যেভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কূটনীতির কাছে হেরে গেলেন মোদি

ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বহুল আলোচিত বিমসটেক সম্মেলনে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস একটি ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার এক তাৎপর্যপূর্ণ বৈঠকে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগেই বৈঠকস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। মোদির পাশাপাশি ভারতের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
ড. ইউনুস যখন কক্ষে প্রবেশ করেন, তখন উপস্থিত সকলে সম্মানসূচকভাবে উঠে দাঁড়ান—যেমন ছাত্ররা শিক্ষককে শ্রদ্ধা জানাতে উঠে দাঁড়ায়।

এই মুহূর্তটি কোটি কোটি বাঙালির হৃদয় ছুঁয়ে যায়। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধুমাত্র প্রোটোকল অনুযায়ী নয়, বরং এতে ছিল একটি গভীর কূটনৈতিক বার্তা। এতদিন ধরে ধারণা ছিল, বাংলাদেশই নাকি ভারতকে আলোচনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে, অথবা ড. ইউনুসই মোদির সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য তদবির করছেন। কিন্তু মোদির এই সম্মানসূচক অপেক্ষা সেই ধারণাকে সম্পূর্ণ উল্টে দিয়েছে। এখন এটা স্পষ্ট যে ভারত-বাংলাদেশ বৈঠক ভারতের জন্যও সমান গুরুত্ব বহন করে।

বৈঠকের শুরুতেই ড. ইউনূস একটি ব্যতিক্রমী কূটনৈতিক বার্তা দেন মোদিকে উপহার দিয়ে। তিনি উপহার হিসেবে তুলে দেন সেই ছবিটি, যেখানে দশ বছর আগে মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত ১০২তম ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে নরেন্দ্র মোদি তাঁকে স্বর্ণপদক প্রদান করেছিলেন। ইউনূস বোঝাতে চেয়েছেন—বাংলাদেশ কৃতজ্ঞতা ভুলে না, বন্ধুত্বের মর্যাদা দিতে জানে।

বৈঠকের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক ছিল ড. ইউনুসের সরাসরি ও স্পষ্ট বার্তা। তিনি সাহসিকতার সঙ্গে তিস্তা চুক্তি ও সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরেন—যেগুলো শেখ হাসিনা সরকার কখনও খোলাখুলি আলোচনা করার সাহস দেখায়নি। এমনকি শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার সংবেদনশীল প্রসঙ্গও উত্থাপন করেন তিনি।

সারাবৈঠক জুড়ে ড. ইউনুস ছিলেন প্রাণবন্ত ও আত্মবিশ্বাসী, অন্যদিকে মোদি ছিলেন কিছুটা চিন্তিত ও ক্লান্ত। মনস্তাত্ত্বিক কৌশলে এই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকেই প্রাথমিক বিজয় এসেছে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

সব মিলিয়ে বলা যায়, মোদির কূটনৈতিক কৌশলকে ছাড়িয়ে গিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনুস স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছেন যে, বাংলাদেশ এখন কূটনৈতিক অঙ্গনে সাহসী ও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে।