বাংলাদেশ কলকাতায় অবস্থিত একটি ভারতীয় প্রতিরক্ষা কোম্পানির সাথে ১.৮ বিলিয়ন রুপি (প্রায় ২১ মিলিয়ন ডলার) মূল্যের টাগবোট কেনার চুক্তি বাতিল করেছে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনী ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (জিআরএসই) থেকে একটি আধুনিক টাগবোট অর্ডার করেছিল। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং জিআরএসই প্রতিনিধিদের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে যে ভারত সরকার সম্প্রতি তার স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক সহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহন নিষিদ্ধ করেছে। এর পরপরই বাংলাদেশ চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
চুক্তি বাতিলের কারণ হিসেবে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোকে “স্থলবেষ্টিত সেভেন সিস্টার্স” এবং বাংলাদেশকে “এই অঞ্চলের একমাত্র সমুদ্র-অভিভাবক” হিসেবে আখ্যা দেন। এছাড়া তিনি এই অঞ্চল দিয়ে চীনের বাণিজ্য সম্প্রসারণের প্রস্তাব দেন, যা ভারত সরকারের আপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ভারত সরকার তাদের স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ কারণেই বাংলাদেশ চুক্তি বাতিলের পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করছে ভারত।
প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে যে বাংলাদেশ সরকার কলকাতা-ভিত্তিক গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (জিআরএসই) এর সাথে ১৮০ কোটি টাকার চুক্তি বাতিল করেছে। এই সংস্থাটি ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দ্বারা পরিচালিত।
সংবাদমাধ্যম হিন্দুর বিজনেস লাইনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকার ও এই কোম্পানিটির মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে অর্ডারটি বাতিল করা হয়েছে। কলকাতাভিত্তিক এ কোম্পানিটি ৮০০ টন ওজনের টাগ বোটটি তৈরির আদেশ পেয়েছিল বলে জানিয়েছে অপর সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।
পিএসইউওয়াচের মতে, টাগবোটটি ৬১ মিটার লম্বা এবং ১৫.৮০ মিটার চওড়া হত। এর গভীরতা ৬.৮০ মিটার হত। এই টাগবোটটি উঁচু বলার্ড টেনে তোলার ক্ষমতা রাখত। এর সামনের দিকে ৭৬ টন এবং পিছনের দিকে ৫০ টন টোয়িং ক্ষমতা ছিল। এটি দীর্ঘ দূরত্বের জাহাজ টেনে তোলা, বার্থিং, উদ্ধার অভিযান পরিচালনা, অগ্নিনির্বাপণ এবং সমুদ্রে সীমিত দূষণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা প্রদানের জন্য তৈরি করা হচ্ছিল। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে, ভারতীয় কোম্পানির প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে টাগবোটটি কেনার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
২০২৩ সালে, ঢাকা এবং নয়াদিল্লির প্রতিরক্ষা খাতে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের একটি লাইন অফ ক্রেডিট (ঋণ সহায়তা) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই টাগবোটটি ছিল এর অধীনে প্রথম বড় ক্রয় আদেশ।

