পৃথিবীতে রয়েছে অনেক ধরনের রীতি কিংবা প্রথা যা অনেকের নিকট উদ্ভট বলেই মনে হয়। দেশ, ধর্ম, উপজাতি এবং রীতিনীতির বিশ্বে, প্রত্যেকের পক্ষে সবকিছু পছন্দ করা সম্ভব নয়। সভ্যতা শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি, কিন্তু কিছু সম্প্রদায় বহু পুরনো ঐতিহ্যের সাথে আটকে আছে। যদিও এর মধ্যে কিছু রয়েছে রহস্যময়, এবং কিছু একটু ভিন্ন ধরনের। কিছু মানুষেরা তাদের জীবনযাত্রায় এতটাই আলাদা যে কারও কাছে উদ্ভট লাগাটাই স্বাভাবিক। এটাও মনে রাখা উচিৎ যে, যদি এই অদ্ভুত ঐতিহ্যগুলির পিছনে গভীর অর্থের সন্ধান করেন তবে আপনি সম্ভবত দেখতে পাবেন যে সেগুলো অদ্ভুত অর্থ তৈরি করে, তাদের উদ্ভটতা একদমই অমূলক নয়। এমন ধরনের প্রথা রয়েছে পাকিস্তান-ভারত সীমান্তের কাছে রাজস্থানের বাড়মের জেলার ছোট্ট একটি গ্রাম দেরাসরে।
বড়জোর ৬০০ মানুষের বাস গ্রামটিতে। কিন্তু এই গ্রামের অদ্ভুত এক রীতি গোটা ভারতে পরিচিতি এনে দিয়েছে। দেরাসরের প্রতিটি পুরুষের অন্তত দু’জন করে স্ত্রী। এ নিয়ে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আনন্দবাজার পত্রিকা।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এ গ্রামের বাসিন্দাদের বিশ্বাস, প্রথম স্ত্রী থেকে কোনো স্বামীরই সন্তান হবে না। সন্তানের মুখ দেখতে গেলে দ্বিতীয় বিয়ে করতেই হবে। এই অদ্ভুত বিশ্বাস থেকেই দ্বিতীয় বিয়ে করেন দেরাসর গ্রামের পুরুষরা। এমন রীতির সূত্রপাত অতীতের একটি ঘটনা থেকে। গ্রামের এক লোকের নাকি কিছুতেই সন্তান হচ্ছিল না। পরে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করতেই সন্তানলাভ করেন। এরপর যখনই গ্রামের কোনো পুরুষ এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতেন, তার দ্বিতীয় বিয়ে দেওয়া হত। আর তাতেই নাকি মিলত ফল। এভাবে পুরুষের বহুবিবাহ গ্রামের রীতিতে পরিণত হয়।
অবশ্য এটি ছাড়াও অন্য একটি কারণ রয়েছে এমন রীতির পিছনে। দেরাসর গ্রামে শুরু থেকেই তী’ব্র পানি সঙ্কট চলে আসছে। অন্তত পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে পরিবারের নারীদের পানি আনতে হয় এই গ্রামে। অন্তঃসত্ত্বা হলে কোনো নারীর পক্ষেই হেঁটে এতদূর থেকে পানি আনা সম্ভব নয়। সে কারণেও দ্বিতীয় বিয়ে করে থাকেন পুরুষরা।
সে ক্ষেত্রে প্রথমজনকে সে অর্থে স্ত্রীর কোনো অধিকারই দেওয়া হয় না। তারা বরং বাড়ির পরিচারিকার মতো জীবন কাটিয়ে থাকেন। প্রথম স্ত্রীকে বলা হয় ‘জল স্ত্রী’। সাধারণত প্রথম স্ত্রী সারা জীবনে সন্তানধারণের অধিকার পান না। স্বামীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনেরও অধিকার নেই তাদের।
কোনো পুরুষ যদি এই রীতির বিরো’ধিতা করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে পুরো গ্রাম একজোট হয়। এমনকি নিজের পরিবারও তাকে পরিত্যাগ করবে। গ্রাম থেকেই বিতাড়িত করা হয় তাকে। দ্বিতীয় স্ত্রীও যদি সন্তানধারণ না করে থাকেন সে ক্ষেত্রে স্বামীকে আরও একটি বিয়ে করতে হয়। উপার্জনকারী স্বামীকে নিতে হয় পুরো পরিবারের দায়িত্ব।
উল্লেখ্য, প্রতিটি ধর্ম ও সংস্কৃতিতে এমন কিছু আছে যা বহিরাগতদের অদ্ভুত ঐতিহ্য বা অনুচ্ছেদের আচার বিবেচনা করে, কিন্তু যা সত্যিকারের বিশ্বাসীদের কাছে পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়। প্রতিটি ধর্মের অনুষ্ঠান এবং অনুশীলন রয়েছে যা জীবনের মাইলফলকগুলিকে চিহ্নিত করে: জন্ম, বিবাহ, প্রাপ্তবয়স্কতায় রূপান্তর এবং প্রয়ান, যার মধ্যে অনেকগুলি যারা কোনো ধরনের অনুষ্ঠান করেন না তাদের কাছে অস্বাভাবিক মনে হতে পারে। কখনও কখনও লোকেরা কিছু আচার পালন করে যা ধর্মের অংশ হিসাবে গৃহীত হয়, কখনও কখনও তারা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পালন করে যা অন্যদের কাছে অদ্ভুত বলে মনে হয়। এমন অনেক ঐতিহ্য রয়েছে যা বিশ্বের কাছে সত্যিই উদ্ভট বলে মনে হয় যেখানে এটি অনুসরণ করা হয় না।