চারবার ফোন দেওয়ার পরও মোদির ফোন না ধরায় চরম অপমানিত ট্রাম্প, গোপন কারণ ফাঁস করল জার্মান পত্রিকা

সম্প্রতি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে কমপক্ষে চারবার ফোনে কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ভারতীয় এ নেতা তার ফোন ধরেননি। জার্মান সংবাদপত্র ফ্রাঙ্কফুর্টার অলগেমেইন এই খবরটি জানিয়েছে। সংবাদপত্রটি বলেছে, মোদি গভীর ক্রোধের পাশাপাশি তাঁর ‘সতর্কতা’ হিসেবে ট্রাম্পের কল এড়িয়ে গেছেন। খবর ইন্ডিয়া টুডের।

ট্রাম্প এমন এক সময়ে মোদীকে ফোন করেছিলেন যখন তার প্রশাসন ভারতের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। ব্রাজিল ছাড়া ভারতের উপর মার্কিন শুল্ক যে কোনও দেশের জন্য সর্বোচ্চ।

বার্লিন-ভিত্তিক গ্লোবাল পাবলিক পলিসি ইনস্টিটিউটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং পরিচালক থর্স্টেন বেনার এক্স-এর উপর সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘ফ্রাঙ্কফুর্টার অ্যালজেমেইন দাবি করেছে, ট্রাম্প সম্প্রতি মোদিকে চারবার ফোন করেছিলেন। কিন্তু মোদি ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।’

ফ্রাঙ্কফুর্টার অলগেমেইন বলেছেন যে মোদির মধ্যে এমন কিছু লক্ষণ দেখা গিয়েছিল, যাতে বোঝা যায়, তিনি অপমানিত বোধ করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প সাধারণত অন্য দেশগুলোর মার্কিন বাজারের ওপর নির্ভরতাকে কাজে লাগিয়ে সুবিধা আদায় করেন। কিন্তু মোদি তার প্রথম মেয়াদে ভারতের অর্থনৈতিক স্বার্থে কোনো আপস না করে ট্রাম্পের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রেখে ‘এর প্রতিরোধ’ করেছিলেন।

প্রতিবেদনে মোদির সতর্কতার কারণও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এর আগে, তার প্রথম মেয়াদে, ট্রাম্প ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং রাষ্ট্রপতি টো ল্যামের সাথে কেবল একটি ফোন কলের মাধ্যমে একটি বাণিজ্য চুক্তি পুনর্গঠন করেছিলেন, যা উভয় দেশের প্রতিনিধিদের দ্বারা কঠোর পরিশ্রমের সাথে সাজানো হয়েছিল। কিন্তু কোনও চুক্তি না হলেও, ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা করেছিলেন যে একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। ফ্রাঙ্কফুর্টার অ্যালজেমেইনের মতে, মোদি একই ফাঁদে পড়তে চান না।

নিউইয়র্কের দ্য নিউ স্কুলের ইন্ডিয়া-চায়না ইনস্টিটিউটের সহপরিচালক মার্ক ফ্রেজিয়ার বলেন, মার্কিন কৌশল কাজ করছে না। যুক্তরাষ্ট্র চীনের মোকাবিলায় ভারতকে একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা দেবে—এমন ইন্দো-প্যাসিফিক জোটের ধারণা ভেঙে পড়ছে। ফ্রেজিয়ারের মতে, চীনকে মোকাবিলায় ভারতের পক্ষ নেওয়ার কোনো উদ্দেশ্য যুক্তরাষ্ট্রের কখনোই ছিল না।

ফ্রাঙ্কফুর্টার অ্যালজেমেইন আরও জানিয়েছে যে নয়াদিল্লি এবং বেইজিংয়ের মধ্যে পুরানো উত্তেজনা হ্রাস পাচ্ছে। গত বছর মোদি চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সাথে দেখা করার পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নতির দিকে এগিয়ে চলেছে।

চলতি সপ্তাহে মোদি তিয়ানজিনে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন। বিষয়টি একটি প্রশ্ন সামনে এনেছে যে—ট্রাম্প ভারতকে চীনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন কি না। ফ্রেজিয়ার বলেন, ভারতের চীনকে যতটা প্রয়োজন, চীনের ভারতকে ততটা প্রয়োজন নেই। ভারতের এ পরিবর্তন কৌশলগত, শুধু মার্কিন শুল্কের প্রতিক্রিয়া নয়। যুক্তরাষ্ট্র পিছু হটার কারণে বিশ্বব্যাপী প্রভাব এবং শিল্প প্রবৃদ্ধিতে ভারত ও চীনের স্বার্থ অভিন্ন। চীনের জন্য তার বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক অবস্থানকে বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভারত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Scroll to Top