সেনাবাহিনীর পর এবার বাংলাদেশকে যে সতর্কবার্তা দিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে সতর্ক বার্তা দিয়েছেন যে, সন্ত্রাসবাদকে যেন স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে দেখা না হয়। আজ শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, মাস্কাটে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে জয়শঙ্করের আলোচনা হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ সার্ক ইস্যু উত্থাপন করে। জয়সওয়াল বলেন, “পুরো দক্ষিণ এশিয়া জানে ঠিক কোন দেশ এবং কোন কার্যকলাপ সার্কের কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত করছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদের প্রতি বাংলাদেশের অবস্থান সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।”

এছাড়া, সাম্প্রতিক কিছু উপদেষ্টার মন্তব্য বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, সে বিষয়ে ভারত নজর রাখছে বলেও জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এ ধরনের মন্তব্য সহযোগিতামূলক নয়, এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তাদের বক্তব্যের প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত।”

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন। জয়সওয়াল বলেন, “গত কয়েক মাস ধরে আমরা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। বিষয়টি শুধু ভারতেই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে নরেন্দ্র মোদি ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আলোচনার বিষয়বস্তুর মধ্যেও অন্তর্ভুক্ত ছিল।” তিনি আরও বলেন, “সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এ নিয়ে ভারতের উদ্বেগ ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।”


চীন নেমেছে মাঠে, তিস্তা নিয়ে ভারতের দাদাগিরি শেষ হবে এবার? (ভিডিও সহ)

বাংলাদেশ ভাটির দেশ হওয়ায়, হিমালয় থেকে প্রবাহিত নদীগুলো এদেশের বুক চিরে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫৪টি আন্তঃসীমান্ত নদী থাকলেও, উজানের দেশ হিসেবে ভারত বহু নদীতে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশের পানির ন্যায্য অধিকার ব্যাহত করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের এসব কার্যক্রম জাতিসংঘের ১৯৯৭ সালের পানি কনভেনশনের পাঁচ ও সাত নম্বর অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

১৯৭৫ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গজল ডোবায় বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে তিস্তা নদীর নিয়ন্ত্রণ নেয় ভারত। ফলে বাংলাদেশ পর্যাপ্ত পানির অভাবে ভুগতে থাকে এবং দিন দিন মরুকরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে, যা নদীর ১১৫ কিলোমিটার এলাকাকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করবে। তবে, বাংলাদেশের এ উদ্যোগ ভালোভাবে নেয়নি ভারত। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাংলাদেশে তিস্তা নদীর ওপর একটি বৃহৎ ব্যারেজ নির্মাণে চীনের আগ্রহ থাকলেও, ভারতের আপত্তির কারণে প্রকল্পটি থমকে আছে।

এতদিন ভারত বাংলাদেশের ওপর কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করলেও, সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতি বদলেছে। সম্প্রতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের প্রভাব উপেক্ষা করে চীনের সহায়তায় তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছে। ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানিয়েছেন, চীন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রস্তুত, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাংলাদেশকেই। বিশ্লেষকদের মতে, এটি বাস্তবায়িত হলে তিস্তা নিয়ে ভারতের আধিপত্যের অবসান ঘটতে পারে।

তবে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করছেন, চীনের এ আগ্রহ শুধুমাত্র সহযোগিতামূলক নয়, বরং কৌশলগতও। তিস্তা প্রকল্পকে চীন তাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করছে। বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডরের মাধ্যমে চীন তাদের ইউনান প্রদেশকে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত করতে চায়, যেখানে তিস্তা প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ভারত বরাবরের মতোই তিস্তা প্রকল্পে চীনের ভূমিকার বিরোধিতা করছে এবং এটিকে তাদের ভূরাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে দেখছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের এই প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার পেছনে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সুবিধাও রয়েছে। চীন ইতোমধ্যে লাওস, পর্তুগাল, কাজাকস্থান, আর্জেন্টিনা ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বাঁধ নির্মাণে বিনিয়োগ করেছে, যা তাদের অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।

তিস্তা প্রকল্পের আওতায় নদীর দুই পাড়ে ২২০ কিলোমিটার গাইড বাঁধ নির্মাণ, নদী খনন, ভাঙন প্রতিরোধ, আধুনিক সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ পর্যটন কেন্দ্র, মাছ চাষ ও অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রায় ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি বাংলাদেশের জন্য ভূকৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হয়ে উঠতে পারে, যা কূটনৈতিকভাবে বাংলাদেশের জন্য একটি ট্রাম্প কার্ড হিসেবে কাজ করবে।