বাংলাদেশের আলোচিত-সমালোচিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন বহু বছর ধরে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায়ই তিনি বিভিন্ন ইস্যুতে মুখ খুলে থাকেন। এবার হিন্দুস্তান টাইম বাংলা অনলাইনে তসলিমা নাসরিন যা লিখেছেন, তা হুবহু তুলে ধরা হলো:
অগস্ট মাস থেকেই বাংলাদেশের পরিস্থিতি অশান্ত। নিজের দেশে প্রবেশের অধিকার না থাকলেও তসলিমা নাসরিন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। সম্প্রতি তাঁর স্মৃতিচারণায় উঠে এসেছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর ও তাঁর পরিবারের ওপর পার আর্মির অত্যাচারের কথা।
তিনি লিখেছেন, “১৯৭১ সালে আমি নিতান্তই শিশু ছিলাম। ওই বয়সেই গোটা যুদ্ধের বোঝা কাঁধে নিয়ে চলতে হয়েছে। মানুষের লাশ দেখতে হয়েছে, গ্রামের পর গ্রাম আগুনে পুড়তে দেখেছি। শহরের ঘর-বাড়ি ছেড়ে অচেনা মানুষের বাড়িতে আশ্রয় নিতে গ্রাম থেকে গ্রামে গিয়েছি। কালো মোষের গাড়িতে ভয়ে কেঁপে কেঁপে রাত কাটিয়েছি। দিনের পর দিন ভালো বিছানা কিংবা ভরপেট খাবার পাইনি। এভাবে নয় মাস কাটিয়েছে। পাকিস্তানি আর্মি শহরের বাড়ি লুট করেছে, বাবাকে মেরে আধমরা অবস্থায় গেটের কাছে ফেলে রেখে গেছে। বিছানায় শোয়া অবস্থায় টর্চের আলোতে আর্মি আমাকে পর্যবেক্ষণ করেছিল। ওই শিশুবয়সে গভীর ঘুমের অভিনয় করে থাকতে হয়েছিল। বুক কাঁপছিল, মনে হচ্ছিল, এই বুঝি মেরে ফেলবে বা তুলে নিয়ে যাবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও আমাদের দুশ্চিন্তা শেষ হয়নি, কারণ মামা তখনও মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরেনি। গোলাগুলির মধ্যে, ভয়ের মধ্যে, লাশের মাঝে কাটানো শিশুর শৈশব থাকে না।”
তসলিমা নাসরিন তাঁর স্মৃতিচারণার মাধ্যমে বর্তমান পরিস্থিতির প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “৫৩ বছর পরও দেশের পরিস্থিতি এমন, যে দিনটি আমি কল্পনাও করিনি। এই দেশ একদিন স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের হাতে চলে যাবে। যারা পাকিস্তানি আর্মির সহযোগী ছিল, যারা বাড়ি লুঠ করার জন্য দেখিয়ে দিয়েছিল, মানুষ খুন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল, তরুণী ধর্ষণের জন্য পথ দেখিয়েছিল—কখনও কল্পনাও করিনি এই কুলাঙ্গারদের হাতে দেশ চলে যাবে। একদিন আমরা নিজেদের স্বাধীন দেশে পরাধীন হয়ে পড়ব। দেখব ক্ষুদে কুলাঙ্গাররা দল বেঁধে আমাদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলছে, আমাদের ভাষা কেড়ে নিচ্ছে, আমাদের পতাকা পায়ে পিষে ফেলছে।”
তসলিমা তাঁর পোস্টে আরও লিখেছেন, “দেশ আবার পরাধীন হয়ে গেছে। এই পরাধীনতার দায় আমি দেশের প্রতিটি শাসককে দিতে চাই। মুজিব, জিয়া, এরশাদ, খালেদা, হাসিনা—সকলেই রাজাকারদের ক্ষমা করেছেন, রাজনীতিতে এনেছেন বা মসনদে বসিয়েছেন। রাজাকারদের খাদ্য ইসলাম ছিল, এই ইসলামের চাষও করেছেন সকলে। ইসলামের নামে যে কুলাঙ্গার জন্মেছে, তা আজ আমাদের পরাধীনতার শেকলে বাঁধছে। কোনও শাসকই গণতন্ত্র চায়নি, সবাই গদিতে বসে আরাম করতে চেয়েছে। দেশের ভালো নিয়ে কেউ ভাবেনি, সবাই নিজের ভাল ভেবেছে। আজ তাই দেশ ধ্বংসের দিকে চলে গেছে।”
বাংলাদেশে অশান্ত পরিস্থিতি অগস্ট মাস থেকেই শুরু হয়। হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন পুলিশ গুলি চালায়, অনেক তরুণ প্রাণ হারায়। পরবর্তীতে সাধারণ জনগণও পথে নামেন, হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে আসেন। বর্তমানে বাংলাদেশের দায়িত্ব মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে, কিন্তু পরিস্থিতি তেমন পরিবর্তিত হয়নি।