Thursday , December 12 2024
Breaking News
Home / Countrywide / প্রশ্নপত্র বাইরে দিতেন বুয়েট শিক্ষক, ২ সেটে পেতেন লক্ষ টাকা

প্রশ্নপত্র বাইরে দিতেন বুয়েট শিক্ষক, ২ সেটে পেতেন লক্ষ টাকা

৫টি সরকারি ব্যাংকের সমন্বিত নিয়োগ পরীক্ষার যে প্রশ্নপত্র তৈরী করা হয় সেটা ফাঁ’/স করার মাধ্যমে তার উত্তর তৈরী করে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে তিন জনের বিরু’দ্ধে। আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস সহকারী পদে দায়িত্ব পালন করা দেলোয়ার হোসেন, পারভেজ মিয়া ও প্রেসকর্মী রবিউল আউয়ালকে আ’/টক করার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পর এই ধরনের আলো’ড়ন সৃষ্টি করা তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা (ডিবি) কর্মকর্তারা। আশুলিয়ার প্রেস থেকে কর্মী রবিউল প্রশ্ন ফাঁ’/স করার পর সেটি দেলোয়ারকে দেন। দেলোয়ার প্রশ্ন পাওয়ার পর আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দুই কর্মী পারভেজ মিয়া এবং মোক্তারুজ্জামান রয়েল তাদের হাতে ঐ প্রশ্ন পৌছে দেন। আর এই জন্য এক লক্ষ টাকা পেয়েছেন দেলোয়ার হোসেন এবং রবিউল।

জবানব’/ন্দিতে দেলোয়ার বলেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নিখিল রঞ্জন ধর নামে এক শিক্ষক প্রতিবার প্রেস থেকে দুই সেট প্রশ্ন একটি ব্যাগে করে নিয়ে যেতেন। দেলোয়ারের মতে, আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্প ও উৎপাদন প্রকৌশল বিভাগের (আইপিই) সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান নিখিল রঞ্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে স্বল্প টাকায় নিয়োগ পরীক্ষার দরপত্র পেয়েছে। নিখিল রঞ্জন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন চাকরি করতেন। তিন আ’সা’/মির জবানব’/ন্দিতে আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা কাজী শরিফুল ও দেলোয়ারের শ্যালক মুবিন উদ্দিনের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের গ্রে’ফ/তারের চেষ্টা চলছে বলে ডিবির একাধিক সূত্র জানায়।

গত রাতে যোগাযোগ করা হলে নিখিল রঞ্জন দেশের একটি জনপ্রিয় দৈনিককে বলেন, ‘আমি শুধু সেখানে টেকনিক্যাল সাপের্ট দিতাম। প্রশ্ন তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। সে (দেলোয়ার) যা বলছে, এটা ঠিক নয়। আমি বুয়েটের শিক্ষক, আমি কেন প্রশ্ন নিয়ে আসব?’ এক প্রশ্নে নিখিল বলেন, ‘ওরা টেকনিক্যাল সাপোর্ট চায়, আমি তখন যাই। সিট ও সেন্টার অ্যারেঞ্জমেন্টটা আমি করে দিই। প্রশ্নের সব কিছু উনারাই করেন।’

ডিবির তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহাদাত হোসেন সুমা বলেন, ‘তদন্ত করতে গিয়ে অনেকের নামই পাচ্ছি। তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা যাবে না।’

গত বুধবার রাতে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকা থেকে দেলোয়ার ও রবিউলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মহাখালী থেকে পারভেজকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার তিনজনই ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানব’ন্দি দিয়েছেন। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদেও অপ/রা’ধ স্বীকার করেছেন তিনজন। এ সময় তাঁরা ছয় বছর ধরে প্রশ্ন ফাঁ’সে জড়িত বলে জানান। গত ৬ নভেম্বর সমন্বিত পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁ’স করে উত্তর তৈরির কাজ কিভাবে হয়েছে তা বর্ণনা করেন তিনজন।

জবানব’/ন্দিতে দেলোয়ারের দাবি, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অল্প টাকায় পরীক্ষার টেন্ডারগুলো আনতেন বুয়েটের শিক্ষক নিখিল রঞ্জন ধর। দেলোয়ারও কয়েকবার নিখিলের ব্যাগে প্রশ্ন দিয়েছেন। তবে ব্যাগে প্রশ্ন নিয়ে নিখিল তা বিক্রি করেছেন কি না, সেটা নিশ্চিত করতে পারেননি দেলোয়ার।

জবানব’ন্দিতে দেলোয়ার বলেন, গত ৬ নভেম্বরের প্রশ্ন দেলোয়ার সংগ্রহ করেন আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আশুলিয়ার যে প্রেসে ছাপায় সেখানকার কর্মচারী রবিউল আউয়ালের কাছ থেকে। রবিউল এক সেট প্রশ্ন জামার মধ্যে লুকিয়ে প্রেস থেকে বাইরে নিয়ে আসেন। দেলোয়ারকে আহছানউল্লার টেকনিশিয়ান মুক্তারুজ্জামান রয়েল এবং ল্যাব সহকারী পারভেজ মিয়া প্রশ্ন ফাঁ’সে যুক্ত করেন। কমপক্ষে চার-পাঁচটি পরীক্ষার প্রিলিমিনারি ও রিটেনের প্রশ্ন এনে দিয়েছেন। এক লাখ টাকা পেয়ে তিনি আবার ৫০ হাজার টাকা রবিউলকে দিয়েছেন। ভগ্নিপতি মুবিন ও আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী শরীফুলকে আগে প্রশ্ন দিলেও পাঁচ ব্যাংকের ঘটনায় তাঁরা ছিলেন না। এবার ছিলেন ব্যাংকার শামসুল হক শ্যামল।

ডিবির সূত্র জানায়, দেলোয়ার ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রেজারার কাজী শফিকুল ইসলামের অফিসে পিওন হিসেবে চাকরি করতেন। কয়েক মাস পর জানতে পারেন, ব্যাংকসহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন ছাপা ও পরীক্ষার টেন্ডার পায় আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। যেহেতু ট্রেজারার পরীক্ষা কমিটিতে থাকতেন, সেহেতু তাঁকে প্রশ্ন্ন ছাপার বিভিন্ন কাজে নেওয়া হতো। আশুলিয়ার আহছানিয়া প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস নামের ছাপাখানায় যেতেন দেলোয়ার। সেখানে সুযোগ বুঝে প্রশ্ন সরাতেন।

জিজ্ঞাসাবাদে রবিউল জানায়, সে আহছানিয়া প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্সের কাটিং ম্যান। আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের দেলোয়ার হোসেনের নিকট তিনি তার আঙুলের আঁচিল দূর করতে ওষুধ চেয়েছিলেন। দেলোয়ার তাকে ডেকে পাঠায় ফোন করে এরপর কামারপাড়ায় রয়েল ও পারভেজের সাথে তার পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর পাঁচটি ব্যাংকের পরীক্ষার প্রশ্ন দেওয়ারও প্রস্তাব দেন তিনি। রয়েল সেই সময় পারভেজকে তার ছোট ভাই হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন এবং একটি চাকরির ব্যবস্থাও করে দেওয়ার জন্য বলেন। পরবর্তীতে চুক্তি অনুসারে গত ২রা নভেম্বর প্রশ্ন প্রিন্ট হওয়ার পর একটি সেট আড়ালে রাখেন রবিউল। এরপর গত ৪ নভেম্বর বিকেলের দিকে নবীনগর স্মৃতিসৌধের পাশে রয়েল ও পারভেজের হাতে প্রশ্নপত্র পৌছে দেন রবিউল।

এরপর ৬ নভেম্বর রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি ব্যাংকে অফিসার (ক্যাশ) পদের বিপরীতে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ১,৫১১ কর্মকর্তা নিয়োগ হলে সেখানে জালিয়াতির তথ্য পাওয়ার পর ইতিমধ্যেই পাঁচ ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ৮জনকে গ্রে’প্তার করতে সক্ষম হয় গোয়েন্দারা। এই ঘটনা সামনে আসার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেটার নিয়োগ বা’তিল করে দেয়। অপর ৮ জন আ/সা’মির মাঝে ৩ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানব’ন্দিও দিয়েছেন।

 

 

 

 

About

Check Also

এতদিন কিছু বলতে চাইনি, কিন্তু ‘র’ এজেন্ট বলায় আর চুপ থাকতে পারিননি: আসিফ মাহমুদ

জিআরডি এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সম্প্রতি একটি বিতর্কিত মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে নিজের প্রতিক্রিয়া …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *