ইসির ওয়েবসাইটে ফের ফিরল আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ প্রতীক, বিতর্ক তুঙ্গে

নিবন্ধন স্থগিত থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওয়েবসাইটে আবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নামের পাশে প্রতীক হিসেবে নৌকা ফিরে এসেছে, যা নতুন করে প্রশ্ন ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সকাল থেকে ইসির ওয়েবসাইটে দেখা যায়, “আওয়ামী লীগ (নিবন্ধন স্থগিত)” নামের পাশে পুরোনো দলীয় প্রতীক নৌকা সংযুক্ত রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইসির অতিরিক্ত সচিব আলী নেওয়াজ বলেন, “গতকাল (বুধবার) সচিব স্যারের সংবাদ সম্মেলনের পর আমি আর কিছু জানি না। এখন ওয়েবসাইটে কী আছে বা কী সরানো হয়েছে, সেটা আমার জানা নেই।”

এর আগে বুধবার (১৬ জুলাই) সকালে ইসির ওয়েবসাইট থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। এ বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের সিস্টেম ম্যানেজার মো. রফিকুল হক জানিয়েছিলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই প্রতীকটি সরানো হয়।”

তবে ইসি থেকে পরে জানানো হয়, প্রতীক নিয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কমিশনের আগের অবস্থানই বহাল রয়েছে। অর্থাৎ, দল হিসেবে আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত তফসিল থেকে ‘নৌকা’ প্রতীক বাতিল করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু নিবন্ধন স্থগিত বা বাতিল হলে ওয়েবসাইটে প্রতীক সরিয়ে ফেলা যেতে পারে, আর সেটাই হয়েছিল বলে জানানো হয়।

এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের অবস্থান ঘিরে দ্বন্দ্ব এবং অস্পষ্টতা আরও ঘনীভূত হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে—একদিন সরিয়ে আবার কীভাবে প্রতীকটি যুক্ত হলো, আর কে বা কারা এর পেছনে ভূমিকা রেখেছেন?

এদিকে মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) রাতেই স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এক ফেসবুক পোস্টে ইসির সমালোচনা করে প্রশ্ন তোলেন, “অভিশপ্ত ‘নৌকা’ মার্কাটাকে আপনারা কোন বিবেচনায় আবার শিডিউলভুক্ত করতে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠালেন? সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আপনারা এই গণঅভ্যুত্থানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেন। কাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে এবং কাদের দিতে এই মার্কা রেখে দিলেন?”

এই মন্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে, সরকারের পতনের পর গণবিক্ষোভের ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে জনগণের স্পষ্ট বার্তা থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন পুরোনো প্রতীক সংরক্ষণে কোনো ষড়যন্ত্র বা পক্ষপাতের অংশ কি না, সে সন্দেহ জনমনে তৈরি হয়েছে।

নিবন্ধন স্থগিত অবস্থায় একটি বিলুপ্তপ্রায় দলের প্রতীক ফের ওয়েবসাইটে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের দ্বৈত বার্তা আগামী নির্বাচনকে ঘিরে কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতাকে আরও দুর্বল করে দিতে পারে।

Scroll to Top