিয়েছেন টিউলিপ। যেটা পাওয়ার জন্য তিনি অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা প্রধান রিয়েল এস্টেট প্রবেশাধিকার পেতে নিয়মকানুনের ধার ধারেনি। এক্ষেত্রে তারা সরকারি লটারি, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং সরকারি কর্মচারীদের জমি পাওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্যতার মানদণ্ড উপেক্ষা করেছেন।

এই বৃহত্তর তদন্তের অংশ হিসেবে, দুদক অভিযোগ করেছে যে টিউলিপ ঢাকার গুলশান এলাকায় তার বোন আজমিনা সিদ্দিকের জন্য একটি ফ্ল্যাট পেতে একটি নথিতে জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করেছিলেন। তদন্তে দেখা গেছে যে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী সিরাজুল ইসলামের স্বাক্ষর জাল ছিল। আইনজীবী বলেছেন যে নথিতে তার স্বাক্ষর জাল। তিনি এর কোনওটিই প্রদান করেননি। যদিও সিলে তার স্বাক্ষর রয়েছে, তিনি বলেছেন যে নথিতে উল্লিখিত স্বাক্ষরের সাথে তার স্বাক্ষরের মিল নেই। গাজী সিরাজুল ইসলাম তদন্তকারীদের বলেছেন যে তিনি কেবল তার নিজের চেম্বারে নথিপত্র নোটারি করেছিলেন। এই ক্ষেত্রে, টিউলিপ বা আজমিনা সিদ্দিকীর সাথে তার কোনও পূর্ব পরিচিতি ছিল না। বিতর্কিত নথিটি একটি হেবা নথি। এটি সম্পদ উপহার দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত একটি ইসলামী আইন। নথিটি ২০১৫ সালের। সেই সময়, টিউলিপ লেবার পার্টির এমপি ছিলেন। তবে, তিনি এখনও কোনও মন্ত্রী পদ পাননি। দুদকের অভিযোগ, জাল নোটারি তৈরি করে সম্পদের আসল মালিকানা গোপন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টারমারের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক মিত্র টিউলিপ জানুয়ারিতে বলেছিলেন যে তিনি মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করছেন কারণ এটি সরকারকে বিভ্রান্ত করতে পারে। নতুন অভিযোগ সম্পর্কে মন্তব্যের জন্য অনুরোধের জবাবে টিউলিপ সিদ্দিক তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেননি।