দিল্লিতে যে বাড়িতে বসবাস করছেন হাসিনা, বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন (সিআরআই), যা আওয়ামী লীগের “গুজব তৈরির কারখানা” নামে পরিচিত, এখন পরিচালিত হচ্ছে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের হাতে। নয়াদিল্লির অভিজাত লুটিয়েন্স বাংলো এলাকার কাছে একটি দোতলা ভবন থেকে তিনি এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। একই এলাকায় একটি বাড়িতে বসবাস করছেন তার মা, পতিত স্বৈরাচার এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

অন্তর্বর্তী সরকার, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিকে লক্ষ্য করে সাম্প্রতিক সাইবার হামলার পেছনে রয়েছে সিআরআই। জুলাই গণ-অভ্যুত্থনকে সমর্থন করা শীর্ষ রাজনীতিবিদ, উপদেষ্টা, সামরিক ও বেসামরিক আমলারাও এসব হামলা থেকে রেহাই পাননি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি ভিডিও, বেনামি ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল ব্যবহার করে সিআরআই মূলত এক ধরনের সাইবার যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এক কথায়, এই প্রতিষ্ঠানটি এখন অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা মেশিন হিসেবে কাজ করছে, যার মূল উদ্দেশ্য জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে দুর্বল করা। আর তা এখন পরিচালিত হচ্ছে ভারত থেকে, একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

সূত্রমতে, সিআরআই বর্তমানে তিনটি লক্ষ্য সামনে রেখে কাজ করছে:

১. অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করা।
২. যেকোনো মূল্যে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ভণ্ডুল করা।
৩. বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি এবং গণ-অভ্যুত্থনপন্থী সব শক্তির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করা।

এর চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে শেখ হাসিনাকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা। এজন্য সিআরআই দেশ-বিদেশে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করছে।

২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সিআরআই প্রতিষ্ঠা করে। আনুষ্ঠানিকভাবে এর অফিস ছিল ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে। তবে বাস্তবে এটি বিভিন্ন গোপন জায়গা থেকে পরিচালিত হতো।

গত বছরের ৫ আগস্ট নজিরবিহীন ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বহু আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যও দেশ ছেড়ে চলে যান। ফলে সিআরআইয়ের কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ে।

তবে গত তিন মাসে নতুন নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আগে সিআরআইয়ের মূল দায়িত্বে ছিলেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, যিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় বসবাস করছেন। এছাড়া ট্রাস্টি বোর্ডে ছিলেন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ শেখ পরিবারের আরও সদস্য।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ায় আইনি কারণে জয় আর সিআরআই পরিচালনা করতে পারেন না। তাই শেখ হাসিনার নির্দেশে তার পরিবর্তে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে। এখন দিল্লির কার্যালয় থেকে তিনি নিয়মিত অফিস করছেন এবং বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে সিআরআইয়ের কার্যক্রম সমন্বয় করছেন।

গত ১১ জুলাই দুর্নীতি, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সায়মা ওয়াজেদকে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের (এসইএআরও) পরিচালক পদ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠায়। দুদক তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে। তখন থেকেই তিনি ভারতে অবস্থান করছিলেন।

যদিও সিআরআইকে গবেষণা ও নীতি প্রণয়ন প্রতিষ্ঠানের পরিচয়ে তুলে ধরা হয়, বাস্তবে এটি ভিন্ন ধরনের কাজ করছে। শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে তথাকথিত “আওয়ামী কালচারাল ফ্যাসিস্ট” সংগঠিত করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এজন্য জনপ্রিয় টকশো উপস্থাপক, সিনিয়র সাংবাদিক, ইউটিউবার, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও বিভিন্ন শ্রেণির বুদ্ধিজীবীদের অর্থায়ন করা হচ্ছে। দিল্লির অফিস থেকেই এসব কালচারাল ফ্যাসিস্টদের গোপনে নানা অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হচ্ছে, যার উদ্দেশ্য জনগণকে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা, গণ-অভ্যুত্থনপন্থী শক্তির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে লুকিয়ে থাকা আওয়ামী সাংস্কৃতিক শক্তিকে একত্র করা, এবং বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিকে চরম সংঘাতে ঠেলে দেওয়া। শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাঙ্গনে বড় ধরনের সংঘাত-সহিংসতা তৈরি করে দেশকে অস্থিতিশীল করা এবং ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগের শক্তিকে প্রকাশ্যে আনা।

চূড়ান্ত পরিকল্পনায় অন্তত ২০ লাখ কর্মী-সমর্থক জড়ো করে “ঢাকা অ্যাটাক” বা “যমুনা ঘেরাও” ধরনের কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

এ কাজে শতাধিক ফেসবুক আইডি, পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল প্রোপাগান্ডা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রজন্ম ৭১, মঞ্চ ৭১, ব্রিগেড ৭১, নিউক্লিয়াস ৭১, মুক্তিবাহিনী ৭১, হিস্টোরি অব আগস্ট, নয়া সংগ্রাম ২৫, প্রত্যাবর্তন-০২, বঙ্গবন্ধু-৭১ এবং জয়বাংলা ব্রিগেড।

Scroll to Top