Thursday , September 19 2024
Breaking News
Home / Countrywide / কর ফাঁকির আশ্রয় না নিয়েও আয়কর কম দেওয়ার উপায়

কর ফাঁকির আশ্রয় না নিয়েও আয়কর কম দেওয়ার উপায়

নভেম্বর মাস হলো আয়কর রিটার্ন দাখিলের মাস। সময় থাকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত, তাই শেষের দিকে গিয়ে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার জন্য কোনো ধরনের তাড়াহুড়ো যাতে করা না লাগে সেটা থেকে বাঁচতে এখনই প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। প্রয়োজনীয় সকল ধরনের কাগজপত্র সংগ্রহ করে নিতে হবে। এ বছর অন্য বছরগুলোর মতো হবে না কোনো কর মেলা। করদাতাদের যেতে হবে তাদের নিজ নিজ এলাকার কর অফিসে এবং সেখানে সকল ধরনের আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। সেখানে সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা পাবেন আয়কর প্রদানকারীরা। শেষ মাসে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য ব্যক্তিশ্রেণির যারা করদাতা তাদের জন্য আয়কর আইনজীবী মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন।

সর্বোপরি, নিম্ন আয়ের লোকেরা আয়কর কমানোর উপায় খুঁজে থাকেন। চাকরিজীবী করদাতারা উৎসে আয়কর কর্তন করেন। এক্ষেত্রে তারা সঠিক খাতে বিনিয়োগ করলে, অন্য কোনো আয় না থাকলে উৎসে ট্যাক্স কর্তনের টাকা দিয়ে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া সম্ভব।

এ ক্ষেত্রে আপনাকে সঠিক পরিকল্পনা করে বিনিয়োগ করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় সঠিক ধারণা না থাকার পরিপ্রেক্ষিতে বেশি আয়কর দিতে হচ্ছে। যেমন অনেকে মনে করেন, জমি বা ফ্ল্যাট, স্থায়ী আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট) বা আয়কর আইনে অনুমোদন খাত ছাড়া অন্য খাতে বিনিয়োগ করলে আয়কর রেয়াত পাওয়া যাবে না। আবার অনেকে মনে করেন, পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র কিনেছেন প্রথম বছর আয়কর রেয়াত গ্রহণ করেছেন, পরের বছর আর কোনো বিনিয়োগ করেননি। এ ক্ষেত্রে পরের বছর বেশি আয়কর আসবে। সঞ্চয়পত্র যে বছর ক্রয় করা হবে, সে বছর শুধু আয়কর রেয়াত পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ মুসলিম এবং ধর্মপরায়ণ হিসেবে অনেকেই যাকাত দেন। এ ক্ষেত্রে যদি সরকারি তহবিলে যাকাত দেন, তবেই আয়কর রেয়াত পাওয়া যাবে।

ডিপোজিট পেনশন স্কিম বা ডিপিএস ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত রেয়াত পাওয়া যায়, এর বেশি হলে পাওয়া যায় না। এ বছর ১ জুলাই ২০২০ থেকে জুন ২০২১ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যাঁরা অনুমোদিত খাতে বিনিয়োগ করেছেন, শুধু তাঁরাই এ বছর বিনিয়োগের ওপর রেয়াত পাবেন। যাঁরা করেননি, এখন থেকে পরিকল্পনা করুন যাতে আগামী বছর থেকে বিনিয়োগের সম্পূর্ণ সুবিধা ভোগ করতে পারেন। বিনিয়োগ-সংক্রান্ত বিষয়ে নিচের বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে এবং যথাযথভাবে তা প্রয়োগ করতে হবে।

বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সীমা হবে করযোগ্য মোট আয়ের (কর অব্যাহতি প্রাপ্ত বা হ্রাসকৃত করহারের আয় ব্যতীত) ২৫ শতাংশ বা প্রকৃত বিনিয়োগ অথবা ১ কোটি টাকা, এই তিনটির মধ্যে যেটি কম। রেয়াতের পরিমাণ নির্ধারিত হবে মোট আয় ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৫ শতাংশ হারে এবং ১৫ লাখ টাকার অধিক ১০ শতাংশ হারে।
বিনিয়োগ বা দানের অনুমোদিত খাতগুলো-

