নোয়াখালী থেকে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসা এক তরুণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষে একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করেন। পেটের তাগিদে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির মেডিকেল প্রমোশনাল আইটেম সরবরাহকারী হিসেবেও কাজ করেছেন। একসময় ছাত্রজীবনের বন্ধু, পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি হলে তার পরামর্শে ঠিকাদারি ব্যবসায় নামেন। তার মাধ্যমেই পরিচয় হয় ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশিদের সঙ্গে, এবং সখ্য গড়ে ওঠে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণের সঙ্গে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
২০১৬ সালের পর ডিবির হারুন, পনিরুজ্জামান তরুণ ও সাদেক মিলে ভয়াবহ সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। আওয়ামী লীগের দলীয় বিবেচনায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ পেতে শুরু করেন। ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে কাজ না করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়া হারুনের বিপুল পরিমাণ সম্পদ সাদেকের কাছে গচ্ছিত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
এসএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সাদেক হলেন এই সিন্ডিকেটের প্রধান। সম্প্রতি তাকে অপহরণ করে ৬ কোটি টাকা আদায়ের চেষ্টা করার অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলা অনুসরণ করে দুদকেও অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ উদ্ধারের দাবি জানানো হয়েছে।
আবু সাদেক, ক্ষমতার পালাবদলে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সখ্য গড়ার চেষ্টা করছেন। ২ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার হন, তবে ৩ দিনের মধ্যে জামিনে মুক্তি পান। এই ঘটনায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চান।
তবে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার বিদায়ের পর সাদেককে সুরক্ষা দিচ্ছেন লক্ষ্মীপুরে একজন ডিআইজি, যার সাথে সাদেকের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। কারাগার থেকে বের হয়ে সাদেক নিজেকে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের লক্ষ্মীপুর জেলার উপদেষ্টা বলে পরিচয় দিচ্ছেন, যদিও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে তা ভুয়া দাবি করা হয়েছে।
দুদকেও জমা পড়া অভিযোগে বলা হয়েছে যে, ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশিদ ও সাদেকের সিন্ডিকেটের প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ সাদেকের কাছে গচ্ছিত রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার, সরকারি টেন্ডারের অর্থ আত্মসাৎ, এবং ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ব্যবসায়িক সুবিধা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
আবু সাদেক ও তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আরও বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ সম্পত্তি জমা করা, রাজনৈতিক নেতাদের কাছে সুবিধা আদায় করা এবং হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা।
এছাড়া, ডিবির হারুন ও সাদেকের বিরুদ্ধে চলমান মামলা এবং তাদের অপহরণের শিকার ব্যবসায়ী জুলফিকার আলীর অভিযোগ রয়েছে।