বাংলাদেশের শোবিজ অঙ্গনে রপরিচিত চেনা মুখ শাকিল খান। তিনি প্রায় ১০০টির বেশি ঢাকাই সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত বেশ কয়েকটি দর্শক নন্দিত জনপ্রিয় সিনেমা রয়েছে। বর্তমনা সময়ে তিনি সিনেমা অঙ্গনের বাইরে রয়েছেন। গতকাল তার জন্মদিন পালিত হয়েছে। এই বিশেষ দিন উপলক্ষ্যে বেশ কিছু কথোপকথন হলো তার সাথে।
ঝোঁকের বশেই চলচ্চিত্রে আসেন শাকিল খান। ক্যারিয়ারে প্রথম ছবি ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’–এই সাফল্যের মুখ দেখেন। সিনেমাটি মুক্তির পর একসঙ্গে ১৭টি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হন। ‘পাহারাদার’, ‘বিয়ের ফুল’, ‘নারীর মন’, ‘কষ্ট’র মতো অনেক জনপ্রিয় ছবি করার পরও হঠাৎ অভিনয় থেকে দূরে সরে যান শাকিল খান। জন্মদিন দিনকে ঘিরে এই নায়কের সঙ্গে ক্যারিয়ার ও বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা হলো।
শুভ জন্মদিন। কেমন আছেন?
ধন্যবাদ। ভালো আছি।
দিনটি নিয়ে কার বেশি আগ্রহ?
শৈশবে জন্মদিন পালনের চল ছিল না। এখনো আগ্রহ পাই না। আমার এক মেয়ে এবং দুই ছেলে আছে, তারাই কেক নিয়ে আসে, এটা-সেটা করে, একসঙ্গে খাওয়া হয়, এ-ই। এভাবেই দিনটা চলে যায়।
আপনার বিষয়ে অনেকে বলেন, এলেন, দেখলেন, জয় করলেন…
এটা আসলে ঠিক না। সেই সময়ে মান্না, রুবেল ভাই, ওমর সানী, রিয়াজ—সবার কিন্তু রমরমা। এর মধ্যে অনেকের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আমাকে এগোতে হয়েছে। এলাম আর জয় করলাম, কথাটা মোটেও আমার সঙ্গে যায় না। সেই সময় প্রতিমুহূর্তে চিন্তা করতে হতো কোন সিনেমাটি দর্শক কীভাবে নেবেন। অনেক সিনেমা আশানুরূপ ব্যবসা করেনি। অনেক সময় মানসিকভাবেও ভেঙে পড়তে হয়েছে। তার পরও সংগ্রাম চালিয়েছি।
কবে বুঝতে পারলেন মানুষ আপনাকে চিনতে পারছে?
ভারতের ‘দিল’ সিনেমার রিমেক ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’ মুক্তির পরেই দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে। আমাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। আমার জীবনে মিরাকল ঘটেছিল। একসঙ্গে ১৭টি সিনেমায় চুক্তি করেছিলাম। অভিনেতা হব, সেটা আগে কখনোই ভাবিনি। অথচ এই পরিচয়ই আমাকে জড়িয়ে ধরল।
যখন বুঝতে পারলেন দর্শক চিনতে পারছেন, তখন ব্যক্তিজীবনে পরিবর্তন এসেছিল?
রাস্তায় বের হলেই মানুষ ঘিরে ধরবে, চিনবে, অটোগ্রাফ নেবে—এটা কখনোই ভাবিনি। ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’ মুক্তির পর সাধারণ শাকিল খানকে অন্যভাবে চলতে হতো। প্রচুর কেনাকাটা করতাম। নায়ক হলে যা হয় আরকি। সেভাবে চলতে হতো। কিন্তু বাসায়, বন্ধুদের কাছে সাধারণ শাকিল খান হয়েই থাকতাম।
কিন্তু পরে তো শুটিং থেকে একেবারেই নিজেকে গুটিয়ে নিলেন?
বাবা বলতেন, ‘তুমি যা-ই করো, টাকাপয়সা পাবে, কিন্তু এমন কিছু করো না, যা সামাজিকভাবে তোমাকে সারা জীবন জ্বালাবে, সন্তানেরা বড় হলে লজ্জিত হবে। মানুষের চোখে খারাপ পাত্র হয়ো না, তাহলে তোমাকে মানুষ খারাপ চোখে দেখবে, অবহেলা করবে।’ সেই সময় অ/শ্লী/ল সিনেমায় ছেয়ে যাচ্ছিল। নিজের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সরে এসেছি। আমিসহ সেই সময় আরও অনেক নায়ক-নায়িকা চলচ্চিত্র কমিয়ে দিয়েছিলেন। অনেকে সিনেমাই করেননি। আমরা সবাই যদি এক হয়ে থেকে যেতাম, তাহলে চলচ্চিত্রের বেহাল দেখতে হতো না। ভারতের মতো আমরাও এগিয়ে যেতাম। ভালো অভিনেতাদের শূন্যতা আর অশ্লীলতা বাড়ায় এফডিসি আজ ধ্বংসের শেষ প্রান্তে।
এফডিসির এই বেহালের জন্য কারা দায়ী?
ডিরেক্টর, প্রযোজক, অভিনয়শিল্পী—সবাই দায়ী। কেউ কা/ট/পি/স করেছেন, কেউ জেনেবুঝে অ/শ্লী/ল সিনেমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। সবাই নিজেদের স্বার্থ দেখেছেন। তাঁরা সবাই মিলে এফডিসিকে প্রমোদশালা বানিয়েছিলেন। তাঁরা এখন বড় বড় কথা বলেন। তাঁরাই ধ্বংসের পেছনের মূল হোতা। অনেক অভিনেতা, যাঁরা দেশের চলচ্চিত্রে অনেক অবদান রেখেছেন, তাঁরাও এই খারাপ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
লাইট–ক্যামেরা–অ্যাকশন কতটা মিস করেন? কোনো আফসোস আছে?
আমি লাইট–ক্যামেরার সামনে থেকেই শাকিল খান হয়েছি। সেই জায়গার প্রতি অনেক ভালোবাসা এখনো আছে।
চাইলে তো অভিনয় চালিয়ে যেতে পারতেন?
আমি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত টিকে থাকার চেষ্টা করেছি। সব সময় ভেবেছি, কাজ করে যাব। সেই সময় যত অ/শ্লী/ল সিনেমার প্রস্তাব পেয়েছি, তাদের দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছি। অনেককে বলেছি, আমার সামনে যেন আর কোনো দিন না দেখি। এভাবে একসময় পরিস্থিতি আমার প্রতিকূলে চলে যায়। কিন্তু এফডিসিতে যাদের পেশির জোর বেশি, সেই চক্রের কাছেই হারতে হয়েছে। এটাই আফসোস, হয়তো লেগে থাকতে পারতাম।
এখন কী করছেন?
সিনেমা ছাড়ার পরেই ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছি। ব্যবসা নিয়েই আমার ব্যস্ততা। পরিবারকে সময় দিই। সিনেমা দেখি, বই পড়ি, ঘোরাঘুরি করি। আমার এলাকার মানুষের পাশের থাকার চেষ্টা করি, এভাবেই সময় চলে যায়।
বাংলাদেশের বিনোদন মাধ্যম এক অচল অবস্থায় পতিত হয়েছে বর্তমান সময়ে। এবং সিনেমা প্রেমীরা হল বিপুখ হয়ে পড়েছে। মূলত ভাল মানের সিনেমার অভাবে এমন সংকট দেখা দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের আওনেক নামি-দামি তরাকারাও এই মাধ্যম ত্যাগ করে অনেকেই অন্যান্য নানা ধরনের পেশায় যুক্ত হয়েছে। অবশ্যে তরুন প্রজন্মের অনেকেই এই মাধ্যমকে দর্শক মুখী করে গড়ে তুলতে বিশেষ ভাবে কাজ করছে। এমনকি বাংলাদেশ সরকারও এই খাতের দূরঅবস্থা কাটিয়ে তুলেতে প্রদান করছে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা।