বাংলাদেশের জাতীয় ক্রাশ পূর্নিমা। পুরো নাম দিলারা হানিফ পূর্নিমা। বাংলাদেশের সিনেমার বড় একটি নাম এটি। দীর্ঘদিন ধরেই সিনেমায় কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। পেয়েছেন বেশ জনপ্রিয়তা।তবে জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পূর্ণিমার ক্যারিয়ারের প্রথম সময়টা সুখকর ছিল না। অনেক স্ট্রাগল করতে হয়েছিল পায়ের তলায় মাটি শক্ত করার জন্য। বেশ কয়েকটা সিনেমা ফ্লপ হওয়ার কারণে অনেক ধরণের কটাক্ষ শুনতে হয়েছিল তাকে।
ওই সময়ের কথা স্মরণ করে পূর্ণিমা বলেন, তখন একের পর এক সিনেমা ফ্লপ হচ্ছিলো। এখনকার মত সাইবার বুলিং হতো না। তবে তখন সরাসরি মুখের ওপর এসে অনেকে বলতেন, তুমি তো কুফা নায়িকা।
তোমার অভিনয় কিছুই হয়না। দাঁতে দাঁত চেপে সবার কথা মুখ বুঁজে শুনতাম আর আশুলিয়ায় গিয়ে হতাশ হয়ে এক প্লেট ফুচকা নিয়ে বসে যেতাম। একেকটা ফুচকা মুখে নিতাম, আর ভাবতাম-আমার কি হবে? কবে আমাকে লোকে পছন্দ করবে?
কথাগুলো সম্প্রতি মাছরাঙা টেলিভিশনে ঈদের বিশেষ ‘রাঙা সকাল’-এ বলেছেন পূর্ণিমা। এখানে তিনি প্রথম জীবনের সংগ্রামের নানা গল্প শেয়ার করেছেন। সুদর্শনা এ অভিনেত্রী জানান, তার অভিনয়ে অভিষেক হয়েছিল শিশু শিল্পী হিসেবে ‘শত্রু ঘায়েল’ সিনেমায়।
সেখানে অভিনয়ের জন্য এলিফেন্ট রোডের বাসা থেকে বিএফডিসি আসতেন রিকশায় চড়ে। বড় হয়ে যখন ‘এ জীবন তোমার আমার’ সিনেমায় নায়িকা হলেন, তখন এসেছিলেন বেবি ট্যাক্সি চড়ে। কিছুদিন পর হলুদ রঙের ট্যাক্সি ক্যাবে করে শুটিং স্পটে যেতেন।
কিন্তু ট্যাক্সি ক্যাবের ভাড়া বেশি গুণতে হতো বলে ৪/৫টি সিনেমায় অভিনয়ের পর মায়ের শখ হয়েছিল মেয়েকে একটি গাড়ি কিনে দেবেন। নতুন গাড়ি কেনার সামর্থ্য ছিল না। অন্যের ব্যবহার করা গাড়িই ভরসা।
দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর আড়াই লাখ টাকা দিয়ে সে সময় জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিতের টয়োটা স্টারলেট গাড়িটি কিনেছিলেন পূর্ণিমা ও তার পরিবার। কিন্তু পূর্ণিমার অবস্থা তখন খুব একটা ভাল ছিল না। তাই গাড়ির তেল কেনার টাকা থাকতো না প্রায়ই।
পূর্ণিমা আরও জানান, প্রথম সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি মোট ১ লাখ টাকা পারিশ্রমিক পেলেও সাইনিং মানি ছিল ১৫ হাজার টাকা। তবে সেই অভিনয়ের সুখকর অভিজ্ঞতা তিনি কখনো ভুলতে পারবেন না।
জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত মতিউর রহমান পানু প্রযোজিত ছবিতে নায়ক ছিলেন রিয়াজ, আশীর্বাদ হিসেবে পেয়েছিলেন ফারুক-ববিতা জুটিকে। শুটিং শুরু হবার তিন দিন আগে সহশিল্পীদের সাথে সাবলীল অভিনয়ের জন্য পূর্ণিমাকে পরিচালক রাজু নিয়ে গিয়েছিলেন ফারুক-ববিতার বাসায়।
পূর্ণিমা বলেন, মিয়াভাইয়ের (ফারুক) বাসায় সারাদিন ছিলাম। একসাথে খাওয়া-দাওয়া করলাম। তিনি মাথায় হাত বুলিয়ে আশীর্বাদ করিয়ে দিলেন। গুলশানে ববিতা আপার বাসায় গিয়ে অনেক বেশি চমকে গিয়েছিলাম। তিনি আমার গুরু রাজু ভাইকে বলেছিলেন, শুটিংয়ের প্রথম দিন ওকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিও।
আমি নিজের হাতে ওকে তৈরি করে দেব। আমার সৌভাগ্য, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেত্রী ববিতা আপা আমাকে নিজ হাতে সাজিয়ে শাড়ি পরিয়ে দিলেন। আমাকে স্বাভাবিক করার জন্য নিজের গাড়িতে পাশে বসিয়ে শুটিং স্পটে নিয়ে গেলেন। সবার সহযোগিতা পেয়েছিলাম বলেই হয়তো আমার অভিনয় জীবনের প্রথম শট এক টেকেই ওকে হয়েছিল।
বর্তমানে সিনেমার কাজ নেই বলে নাটক নিয়ে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন পূর্নিমা। এ ছাড়াও তাকে এখন দেখা যায় টিভি চ্যানেলের নানা ধরনের সব অনুষ্ঠানে।এ ছাড়াও সরকারি অনুদানের সিনেমায় তিনি করছেন অভিনয়।মুক্তি পাবে খুব শিঘ্রই।