Saturday , December 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / সেনাবাহিনীর সেই বৈঠক থেকে যেভাবে বদলে যায় পরিস্থিতি

সেনাবাহিনীর সেই বৈঠক থেকে যেভাবে বদলে যায় পরিস্থিতি

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে দেশব্যাপী সেনা মোতায়েন করার পর আন্দোলনের পরিস্থিতি মূল্যায়ন ও মতামত নিতে ৩ আগস্ট সেনা সদর দফতরে বিভিন্ন পর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

মতবিনিময় সভায় দেশের অন্যান্য ফরমেশনের কর্মকর্তারাও ভর্চুয়ালী অংশ নেন। আলোচনাকালে অনেকেই মত প্রকাশ করেন যে, এই আন্দোলন দমনে কোনো নেতিবাচক ভূমিকা সেনাবাহিনীর জন্য বদনাম বয়ে আনবে।

সেনাপ্রধান সামরিক কর্মকর্তাদের মনোভাব উপলব্ধি করে সিদ্ধান্ত নেন যে সেনাবাহিনী কোনো উসকানিতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালাবে না। শুধু তাই নয়, সেনাসদস্যরা শিক্ষার্থীদের পদযাত্রায় প্রতিহত বা বাধা দেবে না।

মিছিল চলাকালে সেনাসদস্যরা বরং সরে গিয়ে জায়গা করে দেবে। এ খবর যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, তখন আন্দোলনের মোড়ই ঘুরে যায়। খুব দ্রুত পট পরিবর্তন হতে থাকে।

দিনের বৈঠকে, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রায় আধা ঘণ্টার একটি উদ্বোধনী ভাষণ দেন, যেখানে তিনি ব্যাখ্যা করেন যে কেন সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, সরকার যদি সঙ্কট মোকাবিলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করে, তাহলে তারা সেই নির্দেশ মানতে বাধ্য। তবে তিনি যোগ করেন, তার সেনারা কাউকে হত্যা করেনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কতগুলো গুলি এবং ফাঁকা গুলি চালানো হয়েছে— তার পরিসংখ্যানও তিনি বৈঠকে তুলে ধরেন।

কর্মকর্তাদের সংযত থাকার পরামর্শ দিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ১৯৭০ সালের পর আমাদের দেশে এমন গণবিক্ষোভ আর কখনো হয়নি। তাই এটি একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। আমাদের সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে।

বক্তৃতার পর সেনাপ্রধান বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা শোনানোর জন্য আমন্ত্রণ জানান। ব্রিগেডিয়ান জেনারেল এবং এর চেয়ে ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা হাত তুললেও সেনাপ্রধান তাদের নিরুৎসাহিত করেন এবং তরুণ কর্মকর্তাদের কথা শোনার প্রতি জোর দেন।

এদিন ৬ থেকে ৭ জন কর্মকর্তা তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

রাজশাহীর এক নারী সেনা কর্মকর্তা বাংলায় আবেগঘন বক্তৃতা পাঠ করে বলেন, দেশের সব মাকে মৃত্যু স্পর্শ করেছে এবং সব মা কাঁদছেন।

তিনি মীর মুগ্ধর প্রতিবেশী ছিলেন, যে মুগ্ধ ঢাকার উত্তরায় আন্দোলনকারীদের মধ্যে পানি বিতরণ করার সময় নিহত হন।

নারী কর্মকর্তা মেজর হাজেরা জাহান এই ঘটনায় শিশুদের প্রাণহানি ও এর ন্যায্য বিচার হওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর ওপর জনগণের অসন্তোষ বাড়তে থাকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সেনাপ্রধান তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন।

ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি গুলির ঘটনা সামাজিক যোগাযাগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। ওই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন ক্যাপ্টেন বর্ণনা করেন যে কীভাবে কর্তব্যরত সেনা সদস্যদের জনতা ঘিরে ধরেছিল এবং তাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য গুলি চালাতে হয়েছিল।

তিনি বলেন, “আমি আমার নিজের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে, আমার বন্ধুদের কাছ থেকে এবং আমার প্রিয়জনের কাছ থেকে সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছি। তারা ভিডিওটি দেখেছেন। আমার নিকটাত্মীয়দের সমালোচনার পর আমি একটি হতাশাজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি।

দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে মধ্য বিরতি দেওয়া হয়। ধারণা করা হয়েছিল, বিরতির পর আরও কর্মকর্তারা কথা বলবেন।

সেনাবাহিনীর ওপর জনগণের সমর্থন কমে যাওয়ার কথা তুলে ধরে সেনাসদস্যদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন ৫ এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব। চট্টগ্রামের আরেক কর্মকর্তা আহত শিক্ষার্থীদের সহায়তার মাধ্যমে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে কাজ করার পরামর্শ দেন।

এছাড়া গত ৪ আগস্ট রাওয়া ক্লাবে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। সেদিন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা। এ খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। দেশ ও জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সেদিন সেনাবাহিনীতে কর্মরত সকল পদমর্যাদার সদস্যদের কাছে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। সেনাবাহিনী আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালাবে না এমন সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারেননি শেখ হাসিনা।

তিনি চেয়েছিলেন, আন্দোলন দমনের জন্য যা যা করা দরকার পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা করুক। এতে আরো রক্তপাত হতো; বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সেনাপ্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে তাদের অসম্ভবের কথা জানান। এভাবেই সেদিন শেখ হাসিনা ও তার সরকারের কাছ থেকে সেনাবাহিনী মুখ ফিরিয়ে নেয়।

About Nasimul Islam

Check Also

মাত্র ১৫ মিনিটে বাংলাদেশ দখলের হুমকি, উত্তেজনা পশ্চিমবঙ্গে

পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ‍্যালঘু সেলের মালদা জেলা সভাপতি টিঙ্কু রহমান বুধবার (১১ ডিসেম্বর) এক বিতর্কিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *