গত ১৪ ফেব্রুয়ারী সারাবিশ্ব জুড়ে পালন করা হয় ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্তাইনস ডে। এবছর এমনই এক দিনে লালমনিরহাট জেলার পৌরসভা এলাকার কালীবাড়ি এলএসডি গোডাউনের পাশে একটি ময়লার স্তুপ থেকে ১ দিন বয়সী এক কন্যা নবজাতক শিশুকে জীবন্ত উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের প্রায় দুই সপ্তাহ পর অবশেষে উদঘাটিত হলো নবজাতকের পরিচয়। সেই সাথে জানা গেলো অপরাধীদের পরিচয়।
এ ঘটনায় নবজাতকের মা ইভা (১৭) নানী লুৎফা বেগম (ইভার মা) ও জৈবিক পিতা জয়নাল আবেদীন (৩০) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় লালমনিরহাট সদর থানায় এক প্রেস রিলিজের মাধ্যমে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহা আলম। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ-সার্কেল) মারুফা জামাল সদর থানার ওসি(তদন্ত) শহিদুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস রিলিজে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফা জামাল জানান, ১ দিন বয়সী নবজাতক কন্যা শিশুকে উদ্ধার করে লালমিনরহাট সদর হাসপাতালের শিশু নবজাতক ওয়ার্ডে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। এ বিষয়ে ঐ দিন উদ্ধারকারী এসআই মোঃ রফিকুল ইসলাম অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেন। লালমনিরহাট থানার মামলা নং-২৩ ধারা- ১৮৬০ সালের পেনাল কোডের ৩০৭/৩১৭।
তিনি বলেন, ‘নবজাতক শিশুটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় জেলার মানবিক পুলিশ সুপার, জনাব আবিদা সুলতানা (বিপিএম, পিপিএম) একাধিক সময়ে হাসপাতালে গিয়ে শিশুটির খোঁজ খবর নেন এবং তাঁর নির্দেশনায় নারী পুলিশ সদস্যরা শিশুটির নিরাপত্তাসহ মাতৃস্নেহে শিশুটির লালন পালন করতে থাকে। শিশুর চিকিৎসা শেষে শিশু কল্যাণ বোর্ড, লালমনিরহাট এর সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ২৩ ফেব্রুয়ারী নবজাতককে প্রয়োজনীয় পুলিশ এস্কর্টের মাধ্যমে ছোটমনি নিবাস রাজশাহীতে প্রেরণ করা হয়েছে। পরে একাধিক বিস্বস্ত সোর্সের মাধ্যমে উদ্ধার হওয়া সেই শিশুর মায়ের পরিচয় উৎঘাটন করতে সক্ষম হয় পুলিশ।’
পুলিশ জানায়, নবজাতকের মা ইভা (১৭) শহরের সাহেবপাড়া এলাকার বাসিন্দা। সে কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্রী। তার বড় বোনের স্বামীর সাথে অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং সম্পর্কের সুযোগে লম্পট দুলাভাই শারীরিক সম্পর্ক করেন এতে ইভা গর্ভবর্তী হয়। তার গর্ভবর্তী হওয়ার বিষয়টি দেরীতে বুঝতে পারায় একা একা তা ধামাচাপা দিয়ে রাখে। পরে ১৩ ফেব্রুয়ারি ২২ ইং অসুস্থ হলে মা বিষয়টি বুঝতে পেরে জন্ডিসের কারনে পেটে ব্যাথা বলে সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। পরদিন ভোরে সকলের অগোচরে হাসপাতালের বাথরুমে সন্তান প্রসব হয় এবং মা ইভা, নানী (ইভার মা), ও দুলাভাই হাসপাতালের কাউকে কিছু না বলে বাচ্চাসহ হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসে এবং বাচ্চাটিকে ফেলে যায়।
এ ঘটনায় নবজাতকের মা, নানী ও প্রাথমিকভাবে জ্ঞাত নবজাতকের জৈবিক পিতাকে শিশু উদ্ধার কারী এসআই রফিকুল ইসলামের করা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। দ্রুত বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হবে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, ময়লার স্তূপ বা ডাস্টবিনে নবজাতক উদ্ধারের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। গত কয়েক মাস ধরেই ক্রমাগত এমন বেশ কিছু ঘটনা প্রতক্ষ্য করছে দেশবাসী। লালমনিরহাটের ঘটনাটিতে নবজাতক শিশুকে সৌভাগ্যক্রমে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভবপর হলেও অনেকক্ষেত্রে তা হয়ে ওঠেনি।