বিনিয়োগের খাত
একজন করদাতার বিনিয়োগ ও দানের সম্ভাব্য খাতের তালিকা-
১. জীবনবিমার প্রিমিয়াম;

২. সরকারি কর্মকর্তার প্রভিডেন্ট ফান্ডে চাঁদা;

৩. স্বীকৃত ভবিষ্যৎ তহবিলে নিয়োগকর্তা ও কর্মকর্তার চাঁদা;

৪. কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠী বিমা তহবিলে চাঁদা;

৫. সুপার অ্যানুয়েশন ফান্ড প্রদত্ত চাঁদা;

৬. যেকোনো তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপোজিট পেনশন স্কিমে বার্ষিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ;

৭. সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে বিনিয়োগ;

৮. বাংলাদেশের স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, স্টক, মিউচুয়াল ফান্ড বা ডিবেঞ্চারে বিনিয়োগ এবং

৯. বাংলাদেশ সরকার ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ।

কোথায় দান করলে রেয়াত
১. জাতির জনকের স্মৃতি রক্ষার্থে নিয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে অনুদান;

২. জাকাত তহবিলে দান;

৩. জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত কোনো দাতব্য হাসপাতালে দান;

৪. প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানে দান;

৫. মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রদত্ত দান;

৬. আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কে দান;

৭. আইসিডিডিআরবিতে প্রদত্ত দান;

৮. সিআরপি, সাভারে প্রদত্ত দান;

৯. সরকার কর্তৃক অনুমোদিত জনকল্যাণমূলক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দান;

১০. এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলাদেশে দান;

১১. ঢাকা আহসানিয়া মিশন ক্যানসার হাসপাতালে দান এবং

১২. মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে নিয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের কোনো প্রতিষ্ঠানে অনুদান।

বিনিয়োগ বা দানের প্রমাণপত্র রিটার্নের সঙ্গে দাখিল করতে হবে।

লিখেছেন মো. জাহাঙ্গীর আলম, আয়কর আইনজীবী, নির্বাহী পরিচালক, গোল্ডেন বাংলাদেশ

উল্লেখ্য, প্রত্যেক নাগরিকের দেশের সরকারের কাছ থেকে কিছু সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু সেসব সুযোগ-সুবিধার খরচের কথা কি আমরা ভাবি বা খরচ কোথা থেকে আসে? সাধারণ মানুষ সরকারকে যে ট্যাক্স দিয়ে থাকে। এমনকি প্রতিটি নাগরিকের রাষ্ট্র ও জীবন রক্ষাও এই করের টাকার ওপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ যতটা সঠিকভাবে ট্যাক্স দেওয়া হয়, ততটা সুযোগ সুবিধা যথাক্রমে বেশি পাওয়া যায়।

অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, আমরা জানি যে সরকারী আয় (জিডিপি) মূলত দেশীয় অর্থায়ন, বিদেশী বিনিয়োগ, নিট রপ্তানি, বৈদেশিক অনুদান এবং ঋণ এবং কর রাজস্ব থেকে আসে। তারপর এই টাকা-পয়সা, যন্ত্রপাতি বা মালামাল দিয়ে সরকার তার নাগরিকদের স্বার্থে স্কুল, কলেজ, হাসপাতালসহ অনেক মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস তৈরি করে। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই বাংলাদেশের অর্থনীতি ভয়াবহ সংকটে রয়েছ বিশ্বব্যাপী চলমান পরিস্থিতির কারনে। যার কারণে চ্যালেঞ্জগুলি আরও বেড়েছে। বাজেটে কর প্রস্তাবগুলোয় রয়েছে বিশ্বাস তৈরি, নিশ্চিততা আনয়ন, বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং মামলা-মোকদ্দমা কমানোর দিকে নির্দেশিত।

About

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *