শীর্ষেন্দু বিশ্বাস নামের পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী পায়রা নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণে করার জন্য দাবি করে একটি চিঠি লেখেন প্রধানমন্ত্রীর নিকট। শেষ পর্যন্ত সেই ব্রিজটি বাস্তবভাবে রূপ নিতে চলেছে। আবু বকর সিদ্দিক যিনি সেতু বিভাগের সচিব এবং সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি গতকাল (বুধবার) অর্থাৎ ২৯ সেপ্টেম্বর বিকেলের দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
সেতু বিভাগ থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পায়রা নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণ কাজের জন্য একটি প্রকল্পের ডিপিপি ২০২০ এর মার্চ মাসের দিকে একনেক সভায় পাস হয়। এই সেতুটির নির্মাণ কাজ আগামি ২০২৫ সালের মাঝে সমাপ্ত হবে বলে জানিয়েছে প্রকল্পের পরিচালক। সেতুটির প্রাথমিকভাবে যে নকশা করা হয়েছে সেটা অনুযায়ী, সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ১.৬৯০ কিমি। ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের নয়টি স্প্যান, উভয় প্রান্তে ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের দুটি স্প্যান এবং ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের ২৩ টি স্প্যান থাকবে। সেতুটি নির্মাণের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১,০৪২ কোটি টাকা।
জানা গেছে, শীর্ষেন্দুর মা শীলা রানী সমবায় অধিদপ্তর পটুয়াখালী কার্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর। বাবা বিশ্বজিৎ বিশ্বাস একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। চাকরির সুবাদে পটুয়াখালী শহরের মুকুল সিনেমা সড়কে ভাড়া বাসায় থাকে শীর্ষেন্দুর পরিবার। জেলা শহরে বসবাস করলেও তাদের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলার আওরাবুনিয়া ইউনিয়নের ছয়আনি গ্রামে।
২০১৬ সালে শীর্ষেন্দু পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। ওই বছর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিদ্যালয়ে গিয়ে সে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে চিঠিটি লেখে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানোর জন্য চিঠি সে মায়ের কাছে দেয়। তাঁর মা শীলা রানী চিঠিটি প্রধানমন্ত্রী বরাবর পোস্ট করেন।
পায়রা নদীর ওপর সেতুটি নির্মিত হলে মির্জাগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে পটুয়াখালী সদরে যাতায়াতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় কম লাগবে। এতে লেবুখালী ও পদ্মা সেতুর মাধ্যমে মির্জাগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে ঢাকার সরাসরি ও নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে।
২০১৬ সালের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শীর্ষেন্দু তিন পৃষ্ঠার সেই চিঠিতে যা লিখেছিল
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
সালাম ও শুভেচ্ছা নেবেন। আমি একজন সাধারণ নাগরিক। আমার নাম শীর্ষেন্দু বিশ্বাস। পিতা বিশ্বজিৎ বিশ্বাস, মা শীলা রানী। আমি পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির একজন নিয়মিত ছাত্র। আমার দাদু একজন বীর মুক্তিযো’দ্ধা। তাঁর নাম অবিনা’শ সন্নামত। আমার মা সরকারি চাকরি করেন। আমি আপনার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎবার্ষিকীতে আপনার পিতার শৈশবকাল নিয়ে রচনা লিখে তৃতীয় স্থান অধিকার করি। আমাদের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠিতে। আমাদের মির্জাগঞ্জ পায়রা নদী পার হয়ে যেতে হয়। এটি পটুয়াখালীর একটি উপজেলা। এ নদীতে প্র/চ’ণ্ড ঢেউ। মানুষ ভ’/য় পায়। কখনো নৌকা ডুবে যায়। কখনো কখনো ট্রলার ডুবে যায়।
আমার চেয়ে ছোট ভাইবোন তাদের মা-বাবাকে হারায়। তাই আমি চাই না কারও মা-বাবা চলে যান। আমি আমার মা-বাবাকে প্র/চ’ণ্ড ভালোবাসি। তাঁদের হা’রাতে চাই না। তাই আপনার কাছে একটাই অনুরোধ যে আপনি মির্জাগঞ্জ পায়রা নদীর ওপর ব্রিজের ব্যবস্থা করুন। তা যদি আপনি পারেন, তা হলে একটু আমাদের জন্য কষ্ট করে এই ব্রিজ তৈরি করার ব্যবস্থা করুন। আজ আর নয়। ইতি আপনার দেশের একজন সাধারণ নাগরিক।
—শীর্ষেন্দু বিশ্বাস।
২০১৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পায়রা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হবে বলে আশ্বস্থ করে শীর্ষেন্দুকে চিঠি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। চিঠির জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা লিখেছেন,
স্নেহের শীর্ষেন্দু,
আমার স্নেহাশীষ নিও। তোমার চিঠি পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। তুমি শুধু এ দেশের একজন সাধারণ নাগরিক নও বরং দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেওয়ার অগ্রজ সৈ’/নি’ক। আমি জানি, পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার পায়রা নদীটি অত্যন্ত খ’রস্রোতা। নিজের পিতামাতাসহ অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এই নদীকেন্দ্রিক তোমার নিরাপত্তা সচেতনতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি বুঝতে পারি তোমার বীর মুক্তিযো’দ্ধা দাদুর প্রভাব রয়েছে তোমার ওপর। মির্জাগঞ্জের পায়রা নদীতে একটি সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তোমাকে আশ্বস্ত করছি।
তোমার সার্বিক মঙ্গল কামনা করি। আমার দোয়া নিও। তোমার বাবা-মাসহ মুরুব্বিদের সালাম ও ছোটদের দোয়া দিও। অনেক অনেক আদর নিও।
—শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবি করা বেশিরভাগ দাবিগুলো বিবেচনার মাধ্যমে তিনি পূরন করার চেষ্টা করেন। পায়রা নদীর উপর একটি সেতু নির্মান হবে সেটা ঐ বিস্তীর্ন এলাকার মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি যেটা শেষ পর্যন্ত পূর্ন হতে চলেছে। পায়রা নদীর উপর সেতু নির্মিত হবে এটা শোনার পর সেখানকার মানুষেরা অনেক খুশি। অনেকে ঐ ছাত্রের প্রধানমন্ত্রীর নিকট চিঠি দেওয়ার জন্য অনেক প্রশংসা করেন। স্থানীয়রা জানান এই সেতু হলে দুই পারের মানুষের জীবনে গতিশীলতা আসবে, যার কারনে অর্থনৈতিকভাবে এখানকার মানুষ উন্নতি করতে পারবে।