বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি টানা চারবার ক্ষমতায় ছিলেন, বর্তমানে ভারতীয় মাটিতে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি এখন পাসপোর্টহীন এবং রাষ্ট্রহীন অবস্থায় ভারতে বসবাস করছেন, যেখানে তার জন্য ফেরার সুযোগ এখনো অনিশ্চিত। হাসিনা বহুবার জানিয়েছিলেন যে, তিনি দেশ ছেড়ে পালাবেন না, কিন্তু গণঅভ্যুত্থান ৫ আগস্ট তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। হাসিনার জীবন নাটকের শেষ অধ্যায়টা ছিলো নির্মম ও পরিহাসপূর্ণ। গণভবনের টেবিলে তার জন্য মধ্যাহ্ন ভোজের বাড়া ভাত দিয়ে ক্ষুধা নিবারণ করেছে অভ্যুত্থানকারীদের কেউ কেউ। দেশে দেশে অত্যাচারী শাসকরা এভাবেই পালিয়েছে জনরোষ থেকে প্রাণ বাঁচাতে। পরবর্তীতে বিদেশের মাটিতে জীবনাবসান ঘটেছে তাদের অনেকের।
এমনই একটি পরিস্থিতি ছিল ইরানের ফ্যাসিস্ট শাসক শাহ রেজা পাহলভীর, যিনি ১৯৮০ সালে মিশরের কায়রোতে নির্বাসিত অবস্থায় মারা যান, এবং ইরানে তাকে সমাহিত করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তার মৃতদেহের সাথে একটি মাটি রাখা হয়েছিল, যা তার জন্মভূমি থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। হাসিনা অবশ্য এখনও জীবিত আছেন ভারতে, যদিও তিনি বারবার দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন।
বাংলাদেশ সরকার ১৪ সেপ্টেম্বর হাসিনা এবং তার পরিবার সদস্যদের পাসপোর্ট বাতিল করেছে, যার ফলে তিনি নতুন সমস্যায় পড়েছেন। ভারতে আশ্রয় চাইতে গিয়েও তিনি ব্যর্থ হন। তবে ভারত তার জন্য একটি ট্রাভেল ডকুমেন্ট ইস্যু করেছে ৯ অক্টোবর, যা তাকে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের সুযোগ প্রদান করবে। এটি বিশেষ পরিচয়পত্র হিসেবে কাজ করে, যা সাধারণত সেইসব ব্যক্তিরা পান, যাদের মাতৃভূমির পাসপোর্ট পাওয়া সম্ভব হয় না। ভারত আগে তিব্বতী শরণার্থীদের জন্যও এই ডকুমেন্ট প্রদান করেছে।
বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক আদালতে হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য রেড এলার্ট জারি করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। হাসিনার নির্দেশে যেখানে সাধারণ পাসপোর্ট মুহূর্তেই পরিণত হত অসাধারণ কূটনৈতিক ও দাপ্তরিক পাসপোর্টে। সবুজ জমিনের পাসপোর্ট ধারণ করতো লালবর্ণ। অতিশয় ক্ষমতাধর সেই হাসিনা এখন বহন করছেন ট্রাভেল ডকুমেন্ট নামে ভারতের দেয়া পীতবর্ণের একটি বুকলেট। নিজ দেশ, জাতীয়তা ও পরিচয় প্রত্যায়িত করে যে পাসপোার্ট হাসিনা তা থেকে বঞ্চিত। পাসপোর্ট ছাড়া স্বাভাবিকভাবে কোনো সুযোগ নেই বিদেশ ভ্রমণের।
ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে এমন ঘটনা ঘটেছে, যখন শাসকরা জীবনভর ক্ষমতায় থাকার পর, মৃত্যুর পরও তাদের নাম ইতিহাসে লেখা থেকে যায়। ফেরাউনদের মতো ফ্যাসিস্ট শাসকেরা ইতিহাসে চিরকাল অমর থাকেন, এমনকি তাদের মৃত্যু পরেও। হাসিনা, যিনি বাংলাদেশের জনগণের কাছে একজন নিষ্ঠুর শাসক হিসেবে পরিচিত, আজ ভারতের দেওয়া ট্রাভেল ডকুমেন্টে বন্দি।