বেশ কিছু দিন ধরে সমগ্র দেশ জুড়ে আলোচনা-সমালোচনার শীর্ষে রয়েছে অনলাইন ভিত্তিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি। তাদের বিরুদ্ধে অর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটির এমডি এবং মহাব্যবস্থাপক গ্রেফতার হয়ে কারাগারে বন্ধি রয়েছেন। এবং উচ্চ আদালত প্রতিষ্ঠানটি অর্ন্তবর্তীকালীন পরিচালনার জন্য একটি বোর্ড গঠন করে দিয়েছেন। এই বোর্ড ইতিমধ্যে তাদের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে।
আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির চারটি ওয়্যারহাউস পরিদর্শন শেষে সিলগালা করে দিয়েছে হাইকোর্ট কর্তৃক গঠিত পরিচালনা বোর্ড। পরিদর্শন দলের নেতৃত্ব দেন আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি ও গঠিত পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। সোমবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে সাভারের আমিনবাজার এলাকার পিংক ফুড ইন্ড্রাস্টিয়াল পার্ক ও বলিয়াপুর এলাকায় অবস্থিত ইভ্যালির চারটি ওয়্যারহাউস সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে তা সিলগালা করে দেওয়া হয়। এদিন ইভ্যালির স্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখতে এ কমিটি সেখানে যায়। এসময় পরিচালনা বোর্ডের সদস্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব কবীর মিলন, সাবেক সচিব মোহাম্মদ রেজাউল আহসান, ফখরুদ্দিন আহম্মেদ, ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ উপস্থিত ছিলেন। পরিদর্শনকালে ওয়্যারহাউসটিতে বেশ কিছু টেলিভিশন, কোমল পানীয়সহ ইলেকট্রনিক্স মালামাল দেখতে পান তারা।
শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের তৃতীয় বোর্ড মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয় ইভ্যালির কি পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। আমরা এখন সরেজমিনে ইনভেন্টরি করবো এরপর অডিট হবে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘হাইকোর্ট আমাদেরকে দুটি অপশন দিয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া। আর অপরটি হচ্ছে অডিটের মাধ্যমে সম্পদের পরিমাণ নির্ণয় করে গ্রাহকের পাওনা ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা ইভ্যালির ওয়্যারহাউসগুলো পরিদর্শন এবং অডিটের মাধ্যমে সকল সম্পদ নিয়ন্ত্রণে আনবো।’ এ সময় বোর্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব কবীর মিলন বলেন, ‘আমরা আসলে দ্বিতীয় অপশনটি এই মুহূর্তে চিন্তা করছি না, আমরা আশাবাদী ব্যবসাটি চালিয়ে যাওয়ার। যদি পারি সেটাই মঙ্গলজনক হবে। তবে সেটি এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। প্রথমে আমরা প্রতিষ্ঠানটির সম্পূর্ণ আর্থিক চিত্রটা তুলে আনার চেষ্টা করবো। আমরা আশ্বস্ত করতে পারি এখানে চুল পরিমাণ ব্যত্যয় থাকবে না। প্রথমেই আমরা প্রতিষ্ঠানটির সার্ভার আপ করার ব্যবস্থা করবো। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আর্থিক চিত্র তুলে আনবো। এখন আমরা তথ্যগুলো সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি, এরপর অডিট হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভ্যাট, ইনকাম ট্যাক্সসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে হাইকোর্ট অনুমোদিত অডিট ফার্মকে দেবো। অডিট ফার্ম তাদের অডিট করবে এবং অডিটের উপর ভিত্তি করেই আমরা সামনে অগ্রসর হবো। আমাদের মূল লক্ষ্য এখান থেকে সঠিক এবং নির্ভুল তথ্য তুলে এনে একটি সঠিক প্রতিবেদন তৈরি করা। ইভ্যালির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন বিক্ষিপ্তভাবে রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি তাদেরকে একত্রে এনে তাদের কাছ থেকেও তথ্য সংগ্রহ করতে। এছাড়াও ইভ্যালির প্রতারিত গ্রাহকদেরকে কাছে থাকা তথ্যগুলো সংরক্ষণ করে রাখার জন্য অনুরোধ করছি।’
ইভ্যালি বাদেও দেশে আরও বেশ কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ইতিমধ্যে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান নানা কৌশলে গ্রাহকের বিপুল পরিমানের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। তবে এই সকল অনিয়মকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির সম্মুখীন করার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।