সব দুয়ারে তালা, আপাকে এখন ‘ডেড হর্স’ মনে করছেন মোদিও

একসময় দেশের প্রতিটি ঘটনা তাঁর ইশারায় নিয়ন্ত্রিত হতো—’আপা’ নামটি ছিল এক জাদুকরী শব্দ, যার উচ্চারণেই ঘটত বিস্ময়কর পরিবর্তন। তাঁর হাসি, কথা, উপস্থিতি ছিল দেশের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। যাঁরা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে চেয়েছেন, তাঁরা তাঁর আশীর্বাদ পাওয়ার অপেক্ষায় থাকতেন। আপার দিকে তাকালে মনে হতো, যেন পুরো দেশ তাঁর হাতের মুঠোয়। হেলিকপ্টারে সফর করতেন তার পিওনও, ব্যাংক ব্যালেন্স ছিল অগাধ। যা বলতেন, তাই বাস্তবে রূপ নিত। রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে ছিল তাঁর একচ্ছত্র আধিপত্য।

কিন্তু ইতিহাস বলে, চিরস্থায়ী রাজত্ব কারও হয় না। একসময় যাঁরা ক্ষমতার শীর্ষে ছিলেন, সময়ের নিয়মে তাঁদেরও পতন ঘটে। রোমান সাম্রাজ্যের সিজার থেকে শুরু করে আধুনিককালের ফ্যাসিস্ট শাসকরা—সময়ের পরিক্রমায় সবাইকে বিদায় নিতে হয়েছে। আপার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।

আজ বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় আপা আর ক্ষমতায় নেই। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর তাঁর বিদায় নিশ্চিত হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফিরে আসার সম্ভাবনা এখন শূন্যের কোঠায়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ‘আপা’ অধ্যায় চিরতরে সমাপ্ত।

বিশ্বরাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরা—যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিংবা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি—এখন আপাকে ‘ডেড হর্স’ হিসেবে দেখছেন। অর্থাৎ, তাঁর রাজনৈতিক অধ্যায়ের ইতি ঘটেছে।

বর্তমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি বিষয় স্পষ্ট—আপার সময় শেষ, এবং ইতিহাসের পাতায় তিনি এখন অতীত।


ভারতকে বন্ধুত্বের জন্য ২ শর্ত বেঁধে দিল বিএনপি

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অভিন্ন নদী তিস্তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে। তবে শুষ্ক মৌসুমে এই নদীর পানি বণ্টনের চুক্তি এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরোধিতার কারণে গত এক দশকেও এই চুক্তি আলোর মুখ দেখেনি। অন্যদিকে, ভারত উজানে তিস্তার পানি পুনঃনিয়ন্ত্রণ করায় বাংলাদেশের কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, যা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে।

এছাড়াও, সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক নিরীহ বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো অব্যাহত রয়েছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের জন্য গ্রেপ্তার করা গেলেও প্রাণঘাতী হামলা আইনসম্মত নয়। কিন্তু ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী এ ধরনের ঘটনা অব্যাহত রেখেছে, যা আন্তর্জাতিক নীতিমালার পরিপন্থী।

এই পরিস্থিতিতে বিএনপি তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা এবং সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবিতে তাদের আন্দোলন শুরু করেছে। দলের পক্ষ থেকে ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের শর্ত হিসেবে দুটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি তুলে ধরা হয়েছে।

লালমনিরহাটে এক আন্দোলন কর্মসূচির উদ্বোধনী বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “ভারতের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক চাই, তবে সেটা হতে হবে সমতার ভিত্তিতে। প্রথমত, তিস্তার পানি বণ্টনের ন্যায্য চুক্তি করতে হবে এবং দ্বিতীয়ত, সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা বন্ধ করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “ভারত থেকে ৫৪টি নদী বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়। এসব নদীর পানি উজানে আটকে রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে ভারত, যার ফলে আমাদের কৃষি ও মৎস্যখাত ক্ষতির মুখে পড়ছে। নদীগুলোতে পানি না থাকায় কৃষকেরা জমিতে চাষ করতে পারছে না, জেলেরা মাছ ধরতে পারছে না। এমন পরিস্থিতি চলতে দেওয়া যায় না।”

বিএনপি লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার ১১টি পয়েন্টে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। এতে সব বয়সের মানুষ অংশ নিয়েছে এবং “জাগো বাহে তিস্তা” স্লোগানে তিস্তা নদীর ১২৫ কিলোমিটার জুড়ে আন্দোলন চলছে।

এভাবে বিএনপি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত না হলে ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছাবে না। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ও সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবিতে তারা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।