ভারতের পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য, যেগুলো ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত, সম্পূর্ণভাবে স্থলবেষ্টিত। এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র প্রবেশপথ বাংলাদেশ। সম্প্রতি, চীন সফরের সময় বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই ভৌগোলিক বাস্তবতা তুলে ধরেন, যা ভারতে শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
একটি ভিডিও ক্লিপে ড. ইউনূস বলেছেন, “ভারতের পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য সমুদ্রের সঙ্গে কোনো সরাসরি সংযোগ নেই। বাংলাদেশই তাদের সমুদ্রপথের প্রবেশদ্বার, যা বিশাল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে।” তিনি আরও বলেন, এই অঞ্চলে চীনা বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে, যা স্থানীয় উৎপাদন ও বাজার সম্প্রসারণে সহায়ক হতে পারে।
ড. ইউনূসের মন্তব্য ভারতের কিছু রাজনৈতিক নেতার তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকেই এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। ভারতের সাবেক হাইকমিশনার বিনা সিক্রি মন্তব্য করেছেন, “ড. ইউনূসের এমন বক্তব্য দেওয়ার অধিকার নেই। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ইতিবাচক আলোচনা ও চুক্তি রয়েছে, যা দুই দেশের স্বার্থ রক্ষা করে।”
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত শর্মা ড. ইউনূসের বক্তব্যকে “বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য অত্যন্ত আপত্তিকর ও নিন্দনীয়। এটি ভারতের কৌশলগত দুর্বলতাকে তুলে ধরে।” তিনি আরও বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে আরও দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত করতে বিকল্প রেল ও সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
ভারতের কংগ্রেস নেতা পবন খেরা মন্তব্য করেছেন, “বাংলাদেশ কি ভারতকে অবরুদ্ধ করতে চীনকে আহ্বান জানাচ্ছে?” তিনি দাবি করেছেন, ভারতের পররাষ্ট্রনীতি এতটাই দুর্বল হয়ে গেছে যে, যেই দেশটির স্বাধীনতার জন্য ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল, সেই দেশই এখন ভারতকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ঘটনা বাংলাদেশ-ভারত-চীন সম্পর্কের জটিলতাগুলোকে তুলে ধরেছে, বিশেষ করে বাংলাদেশের চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক ভারতকে উদ্বিগ্ন করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগকে ভারত তার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে।
ড. ইউনূসের বক্তব্যে ভারতীয় নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এটি ভবিষ্যতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ওপর কী প্রভাব ফেলবে, তা এখনই বলা কঠিন।