গতকাল সোমবার (১১ অক্টোবর) বিকেল ৪ টার দিকে নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেন বাংলা ছোট পর্দার এক উজ্জল নক্ষত্র ও নির্দেশক একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী ড. ইনামুল হক। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। এদিকে তার মৃত্যুর খবরে রীতিমতো শোকের ছায়া নেমে এসেছে বিনোদন অঙ্গনজুড়ে। তাকে হারানোর শোক কোনো ভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারছেন না কেউ।
এদিকে গুণী এই তারকার মৃত্যুতে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন তার দীর্ঘদিনের বন্ধু ও কিংবদন্তি অভিনেতা আবুল হায়াত। ড. ইনামুল হকের সঙ্গে তার ৫৫ বছরের বন্ধুত্ব। হুট করে বন্ধুর চলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি। আজ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বন্ধুর মরদেহ দেখে অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন আবুল হায়াত।
বিদায় মঞ্চের ওপরে রাখা শ্রদ্ধাঞ্জলি খাতাটি আনমনে উল্টাচ্ছেন আবুল হায়াত। এরপর বিমর্ষ চোখে কিছুক্ষণ ঘাসের দিকে তাকিয়ে থাকেন। চোখ ঝাপসা হয়ে উঠলেও নিজেকে সামলে নেওয়া চেষ্টা করেন তিনি। তবে বেশিক্ষণ নয়। কোনো রকমে হাতের ফুলগুলো সপে অঝোরে কাঁদতে লাগলেন তিনি।
মেয়ে নাতাশা হায়াত বাবার পাশে এসে দাঁড়িয়ে কিছুটা সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু হলো না। গণমাধ্যমকর্মীরা কাছে যেতেই বললেন, ‘আর পারছি না। কিছুই বলার নেই।’ এরপর শ্রদ্ধাঞ্জলি মঞ্চের পেছনে এসে মিনিট দশেক বসলেন। যতক্ষণ ছিলেন ততক্ষণই তার চোখ দিয়ে ঝরলো বন্ধু হারানোর অশ্রু।
এদিকে, আজ বেলা ১১টায় নাট্যব্যক্তিত্ব ড. ইনামুল হকের মরদেহ শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আনা হয়। সেখানেই সর্বস্তরের জনগণ তাকে শ্রদ্ধা জানান। উপস্থিত হন- তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডাক্তার জাফরুল্লাহ, অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি, তানজিকা, নাতাশা হায়াত, মোমেনা চৌধুরী, বৃন্দাবন দাস মীর সাব্বির সহ অনেকে। শ্রদ্ধা নিবেদন আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। উপস্থিত ছিলেন ড. ইনামুল হকের দুই জামাতা লিটু আনাম, সাজু খাদেম এবং দুই মেয়ে প্রৈতি হক ও হৃদি হক।
পারিবারিক সূত্র জানায়, শহীদ মিনারের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাদ জোহর বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হবে এই নাট্যজনকে।
একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য অভিনেতা-নাট্যকার ড. ইনামুল হক গতকাল দুপুরে বেইলি রোডের নিজ বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। জানা যায়, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা গেছেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৮ সালে ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’ নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন ড. ইনামুল হক। ক্যারিযারে অংখ্য জনপ্রিয় নাটক উপহার দিয়ে কোটি কোটি দর্শকের মনের মাঝে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। তবে অভিনয়ের পাশাপাশি কর্মজীবনে ৬০ টি নাটকও লিখেছেন তিনি ।টেলিভিশনের জন্য তার লেখা প্রথম নাটকটি ছিল ‘অনেকদিনের একদিন’।