শোবিজ অঙ্গনের চেনা মুখ জয়া আহসান। তিনি ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশেই বেশ জনপ্রিয়। তিনি তার কাজের মধ্যে দিয়ে অর্জন করেছেন ব্যপক সফলতা এবং সম্মাননা। এমনকি তিনি দুই দেশেই তার কাজের মধ্যে দিয়ে অর্জন করেছেন অনেক পুরষ্কার। তবে সম্প্রতি তিনি এই বিনোদন জগতের বাইরে এক নতুন সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ‘প্রাণবিক বন্ধু’ সম্মাননা। এবার এই সম্মাননা প্রসঙ্গে তার সঙ্গে বেশ কিছু কথোপকথন হয়েছে।
৪ অক্টোবর বিশ্ব প্রাণী দিবসেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। গত রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হলো ‘প্রাণবিক বন্ধু’ সম্মাননা। এই উপলক্ষে আবারও প্রাণীর প্রতি সদয় হওয়ার বার্তা দিলেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান।
প ফাউন্ডেশনের এই সম্মান আপনার কাছে ব্যতিক্রম কেন?
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আমাকে কিছু সম্মাননা দিয়েছে। সেসব তাদের ভালোবাসার দান। কিন্তু প ফাউন্ডেশন যে কারণে দিল, সেটা আমার হৃদয়ের গভীরের একটা বিষয়। তাদের দেওয়া ‘প্রাণবিক বন্ধু’ সম্মাননায় আমি বিহ্বল। প্রাণের জন্য যেটুকু করেছি, মন থেকে করেছি। মানুষ হিসেবে প্রাণ-প্রকৃতির প্রতি আমাদের দায় জন্মগত। আমি চেয়েছি, মানুষ এ ব্যাপারে আরও সচেতন হোক।
ফেসবুকে দেখলাম মাকে নিয়ে লন্ডনে বেড়াতে গিয়েছিলেন।
ভাইয়ের কাছে গিয়েছিলাম। তাঁর সঙ্গে করোনার বহু আগে দেখা হয়েছিল। এবার মাকে নিয়ে পুরো পরিবারের সঙ্গে একটা কোয়ালিটি সময় পার করলাম। মায়েরও অনেক ভালো লেগেছে।
ফিরলেন কবে?
মাত্র দুই দিন আগে ফিরলাম। প ফাউন্ডেশনের ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্যই তাড়াহুড়ো করে ফেরা। ভ্রমণক্লান্তি এখনো কাটেনি। এই অনুষ্ঠান আমার জন্য জরুরি ছিল বলে চলে আসা। আমি সত্যিই এ কাজে মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে চাই। যাঁরা এসব নিয়ে কাজ করছেন, তাঁদের অর্থ, সময় দিয়ে বা নিজে খেটে সাহায্য করতে চাই। ওখানে গিয়ে দেখলাম, বহু প্রাণীপ্রেমী উপস্থিত হয়েছেন। চারপাশে কত নৃ/শং/সতা-নেতিবাচকতা দেখি, সেখানে গিয়ে দেখলাম ইতিবাচকতা। আমাকেসহ ১০ জনকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা প্রত্যেকে যাঁর যাঁর জায়গা থেকে প্রাণীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এ রকম যাঁরা আছেন, তাঁদের অনেকেরই অবস্থা আমাদের মতো নয়।
ক/রো/না/র পর প্রাণ-প্রকৃতির ব্যাপারে মানুষ কি কিছুটা সচেতন হয়েছে?
হয়েছে। কিন্তু আমাদের আরও সচেতন হওয়া উচিত। আমরা ধীরে ধীরে পৃথিবীকে যে জায়গায় নিয়ে গিয়েছি, সেটা অনেকটা মৃ/ত্যু/ঘণ্টার মতো। যদিও আমরা সেটা শুনতে পাচ্ছি না। সাধারণ মানুষ, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা—সবাই একত্রে সচেতনভাবে কাজ করলেই প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা পাবে। আমরা কেন ভুলে যাই যে শুধু মানুষ নিয়ে সমাজ নয়। প্রাণ-প্রকৃতি, জীবজন্তুও সমাজের অংশ। তাদের অবজ্ঞা করে আমরা বেঁচে থাকতে পারব না। ইচ্ছা হলেই গাছ কেটে রেস্টুরেন্ট করা যাবে না, শহর সুন্দর করার জন্য কুকুর-বিড়ালকে শহর থেকে বের করে দেওয়া যাবে না। সমাজ ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। পৃথিবী শুধু মানুষের জন্য নয়। এখানে প্রতিটি প্রাণীর অধিকার আছে। প ফাউন্ডেশনের মতো আরও অনেকেই প্রাণীদের নিয়ে কাজ করে। এখনকার তরুণেরা এ বিষয়ে অনেক সচেতন।
পশ্চিমবঙ্গে শ্রীলেখা মিত্রকে প্রায়ই কুকুর নিয়ে বিপত্তিতে পড়তে দেখা যায়। আপনার কখনো এ রকম হয়েছে?
কলকাতায় তিনি ঝামেলায় পড়েন, বাংলাদেশের অনেক প্রাণীপ্রেমীও ঝামেলায় পড়েন। আমার ফ্ল্যাটে কুকুর আছে বলে আমাকেও বহুবার হু/ম/কি দেওয়া হয়েছিল। এ–সং/ক্রান্ত কোনো আইন আমাদের এখানে নেই। আইন করা দরকার। যাঁরা পশুপ্রেমী, তাঁরা ছাড়া কেউ বুঝতে পারবে না যে এটা কী রকম খারাপ লাগা।
আপনি লন্ডনে থাকাকালে হাসান আজিজুল হক চলে গেলেন।
আমি যখন ঋত্বিক কুমার ঘটক অ্যাওয়ার্ড পেলাম, স্যারের সঙ্গে তখনই প্রথম দেখা। খাঁচার শুটিং শেষে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। খাঁচা দেখে আমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। আমি আর পরিচালক আকরাম খান তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। ছবিটা দেখে খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। বেড়াতে গেলে আমাকে তাঁর বই উপহার দিলেন, তাঁর বাড়িতে খাওয়াদাওয়া করলাম। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খুব কোয়ালিটি সময় কাটালাম। এ রকম অদ্ভুত মানুষের সঙ্গ পেলাম, এটা আমার জন্য অনেক বড় ব্যাপার। এরপরও তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। প্রায়ই আমার ইচ্ছা হতো তাঁর সঙ্গে গিয়ে দেখা করে আসি। তিনি আমার ভীষণ প্রিয় সাহিত্যিক। তাঁর আরেকটা কাজ করেছিলাম, ‘বিধবাদের কথা’ নিয়ে নকশিকাঁথার জমিন। তিনি বারবার খোঁজ নিয়েছেন, জয়া কেমন করছে। আমাকে অসম্ভব স্নেহ করতেন তিনি।
শুটিং কবে শুরু করছেন?
শিগগির একটা বিজ্ঞাপনচিত্রের শুটিং আছে। সেটা শেষ হলেই শুরু হবে সিনেমার শুটিং। এক্ষুনি দিনক্ষণ বলতে পারছি না। কিন্তু শিগগির শুরু করব। আমার অনেকগুলো কাজ এখনো মুক্তি পায়নি। সেগুলো রিলিজ হলেই অন্য কাজ। আমার মনে হয়, ফেব্রুয়ারিতে কলকাতা রিলিজ শুরু করবে।
‘রেহানা’ দেখবেন কবে?
মুখিয়ে আছি দেখার জন্য। শরীর একটু ভালো লাগলেই বের হব, উইশ লিস্টে আছে।
জয়া আহসান ভারত-বাংলাদেশের দুই দেশের চলচ্চিত্রে কাজ করে থাকেন। বর্তমান সময়ে তিনি নতুন সিনেমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তার অভিনীত সিনেমা গুলো দর্শক মাঝে বেশ প্রসংসিত হয়েছে। তিনি তরা কাজের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের শোবিজ অঙ্গনের শীর্ষ স্থান দখল করতে সসক্ষম হয়েছেন।