Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় চিকিৎসকেরা

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় চিকিৎসকেরা

বিএনপি সভানেত্রী খালেদা জিয়া হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় আছে কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই। গেল ১২ অক্টোবর ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করার পর তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা ভালোর দিকে গেলে গেল ৭ নভেম্বর তিনি তার বাসায় ফিরে যান। এরপর ৬ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর ফের ১৩ নভেম্বর তাকে আবার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলমান আছে ঐ একই হাসপাতালের সিসিইউতে আইসিইউ’র মতো করেই চিকিৎসা চলছে। বিএনপির পক্ষ থেকে পঞ্চম দফায় বিদেশে নেত্রীর উন্নত চিকিৎসা করানোর জন্য সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন জানালেও বর্তমান সময় পর্যন্ত (বুধবার দুপুর ১২টা) কোনো ইতিবাচক অগ্রগতি হয়নি।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য তার দলীয় নেতাকর্মী এবং যারা তার চিকিৎসার সাথে যুক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন তথ্য জানা গিয়েছে। উঠানামা করছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক প্যারামিটারগুলো। বেগম জিয়ার ‘মাল্টিফাংশনাল’ রোগ থাকার কারণে হাসপাতাল হিসেবে এভার কেয়ারের সেবাও খুবই সীমিত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। দেশের একটি সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, ২০১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর হতে তার অসুস্থতা এক কথায় বেড়েই চলেছে। গেল ৭ নভেম্বর তাকে পূনরায় হাসপাতালে নেওয়া হলেও ব্যপকভাবে কোনো উন্নতি দেখা যায়নি। বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ডাকা হলেও তারা আগ্রহ নিয়ে রোগী দেখার সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কার্যক্রমের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যুক্ত ‘এক্সপার্টরা’ বলছেন, এভার কেয়ার হাসপাতালে মাল্টি ফাংশনাল চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় বাইরের হাসপাতালগুলো থেকে চিকিৎসক ডাকা হয়। এসব চিকিৎসকেরা আগ্রহের সঙ্গে সাড়া দিলেও সামনাসামনি অসুস্থ খালেদা জিয়াকে পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে’ নানা দিক থেকে পরিস্থিতির শিকার হন। যে কারণে স্বাস্থ্যগত মতামত দিলেও চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না তারা।

খালেদা জিয়া কা’রাগারে থাকার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল (বিএসএমএমইউ) একটি চিকিৎসক বোর্ড গঠন করেছিল। ওই বোর্ডের প্রধান ছিল অধ্যাপক ডা. জিলন মিয়া সরকার। তিনি খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘উনার বাত, ডায়বেটিস রোগ তো অত্যন্ত পুরনো। তিনি হাইপ্রেশারের রোগী, বয়সও হয়েছে অনেক। তার হাইকেয়ার অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট দরকার।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বোর্ডের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘বেগম জিয়ার বাতের সমস্যাটি অনেক বড়। এক-দেড় বছর আগেও যখন চিকিৎসা করানো হয়, তখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এ ক্ষেত্রে উন্নতমানের ড্রাগস দিতে হয়, ভালো কেয়ার লাগে, ভালো সেন্টার লাগে। ভ্যাকসিন দিয়ে এই হাইড্রাগস নিতে হয়। উনার এই রোগটি কখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, আমরা একই মত দিয়েছি সবসময় সময়। আমরা বলেছি, তার ডায়াবেটিস, রিউম্যাটোলজি, হাই প্রেশার সমস্যা রয়েছে। তার রিউম্যাটোলজি অ্যাগ্রিসেভ ফর্মে আছে, এ জন্য অ্যাগ্রেসিভ ট্রিটমেন্ট দরকার।’

এভার কেয়ারের চিকিৎসক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ জনের একটি বিশেষ মেডিক্যাল টিম খালেদা জিয়ার ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থাপনা করলেও পুরো কার্যক্রম দিনরাত সুপারভাইজ করছেন ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. আল মামুন মাঝে মাঝে আসলেও পুরো চিকিৎসা প্রক্রিয়াটি মোটাদাগে ‘সিদ্ধান্তহীন’ অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে খালেদা জিয়ার পরিবার, ভাই-বোন ও তার বড়পুত্র তারেক রহমানের পক্ষ থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে চিকিৎসকদের ‘সিদ্ধান্তগ্রহণে’ সুনির্দিষ্ট করে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে না। ‘পেশেন্ট’ হিসেবে খালেদা জিয়ার ‘অবস্থানগত স্পর্শকাতরতার’ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে ‘চিকিৎসক’ সং’কট। পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে অনেকটাই, ‘এ বলছে ওকে, ও বলছে একে’।

বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘হাসপাতালে ম্যাডামের পরিবারের সদস্যরা নিয়মিত দেখভাল করতে যান, খোঁজ খবর নেন। কিন্তু কে কখন যান সেটা আমি নির্দিষ্ট করে বলতে পারবো না। কারণ আমি হাসপাতালে নেই।’

সংশ্লিষ্ট একজন জানান, বেগম জিয়ার শরীরে বর্তমানে পেইন কিলার কাজ করছে না। উন্নত চিকিৎসা অব্যাহত রাখতে সিসিইউতেই আইসিইউ’র সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। বর্তমানে ঢাকার চিকিৎসকদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের যৌথ মতামতের ভিত্তিতে চিকিৎসা চলছে।

বুধবার (১৭ নভেম্বর) সকালে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমার কাছে ম্যাডামের বিষয়ে কোনও কিছু জানতে চাইবেন না। দলের মহাসচিবের কাছে উত্তর খোঁজেন। আমি চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজ ছাড়া পত্র-পত্রিকায় বিবৃতি, বক্তব্য দিতে পারবো না। আমার কাজ ম্যাডামের চিকিৎসা করা।’

খালেদা জিয়ার চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তহীনতার পরিস্থিতি হতে উত্তরণের সব থেকে কার্যকর উপায় হলো খুব অল্প সময়ের মধ্যে মাল্টি ফাংশনাল বা বহুমুখী চিকিৎসাযোগ্য উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্র। দেশের বাইরে ছাড়া এই ধরনের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয় যেখানে বিশেষজ্ঞ ও বহুমুখী চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে।

আজ (বুধবার) সকালের দিকে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের পক্ষে শওকত মাহমুদ ও ড. এ জেড এম জাহিদ হোসেন নামের দুজন সাংবাদিক বলেন, খালেদা জিয়ার পরিবার অনেকবার চেষ্টা করেছে তাকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বিদেশে পাঠাবার যে বিষয়ে সরকারের নিকট আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করা সত্ত্বেও সরকার মানবিক কোনো আচরণ দেখাচ্ছে না। চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়াকে বাইরে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য কিন্তু সেটা নিয়ে বারবার সরকারের নিকট আবেদন করা হলেও যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সরকার কোনো সাড়া দিচ্ছে না। সরকার কর্নপাত করছে না। ”

 

About

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *