Saturday , November 23 2024
Breaking News
Home / Countrywide / গত এক মাসে বৃদ্ধি পাওয়া ৯ খাদ্যপণ্যের দামের পরিমান

গত এক মাসে বৃদ্ধি পাওয়া ৯ খাদ্যপণ্যের দামের পরিমান

সম্প্রতি নিত্যেপ্রয়োজনীয় পন্যের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বেশ কিছু নিত্যেপ্রয়োজনীয় পন্যের দাম লাগামহীন ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে সমগ্র দেশ জুড়ে। এতে করে বেশি বিপাকে পড়েছে দেশের খেঁটে খাওয়া মানুষ গুলো। গত কয়েকমাস ধরে বেশ কিছু পন্যের দাম কয়েক দাফে বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার প্রকাশ্যে এলো গত এক মাসে বৃদ্ধি পাওয়া ৯ খাদ্যপণ্যের দামের পরিমান।

জরুরি নিত্যপণ্য হিসেবে পরিচিত চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা-ময়দা, পিঁয়াজ ও আলুর দাম বাড়ছে হু হু করে। মাছ, গরু বা খাসির মাংসের বদলে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির মাংস খেত গরিব মানুষ। সেই ডিম ও ব্রয়লার মুরগিও এখন তাদের নাগালের বাইরে। ফার্মের মুরগির ডিমের হালি ৪০ টাকা। ১ কেজি ব্রয়লার মুরগি প্রায় ২০০ টাকা, যা এক মাস আগেও ছিল ১৪০ টাকা। আর ছয় মাস আগে ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা। মাছ, মাংস, ডিম নিয়মিত খেতে না পারলে ডাল, আলুভর্তা দিয়ে ভাত খেয়ে জীবন ধারণ করত দিনমজুর। এখন সেই আলুভর্তার দামও বাড়তি। শুধু আলুর দামই বাড়েনি। আলুভর্তায় যে তেল, পিঁয়াজ, মরিচের দরকার সেই তিনটি পণ্যের দামও এখন আকাশচুম্বী। ফলে স্বচ্ছন্দে আলুভর্তা-ভাতও খেতে পারছে না গরিব মানুষ। তাই নিত্যদিনের বাজার খরচ মেটাতে দিশাহারা নিম্নমধ্যবিত্তরা। আয়-ব্যয়ের তাল মেলাতে পারছে না কিছুতেই। জীবন চালাতে ধার-কর্য করছে প্রতিনিয়ত। ডাল-ভাত খেতে নাভিশ্বাস উঠেছে দিনমজুরদের। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত এক মাসে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পিঁয়াজ ও ভোজ্য তেলের দাম। এক মাসে পিঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩৯ শতাংশ। গতকাল দেশি পিঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকা কেজি। আর আমদানি করা ভারতীয় পিঁয়াজ ৫০ টাকা। এই সময়ে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে ৯ শতাংশ। আর এক বছরের ব্যবধানে পণ্য দুটির দাম বেড়েছে ৫৩ শতাংশ পর্যন্ত। ১ লিটার সয়াবিন তেলের দাম এখন ১৫০-১৫৫ টাকা, যা এক মাস আগেও ছিল ১৩০-১৩৫ টাকা। আর এক বছর আগে ছিল ৯০-৯২ টাকা। ফলে বছরের ব্যবধানে ভোজ্য তেলের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এ ছাড়া জরুরি নিত্যপণ্য হিসেবে পরিচিত চালের দাম এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১১ শতাংশ। মোটা চালও এখন ৫০ টাকা কেজি। খোলা ও প্যাকেটজাত উভয় ধরনের আটা ও ময়দার দাম বেড়েছে ২ থেকে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত। প্যাকেটজাত আটার দাম এক মাসে বেড়েছে কেজিতে প্রায় ৭ টাকা আর খোলা ময়দা ১৬ টাকা পর্যন্ত। টিসিবির হিসাবে গরিবের আমিষ হিসেবে পরিচিত এক ডজন ডিম প্রায় তিন মাস ধরেই ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৯০-৯৫ টাকা। আর ব্রয়লার মুরগির বাজারে তো রীতিমতো আগুন লেগেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে দাম। গতকাল প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে, যা এক মাস আগে ছিল ১৪০ টাকা। আর ছয় মাস আগে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। সংস্থাটির ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, প্রতি কেজি আলু গতকাল বিক্রি হয়েছে ২৫-২৭ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ১৮-২০ টাকা। শরীরে ক্লান্তি কাটাতে এক কাপ চা খাওয়ার খরচও বেড়েছে। কেননা চায়ের অনিবার্য উপাদান চিনির বাজার চড়া। সরকারের তরফ থেকে প্রতি কেজি লাল চিনির দাম ৭৫ টাকা বেঁধে দেওয়া হলেও ৮০ টাকার নিচে চিনি নেই বাজারে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে লাল চিনির কেজি ৮৫ টাকা। দুই মাস আগে এ চিনির দাম ছিল ৬৫-৭০ টাকা। এদিকে ভর্তা দিয়ে ডাল-ভাতও স্বচ্ছন্দে খাওয়ার সুযোগ হারিয়েছে মানুষ। কেননা আমদানি করা মোটা দানার ডালের প্রতি কেজির দাম ১০০ টাকা ছুঁইছুঁই, যা তিন মাস আগে ছিল ৭০ টাকা। এমনকি করোনা মহামরীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার সময় এক বছর আগেও এ ডালের দাম ছিল ৬৫ টাকা। ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ও পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারীর ফলে অসংখ্য মানুষ কাজ হারিয়েছে। দেশের বেশির ভাগ মানুষেরই আয় কমেছে। করোনার প্রথম দিকের সময়গুলোতে মানুষ ধারকর্জ করেছে বা সঞ্চয় ভেঙে জীবন চালিয়েছে। এখন কিন্তু সে অবস্থা নেই। ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে খাবার কম খাচ্ছে। অনেকেই আবার কুলাতে না পেরে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনছে। অর্থাৎ মাছ-মাংসের পরিবর্তে ভাত, আলু কিংবা ডালের ওপর নির্ভর করছে। তবে এসবের পরিমাণও ঠিক রাখতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের সংকট কাটানো কঠিন হবে।’ তবে এখানে সরকারের আরও অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। বাজারদর পর্যালোচনায় দেখা গেছে, কয়েক মাস ধরে টানা পণ্যমূল্য বাড়ছে তো বাড়ছেই। মোটা চালও এখন ৫০ টাকা কেজি। খুচরা বিক্রেতারা দুষছেন পাইকারদের। আর পাইকাররা ডিলারদের। মাছ আর কাঁচাবাজারের আড়তেও ঊর্ধমুখিতা। খুচরা বাজারে ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। ছোট সাইজের একটি লাউ কিনতে হয় ৫০-৬০ টাকায়। সাইজ বড় হলে ৮০ টাকা। আলুর কেজিও ২৭ টাকা। ডাবল সেঞ্চুরি হাকিয়েছে কাঁচা মরিচ। ১ কেজি শসা ৮০ টাকা। মহামারী করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে টানা লকডাউনে কাজ হারিয়েছে অসংখ্য মানুষ। বেশির ভাগ কর্মজীবীর আয় কমেছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রায় সব মানুষেরই নাভিশ্বাস উঠেছে জীবন চালাতে। সংসার চালাতে না পেরে অনেকেই ঢাকা ছেড়েছে, ছাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দেশে খাদ্যপণ্যের শৃঙ্খলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। এর প্রভাবে সামাজিক অস্থিরতা পর্যন্ত তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

অবশ্যে দেশের নিত্যেপ্রয়োজনীয় পন্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে আপ্রান ভাবে কাজ করছে সরকার। এমনকি বিশ্বের বেশ কিছু দেশ থেকে নানা ধরনের প্রয়োজনীয় পন্যে আমদানি করছে। এছাড়াও ব্যবসায়ীদের পন্যে আমদানি করার ক্ষেত্রে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছে সরকার। এবং ভর্তুকি দিয়ে টিসিবির মাধ্যমে বেশ কিছু পন্য বিক্রী করছে সরকার।

About

Check Also

সংস্কারের নামে ভয়াবহ দুর্নীতি-লুটপাট

সংস্কার ও উন্নয়নের নামে কয়েকগুণ বেশি ব্যয় দেখিয়ে হরিলুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *