বরগুনা-২ আসনের আলোচিত এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমন। ব্যক্তিগত জীবনে বহুবার সংবাদ মাধ্যমের শিরোনামে এসেছেন তিনি। আর এরই জের ধরে সম্প্রতি এবার সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে নারী এমপির ওপর নজরদারির অভিযোগে ফের আলোচনায় রয়েছেন এই সংসদ সদস্য। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরগুনার পাথরঘাটায় সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নাদিরা সুলতানার বাসভবনের পাশে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে বেশকিছু দিন ধরে নজরদারি চালিয়ে আসার অভিযোগ উঠেছে এমপি শওকত হাচানুর রহমান রিমনের বিরুদ্ধে।
সাংসদ নিজ উদ্যোগে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কলেজ রোড সড়কে এমপি নাদিরা সুলতানা সবুরের বাড়ির পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে একটি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে তাদের ওপর নজরদারি করছেন এমপি রিমন, এমন অভিযোগ নাদিরা সুলতানা ও তার পরিবারের। এ ঘটনায় পাথরঘাটা থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। পাথরঘাটা থানায় সোমবার সংসদ সদস্যের পক্ষে ওই জিডি করেছেন সেলিম খলিফা। সেলিম এমপি নাদিরার মালিকানাধীন মধুমতি টাইলস কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পাথরঘাটা ডিগ্রি কলেজের প্রধান ফটকের উত্তর দিকের বিদ্যুতের খুঁটিতে সাদা একটি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। ওই ক্যামেরার সামনে সড়কের দক্ষিণ দিকে এমপি নাদিরার বাড়ি। এমপি নাদিরার স্বামী প্রয়াত এমপি গোলাম সবুর টুলু ২০০২ সালে এ বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন। এদিকে শওকত হাচানুর রহমান রিমন কলেজের বিপরীতে দুলাল কোম্পানির মালিকানাধীন একটি ভবনের তৃতীয় তলায় ভাড়া থাকেন। রিমনের ভাড়া বাসা থেকে এমপি নাদিরার বাসভবনের দূরত্ব মাত্র ৩০ ফুট।
এ বিষয়ে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য নাদিরা সুলতানা সবুরের কন্যা বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফারজানা সবুর রুমকী বলেন, তাদের বাড়ির পাশে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ ঘনিষ্ঠজনদের আসা-যাওয়া মনিটরিং করছেন সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন।
সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে তাদের বাসায় কখন কে আসছেন তা সঙ্গে সঙ্গেই দেখে ফেলছেন সাংসদ শওকত হাচানুর রহমান রিমন ও তার লোকজন। অনেকেই এই সিসি ক্যামেরার কথা শুনে তাদের বাসায় আসতে বিব্রত বোধ করছেন। অনেকেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার সংশয় প্রকাশ করছেন। এটি তাদের রাজনৈতিকভাবে জনবিচ্ছিন্ন করার একটি ঘৃণ্য অপকৌশল বলে মনে করছেন তারা। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে পারিবারিকভাবে তারা নিজেরাও চরম সংকোচের মধ্যে রয়েছেন।
পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাবির হোসেন বলেন, এই সিসি ক্যামেরার কারণে সংরক্ষিত আসনের নারী সংসদ সদস্য নাদিরা সুলতানার কর্মী ও ঘনিষ্ঠজনদের সুরক্ষা হুমকিতে পড়েছে। পাশাপাশি তার প্রাইভেসিও নষ্ট হচ্ছে। তিনি অত্যন্ত কর্মীবান্ধব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। সিসি ক্যামেরা সরিয়ে ফেলার জন্য সংসদ সদস্য রিমনের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
সংরক্ষিত আসনের নারী সংসদ সদস্য নাদিরা সুলতানা বলেন, আমার বাড়ির পাশে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে মনিটরিং করার ঘটনায় আমি বিব্রত। এ ঘটনায় আমি পুলিশে অভিযোগ করেছি। আমি শুধু এটুকুই জানতে চাই, আমার বাসার সামনে কেন সিসি ক্যামেরা বাসানো হয়েছে?
অন্যদিকে এ বিষয়ে বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন বলেন, আমার বাসার সামনে রাস্তার দুই দিকে দুটি সিসিটিভি ক্যামেরা বসাইছি। কারো বাসার দিকে আমি ক্যামেরা বসাইনি। আমি নিজের নিরাপত্তার জন্য রাস্তা মনিটর করতে ওই দুটি ক্যামেরা দিয়েছি। আপনি চাইলে আমি আপনাকে মনিটরে দেখাব। এটা ¯্রফে তাদের মনের ভ্রান্তি, আমার সঙ্গে এটা গায়ে পড়ে ঝগড়ার মতো আচরণ ছাড়া আর কিছু না।
বামনা-পাথরঘাটা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমেদ সরকার বলেন, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য নাদিরা সুলতানার বাড়ির পাশের সিসি ক্যামেরা সরিয়ে নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যেই আমরা কাজ শুরু করেছি।
এদিকে সম্প্রতি কিছুদিন আগেও এই সংসদ সদস্যের হাতে সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতা ও মাছ ব্যবসায়ী অপমানিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এখনো গোটা এলাকাজুড়ে বইছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তবে এতটুকুই নয়, দলীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে অশুভ-আচরণ ও মারধরের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।