বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলন ও গণবিপ্লবের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালাতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। পালানোর আগে, হাসিনা ছাত্র ও জনতার গণঅভ্যুত্থান দমাতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেন, যার ফলে শত শত মানুষ নিহত এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হন।
এখন, হাসিনাকে তার শাসনকালে সংঘটিত ‘নৃশংসতার’ অভিযোগের মুখোমুখি হতে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের ওপর চাপ বাড়ছে। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি ঘটাচ্ছে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে হাসিনা ৫ আগস্ট হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে যান, যা তার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটায়। হাসিনার শাসনামল নির্বাচনী কারচুপি, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং গুমের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে পরিপূর্ণ।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশের জনগণ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ফেরত আনার দাবি করছে। প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে হবে, না হলে বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে না।”
ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘‘শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করায় কেউই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। কারণ বিচার করার জন্য আমরা তাকে ফেরত আনতে চাই। তিনি ভারতে রয়েছেন এবং সেখান থেকেই মাঝে মাঝে কথা বলছেন। এটা সমস্যা তৈরি করছে।
বিশ্লেষকরা বলেন, ড. ইউনূসের মন্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করছে। তবে হাসিনাকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার সম্ভাবনা কম। হরিয়ানার জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, ‘ভারত হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে এমন সম্ভাবনা খুবই কম। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিটি কর্মকর্তা এবং স্টেকহোল্ডার শেখ হাসিনা-বিরোধী এবং ভারত-বিরোধী অবস্থান নিতে চাইছে।’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল গত শুক্রবার বলেছেন, হাসিনাকে প্রত্যর্পণের বিষয়টি এখনও “অনুমান-নির্ভর প্রশ্ন”। তিনি আরও বলেন, “শেখ হাসিনা নিরাপত্তার কারণে ভারতে এসেছিলেন, আমাদের আর কিছু বলার নেই।”
গত মাসে, ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো হাসিনার নিরাপত্তার পক্ষে অবস্থান নেয় এবং ভারতে তার আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত সমর্থন করে। তবে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত আনার বিষয়ে দিল্লি এখনও কোনো জবাব দেয়নি। হাসিনার পতনের পর থেকে তার দল এবং সরকারের সমর্থকরা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেছে বা অন্য দেশে পালিয়েছে। তাদের মধ্যে, হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গ্রেপ্তার হয়েছেন।
লন্ডন-ভিত্তিক লেখক প্রিয়জিৎ দেবসরকার বলছেন, ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোর নেতাদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তিনি বলেন, “ভারতীয় আমলাতন্ত্র শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেও, হাসিনার প্রতি তাদের আতিথেয়তার বিপরীত কিছু করবে, তেমন সম্ভাবনা খুবই কম।”
শ্রীরাধা দত্তের মতে, যদিও ভারতে হাসিনার উপস্থিতি নিয়ে উত্তেজনা রয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করা হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে এবং উভয় দেশই চায় তা বজায় রাখতে।
অবশ্য, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা এবং বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যার কারণে। ড. ইউনূস বলেন, সংখ্যালঘুদের অবস্থাকে বড় আকারে চিত্রিত করার চেষ্টা আসলে একটি অজুহাত মাত্র।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারতীয় অভ্যন্তরে ইসলামোফোবিয়া উসকে দিতে পারে এবং বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যা হওয়ার কারণে সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে।