হাসিনার দেশে ফেরা নিয়ে ট্রাম্পের পোস্ট ঘিরে তোলপাড়, যা জানা গেল

শেখ হাসিনার দেশে ফিরে আসার বিষয়ে সম্প্রতি একটি পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। পোস্টটিতে দাবি করা হয়েছে যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, “শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশে ফিরছেন।” তবে এই দাবির সত্যতা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী সময় জীবন বাঁচাতে শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে তাকে বিচারের সম্মুখীন হওয়ার দাবি তুলে সড়কগুলোতে প্রতিবাদ দেখা গিয়েছিল। তবে বর্তমানে যে পোস্টটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তা আসলে ট্রাম্পের আসল অ্যাকাউন্ট থেকে করা হয়নি।

অবিশ্বাস্যভাবে, এই পোস্টটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে একটি ফ্যান অ্যাকাউন্ট থেকে করা হয়েছে, যার স্ক্রিনশট সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ১৩ মার্চ এক্স (টুইটার) থেকে করা একটি পোস্টে দেখা যাচ্ছে যে এটি আসল ডোনাল্ড ট্রাম্প অ্যাকাউন্ট নয়, বরং তার নাম ব্যবহার করে তৈরি করা একটি প্যারোডি বা ফ্যান অ্যাকাউন্ট।

এছাড়াও, এক্সের নিয়ম অনুসারে, প্যারোডি বা ফ্যান অ্যাকাউন্টের নাম এবং জীবনীতে স্পষ্টভাবে বলা উচিত যে তারা মূল ব্যক্তির সাথে সম্পর্কিত নয়। যদিও এই ধরণের অ্যাকাউন্টগুলি যাচাই করা যেতে পারে, তবুও ট্রাম্প যে এই ধরণের পোস্ট করেছেন তার কোনও প্রমাণ নেই।

প্রকৃতপক্ষে, শেখ হাসিনার দেশে ফিরে আসার বিষয়ে ট্রাম্পের আসল অ্যাকাউন্টে কোনও পোস্ট পাওয়া যায়নি। ফলস্বরূপ, ট্রাম্পের নাম ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত পোস্টটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর।

যমুনা ইলেকট্রনিক্স এই বিষয়টি আরও বিশদে তদন্ত করেছে এবং তারা নিশ্চিত করেছে যে এই পোস্টের সাথে ট্রাম্পের কোনও সম্পর্ক নেই।

প্রমাণিত হয়েছে যে শেখ হাসিনার দেশে ফিরে আসার বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনও মন্তব্য বা পোস্ট ছিল না এবং এটি সম্পূর্ণ গুজব ছাড়া আর কিছুই নয়।


ঢাকায় জাতিসংঘের মহাসচিব, ভারতের উদ্বেগের কারণ কী?

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং তার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছেন। তার চার দিনের সফর নিয়ে অনেক আলোচনা চলছে। ভারতীয় গণমাধ্যম এবং দিল্লি প্রশাসন এ নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন, কারণ তাদের কাছে এটা এমন এক সংকেত, যা নিয়ে তারা চিন্তিত।

আনন্দবাজার পত্রিকার “উত্তপ্ত বাংলাদেশ” শিরোনামে জাতিসংঘের মহাসচিবের ঢাকা সফরের খবরটি ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাদের মতে, বাংলাদেশে সহিংসতা ও সংঘাত চলছে এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।তবে, বাস্তবতা বলছে ভিন্ন—দেশে নানা মত ও পথের বিরোধ থাকলেও কোনো অস্থিরতা বা উত্তাপের লক্ষণ নেই। বরং, বাংলাদেশে সরকার দেশ পুনর্গঠনের চেষ্টায় ব্যস্ত।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের যেমন আমেরিকা ও ব্রিটেনের মতো শক্তিশালী দেশ ভারতকে পাশে পায়, তেমনি জাতিসংঘও কিছু বিষয়ে ভারতের কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। ভারতের নানা উত্থাপিত উদ্বেগের মধ্যে প্রধান কারণ হলো, বাংলাদেশ থেকে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া। ভারত হয়তো ভেবেছিল যে কয়েকদিনের মধ্যেই হাসিনাকে তাদের দেশে পাঠানো হবে, কিন্তু তা হয়নি। বরং, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে নিজস্ব অবস্থান নিয়েছে, যা ভারতের পরিকল্পনার পথে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভারত সবসময় বাংলাদেশে সহিংসতা এবং নির্বাচনী সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। তারা বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেছে, যেমন মানবাধিকার ইস্যু তুলে ধরার মাধ্যমে ঢাকাকে আঘাত করা। তবে, জাতিসংঘের মানবাধিকার রিপোর্টের পর, যা হাসিনার অধীনে গণ আন্দোলন দমন ও হত্যাযজ্ঞের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে, তা ভারতীয় নীতির ওপর এক বড় ধাক্কা হিসেবে কাজ করেছে।

অতএব, ভারতের জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘের প্রকাশ্য সমর্থন এবং হাসিনাকে পুনর্বাসনের প্রচেষ্টা ভারতের পরিকল্পনাকে বাধাগ্রস্ত করেছে, যা তাদের জন্য বিপদ বাড়িয়েছে।