দেশের সাধারন মানুষের একটি ধারনা রয়েছে সেটা হলো যে কোনো ধরনের সড়ক সংশ্লিষ্ট কাজে হয়ে থাকে বড় ধরনের পুকুর চুরি। কোনো সড়কের নির্মান কাজ সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত প্রায় সকল ধাপ বা স্তরেই চলে দূর্নীতি। কারন সড়ক অবকাঠামো খাতে বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় হয় সেখানে বরাদ্দকৃত টাকার একটি বড় অংশ চলে যায় সড়ক বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের পকেটে। যার মধ্যে রয়েছেন প্রকৌশলীরা। এবার মো. নজরুল ইসলাম যিনি সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলীর ব্যাংক হিসাবে বিপুল পরিমান অর্থের লেনদেনের প্রমান পাওয়া গেছে। সেই সাথে তার স্ত্রী শাহনাজ পারভীন ও ভাই তরিকুল ইসলামের নামেও অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) বিষয়টি তদন্ত করার পর ঐ অর্থের কোনো বৈধ উৎস খুঁজে পায়নি। নজরুল ইসলাম বর্তমানে বরিশালে সড়ক ও জনপথ অফিসে কর্মরত আছেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, নজরুল ইসলাম নিজ নামে ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই মার্কেন্টাইল ব্যাংকের বরিশাল শাখায় একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন। ২০২০ সালের ৫ জুলাই পর্যন্ত প্রায় তিন বছরে এই ব্যাংক হিসাবটিতে চার কোটি ৯৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা জমা পড়ে। পরে এই অর্থ নজরুল ইসলাম তুলে নেন। এভাবে তাঁর এক ব্যাংক হিসাবে ৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। হিসাবটি থেকে তুলে নেওয়া অর্থ কী করেছেন নজরুল ইসলাম—তার তথ্যও পরিষ্কার নয়।
দুদকের তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নজরুল ইসলামের ভাই মো. তরিকুল ইসলামের নামে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের বরিশালের একই শাখায় একটি হিসাব খোলা হয়। এই হিসাবটিতেও ২০২০ সালের ৭ জুলাই অর্থাৎ এক বছর চার মাসে ছয় কোটি এক লাখ টাকা লেনদেন হয়।
নজরুল ইসলামের স্ত্রী শাহনাজ পারভীন পেশায় গৃহিণী। তাঁর হিসাবেও ৭৫ লাখ টাকার এফডিআরসহ উল্লেখযোগ্য অর্থ লেনদেনের তথ্য পায় দুদক ও বিএফআইইউ। সেই সঙ্গে বরিশাল সদরে নজরুল ইসলামের নামে একটি বহুতল ভবন এবং স্ত্রীর নামে ৮.৩৫ শতাংশ জমি আছে। সরকারের এই দুটি তদন্ত সংস্থার অনুসন্ধানে নজরুল ইসলাম ও তাঁর পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের ব্যাংক হিসাবে মোট ২১ কোটি এক লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য উঠে আসে। কিন্তু অর্থ লেনদেনের কোনো বৈধ উৎসের সন্ধান পায়নি সংস্থাগুলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সওজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি তদন্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে। চলতি বছরের মার্চ মাসে নজরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রীর ব্যাংকে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্যসহ একটি প্রতিবেদন দুদকের হাতে আসে। এর পরই দুদক উপপরিচালক মাজেদুল ইসলাম ও উপপরিচালক এদিপ বিল্লাহর নেতৃত্বে একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়।
এছাড়া, নজরুল ইসলাম ২০১৮ সালের দিকে বরিশাল জেলা সদরের পূবালী ব্যাংক শাখায় অন্য আরও একটি হিসাব (সঞ্চয় হিসাব নম্বর ১১৯৪৮৬৪) খোলেন। তিনি সেখানে ১০ লক্ষ্য টাকা জমা করেন এবং সেটা পরবর্তীতে তার ভাইয়ের মাধ্যমে উত্তোলন করেন। মাজেদুল ইসলাম যিনি অনুসন্ধানী দলের প্রধান উপ-পরিচালক হিসেবে রয়েছেন তিনি এ বিষয়ে কোনো ধরনের কথা বলতে রাজি হননি।
ঐ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ বিষয়ে তিনি বলেন, দুদক তদন্ত করার পর একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে যেটা ইতোমধ্যে কমিশনে আনুষ্ঠানিকভাবে দাখিল করা হয়েছে। দুদক সূত্র আরও জানায়, নজরুল ইসলামকে দুদক থেকে দুইবার তলব করা হয় কিন্তু দুই বারই অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি বরিশাল থেকে ডাকযোগের মাধ্যমে লিখিত বক্তব্য পাঠান।