Sunday , December 22 2024
Breaking News
Home / Countrywide / সব বলে দিয়েছেন আবেদ আলী, তালিকা হচ্ছে সেই বিসিএস ক্যাডারদের

সব বলে দিয়েছেন আবেদ আলী, তালিকা হচ্ছে সেই বিসিএস ক্যাডারদের

প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় দুর্নীতির কথা আদালতে স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী। স্বীকারোক্তিতে সব বলে দিয়েছেন তিনি। তার হাত ধরে অনেকেই বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন। সব ক্যাডারেই তার লোক আছে। আবেদ আলীর সহায়তায় যারা বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন তাদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে একটি সংগঠন।

পিএসসির প্রশ্নফাঁস শুরু হয় আগে থেকেই। গত ২৪তম ব্যাচে এর ব্যাপকতা বাড়ে। পরে ২৫তম ব্যাচে প্রশ্নফাঁস বিষয়টি ধরা পড়ে। ওই সময় পিএসসির মেম্বার ছিলেন মাহফুজুর রহমান। আর তার ড্রাইভার ছিলেন সৈয়দ আবেদ আলী। তার নেতৃত্বে একটি গ্রুপ থাকতো। তারা কাস্টমার যোগাড় করে দেওয়ার দায়িত্বে ছিল।

মাহফুজুর রহমানের ঢাকার গুলশান এলাকায় একটি ভবন এবং নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ‘‘ভিন্ন জগৎ’ নামে একটি রিসোর্ট ছিল। যারা টাকা দিত তাদের এই দুই জায়গায় রেখে পরীক্ষার একদিন আগে প্রশ্নপত্র দেওয়া হত। সেখানে পড়ালেখার ব্যবস্থা করা হতো। পরের দিন পরীক্ষায় তারাই সর্বোচ্চ মার্ক পেত। এভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করেন মাহফুজুর রহমান। ওই সময় দলীয় নেতাদের তালিকাও আসতো। সেই তালিকা অনুযায়ী তিনি টাকা নিতেন এবং নেতাদের ভাগ দিতেন। স্বাস্থ্যের আলোচিত বিতর্কিত মিঠু ঠিকাদারও প্রশ্নফাঁস এই চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার উত্থান মূলত এভাবেই। সৈয়দ আবেদ আলীর হাত ধরে যারা বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন, তাদের তালিকা প্রণয়নের কাজ মঙ্গলবার (০৯ জুলাই) থেকে শুরু করেছে একটি সংস্থা।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আবেদ আলী জানান, তিনি শত কোটি টাকার মালিক। ঢাকায় তার একটি ছয়তলা বাড়ি, তিনটি ফ্ল্যাট ও একটি গাড়ি রয়েছে। গ্রামের বাড়িতে ডুপ্লেক্স বিল্ডিং আছে।তবে আবেদ আলীর আরও সম্পদ রয়েছে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, চালক আবেদ আলী যদি শত কোটি টাকার মালিক হন তাহলে তিনি পিএসসির সদস্য মাহফুজুর রহমানসহ যেসব কর্মকর্তার গাড়ি চালিয়েছেন, তারা কত হাজার কোটি টাকার মালিক, তা আর বোঝার অপেক্ষা রাখে না। সে সময় মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। কিন্তু ততদিনে তিনি হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে যান। তার সঙ্গে ছিল বিএনপি-জামায়াত জোটের একটি রাজনৈতিক সিন্ডিকেট, যাদের কিছু শক্তিশালী নেতা এই টাকার ভাগ পেতেন। মাহফুজুর রহমান ছিলেন হাওয়া ভবন কানেকটেড। পিএসসিতে আলাদা একটি রুম ছিল। এখানে বসে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। দলীয় সংসদ সদস্য মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। এ কারণে তাকে ভয় পেতেন পিএসসির চেয়ারম্যানসহ অনেকে।

এদিকে মঙ্গলবার (০৯ জুলাই) আবেদ আলীর সঙ্গে প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত চতুর্থ শ্রেণির আরেক কর্মচারীকে ১০ কোটি টাকার চেকসহ গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এতে কোন কর্মকর্তারা জড়িত এবং কারা এই অর্থের ভাগ পায় তা প্রকাশ পাবে।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে শীর্ষ প্রশাসনের টনক নড়েছে। সব প্রশাসনে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের মাধ্যমে বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন। মাহফুজুর রহমানের সময় বিএনপি-জামায়াত-শিবিরসহ চার দলীয় জোটের দলীয় নেতাকর্মীরা বেশি ঢুকেছে বিসিএস ক্যাডারে। তবে দলের পরিচয় দিলেও টাকা দেওয়া লাগছে প্রত্যককে। তারা এক ব্যাচ থেকে শত শত কোটি টাকা আয় করেছে স্বীকারোক্তিতে সবই জানিয়েছেন আবেদ আলী। এখন প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে সরকারের প্রায় সব পর্যায়ের দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার পেছনে রয়েছে বিসিএস ক্যাডার। তারা দুর্নীতির মাধ্যমে চাকরিতে প্রবেশ করেছে।

নিয়োগের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে সোমবার (০৮ জুলাই) রাজধানীর শেওড়াপাড়ার ওয়াসা রোডের ফ্ল্যাট থেকে সৈয়দ আবেদ আলী ও তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান ওরফে সিয়ামসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী পদে ৩০টি বিসিএস ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১৭ জনের মধ্যে সাতজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তারা বলেন, চাকরিপ্রার্থীদের প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়নি। পরীক্ষার আগের রাতে ঢাকা ও এর আশেপাশে নিরাপদ স্থানে (গ্যাং সদস্যদের কথায় বুথ) রাখা হয়েছিল। রাজধানীর পল্টনের একটি গোডাউনে জড়ো হয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। সারারাত প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করার পর সকালে তাদের পাঠানো হয় পরীক্ষা দিতে।

সর্বশেষ রেলওয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষার ৪৬ জন প্রার্থীকে রাজধানীর পল্টনে একটি ওয়াটার ফিল্টার গুদামে রাখা হয়েছে। এই চক্রটি বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ২০০২ সালের ২৪তম বিসিএস পরীক্ষা থেকে শুরু করে সর্বশেষ ৪৫তম বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস করেছে। এর পাশাপাশি তারা পিএসসির আওতাধীন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নন-ক্যাডার পদের প্রশ্নপত্র ফাঁস করে।

About Nasimul Islam

Check Also

উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুর জন্য দায়ী তারই পূত্রবধূ, বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিমান ও পর্যটন এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ মারা গেছেন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *