কিশোরগঞ্জ জেলার ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে একটি নির্দিষ্ট সময় পরে খোলা হয় দানবাক্স। এবার দানবাক্স খোলার পর পাওয়া গেল বস্তা বস্তা টাকা এবং বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ-রূপার অলংকারসহ বিদেশি মূদ্রা। দানবাক্স থেকে প্রাপ্ত অর্থ গোনার জন্য সেখানে এসেছেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা, তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন বরাবরের মতো শত শত মানুষ। আজ (শনিবার) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গননা শুরু করেন তারা। ধারনা করা হচ্ছে, বিকেলের দিকে গণনা শেষ হতে পারে।
জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ শহরের নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক এ মসজিদে নতুন তিনটিসহ মোট আটটি লোহার দানবাক্স রয়েছে। পরপর তিন মাস অন্তর এই বাক্সগুলো খোলার রেওয়াজ। কিন্তু এবার বিশ্বব্যাপী চলমান পরিস্থিতির কারনে ৪ মাস ১৭ দিন পর আজ (শনিবার) সকাল সাড়ে ৮টায় এসব দানবাক্স খোলা হয়েছে। খুলেই সবার চোখের পলক বন্ধ হয়ে যায়।
প্রতিবারের মতো এবারও এসব দানবাক্স খোলার পর মিলেছে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মুদ্রা এবং বিপুল পরিমাণ সোনা-রূপার অলংকার।
এর আগে চলতি বছরের ১৯ জুন এসব দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় ২ কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৯ টাকা। এ ছাড়া বিদেশি মুদ্রাসহ স্বর্ণ ও রূপার অলঙ্কার। মসজিদটির তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এসব অর্থ এ মসজিদসহ জেলার সব মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়।
টাকা গোনার কাজে জেলা প্রশাসকের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা মাজিস্ট্রেট (এডিএম), নেজারত ডেপুটি কালেক্টর, নির্বাহী মাজিস্ট্রেট , রূপালী ব্যাংকের এজিএম ও অন্যান্য কর্মকর্তা, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়ে থাকেন।
মসজিদের খতিব মাওলানা খলিলুর রহমান জানান, এলাকাবাসী ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজনের মধ্যে এমন ধারণা ও বিশ্বাস রয়েছে যে, এখানে মানত করলে মনের বাসনা পূর্ণ হয়। আর ধ’র্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এখানে দান ও মানত করে থাকেন।
সূত্রমতে, একসময় এক আধ্যাত্মিক পা’গল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝপথে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে। সব ধর্মের লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই সাধকের আস্তানায়। ওই পা’গল সাধকের দেহাবসানের পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী। কিন্তু; ওই সাধকের দেহাবসানের পর থেকে আশ্চ’র্যজ’নকভাবে এলাকা এমনকি দেশের দূর-দূরান্তের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে।
এখানে মানত কিংবা দানখয়রাত করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন ধ’র্ম-বর্ণের নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসেন ওই মসজিদে। তারা নগদ টাকা-পয়সা, স্বর্ণ ও রূপার অলঙ্কারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি দান করেন। বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার এ মসজিদে মানত নিয়ে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের ঢল নামে।
আগত মুসল্লিদের বেশির ভাগই এই মসজিদে জুমার নামাজ পড়েন। আর এই ধরনের ইতিহাস ২ হাজার ৫০০ বছরেরও অনেক বেশি আগের বলে জানা গেছে। জেলা প্রশাসকের (ডিসি) নেতৃত্বে প্রশাসন ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে ২৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করার মাধ্যমে মসজিদের ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করা হয়। যে বিপুল পরিমাণ অনুদান পাওয়া যায় সেটা এই মসজিদ এবং মসজিদের পাশে অবস্থিত মাদ্রাসা ও এতিমখানার ব্যায় নির্বাহসহ নানা ধরনের সমাজকল্যাণমূলক কাজে খরচ করা হয়।