Thursday , December 12 2024
Breaking News
Home / Countrywide / একাকী গাজীপুর পরিচালনা করা জাহাঙ্গীর এবার নিজেই হয়ে পড়লেন একা

একাকী গাজীপুর পরিচালনা করা জাহাঙ্গীর এবার নিজেই হয়ে পড়লেন একা

কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার শক্তিতে এবং ছত্রছায়ায় বর্তমান সময়কার আলোচিত এবং আওয়ামীলীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা জাহাঙ্গীর আলম একাই গাজীপুর চালাতেন। জাহাঙ্গীর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তার আধিপাত্য আরো অনেক গুনে বেড়ে যায় তাছাড়া তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পদ পেয়ে আরো আশির্বাদপুষ্ট হন। কিন্তু বছর তিন অতিবাহিত হলেও তিনি সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়রের কোনো নির্বাচনে অংশ নেননি। দুই বছর আগে দলের মহানগর কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে।

সিটি করপোরেশন আইনে প্রথম বৈঠকের ৩০ দিনের মধ্যে প্যানেল মেয়র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আইন রয়েছে। কিন্তু বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর অনেকবার অনুরোধ করা সত্বেও জাহাঙ্গীর সেটা পরোয়া করেননি। ফলে জাহাঙ্গীরকে যদি কোনো কারনে মেয়র পদ হতে সরিয়ে দেওয়া হয় তাহলে ভারপ্রাপ্ত মেয়র কে হবেন তা নিয়ে জটিলতা দেখা দেবে।

গেল শুক্রবার জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। জাতির জনককে কটূক্তি করা এবং সেই সাথে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করার জন্য তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। তার মেয়র পদ হারানোর বিষয়টিও সামনে আসতে পারে। এমতাবস্থায় গাজীপুরে জাহাঙ্গীর আলমের সব আধিপত্য নিমিষেই বিলীন হয়ে যাবে। আজমত উল্লাহ খান, আ ক ম মোজাম্মেল হক, জাহিদ আহসান রাসেলের মতো নেতারা দল পুনর্গঠনে কাজ করছেন।

গাজীপুর থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক শরিফ আহমেদ শামীম জানান, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনে মেয়র ও কাউন্সিলররা দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম সভার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্যানেল গঠন করার বিধান রয়েছে। তিন সদস্যের প্যানেলে দুজন সাধারণ কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য থেকে একজন নির্বাচিত হবেন। অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে মেয়র দায়িত্ব পালন করতে না পারলে বা তাঁর অনুপস্থিতিতে মেয়রের প্যানেল থেকে সিনিয়র একজন মেয়রের দায়িত্ব পালন করবেন। ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্যানেল মেয়র নির্বাচন করতে না পারা আইনের ল’ঙ্ঘ/ন।

কাউন্সিলর আসাদুর রহমান বলেন, ‘দল থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে বহিষ্কারের পর আমরা রবিবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও সচিবকে বিষয়টি অবহিত করে দ্রুত প্যানেল মেয়র নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে অনুরোধ জানিয়েছি। তাঁরা বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।’

৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মামুন মণ্ডল বলেন, ‘আমরা সিটি করপোরেশনের সভায় বারবার প্যানেল মেয়র নির্বাচনের জন্য মেয়রকে চাপ দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আইন ল’ঙ্ঘ/ন করে প্যানেল মেয়র নির্বাচন থেকে বিরত থেকেছেন।’

৪৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম বলেন, তিনিসহ আরো তিন-চারজন কাউন্সিলর প্যানেল মেয়র প্রার্থী হয়ে প্রচারণা শুরু করেছিলেন। সিটি করপোরেশনের প্রথম সভায় তাঁরা বিষয়টি উপস্থাপনও করেছিলেন। কিন্তু মেয়র জাহাঙ্গীর পরের সভায় এ বিষয়ে আলোচনার কথা বলে নির্ধারিত সময়ে আর সভা ডাকেননি। পরবর্তী সময়ে যিনিই প্যানেল মেয়র নির্বাচনের কথা বলেছেন তিনিই মেয়রের চক্ষুশূল হয়েছেন। করপোরেশনের সভা হলেও কাউন্সিলররা বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পেতেন না। তিনি নিজে কথা বলে তড়িঘড়ি সভা শেষ করতেন।

জানতে চাইলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম জানান, প্যানেল মেয়র না থাকায় পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ই সিদ্ধান্ত নেবে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাননি বলে জানান তিনি।

গতকাল করপোরেশনের অফিসে আসেননি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তিনি সারা দিন বাসায় ছিলেন বলে জানা গেছে। মহানগর কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আতাউল্লাহ ও মতিউর রহমান

জাহাঙ্গীর আলমকে বহিষ্কারের পর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মণ্ডল ও মতিউর রহমান। গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেলের অনুসারীরা চাইছেন মতিউর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করতে। মতিউর প্রয়াত সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টারের ছোট ভাই।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদ শূন্য হলে তিন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু বিভিন্ন সময় স্থানীয় বাস্তবতার কারণে দুই বা তিন নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককেও দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে গতকাল পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম গনমাধ্যমকে বলেন, সাধারণত এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকই ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। অনেক সময় কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকেও সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। তবে গাজীপুরের বিষয়ে এখনো কেন্দ্রীয় কমিটি কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।

মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি

আওয়ামী লীগের জেলা ও মহানগর পর্যায়ের কমিটির মেয়াদ তিন বছর। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন হয় ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর। সেই কমিটিতে টঙ্গী পৌরসভার সাবেক মেয়র আজমত উল্লাহ খান সভাপতি ও জাহাঙ্গীর আলম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালের ১৮ অক্টোবর গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। দুই বছরের বেশি সময় ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই সংগঠন পরিচালিত হচ্ছে।

জাহাঙ্গীর এখন একা

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান, গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল গাজীপুরের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকলেও এত দিন যেন জাহাঙ্গীরের আড়ালে পড়ে গিয়েছিলেন। জাহাঙ্গীর জামানা শেষ হওয়ার ইঙ্গিত এখন স্পষ্ট। ফলে দলেও চলছে নতুন হিসাব-নিকাশ।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৫টি জাহিদ আহসান রাসেলের নির্বাচনী এলাকায় এবং ১৮টি আ ক ম মোজাম্মেল হকের নির্বাচনী এলাকার মধ্যে পড়েছে। জাহাঙ্গীর আলমকে বহিষ্কারের পর এই তিন নেতা সমঝোতার মধ্য দিয়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগকে পরিচালনা করতে চাইছেন। তাঁরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখছেন। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা এমনটা জানিয়েছেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলেন, ২০১৩ সালে আজমত উল্লাহ খানকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সমর্থন দেয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু তিনি বিএনপির প্রার্থী আব্দুল মান্নানের কাছে পরাজিত হন। এর পেছনে জাহাঙ্গীর আলমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে মনে করেন আজমত উল্লাহর কর্মী-সমর্থকরা। সেই নির্বাচনের পর থেকে দুই নেতার বিরো’ধ ছিল। ২০১৮ সালে জাহাঙ্গীর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর জাহিদ আহসান রাসেলের অনুসারীদের সঙ্গেও এক ধরনের দূরত্ব বাড়ে। দলীয় নেতাদের মধ্যে এসব মেরুকরণে কোনো পক্ষ নেননি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তবে এবার জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কারের পর সব পক্ষই খুশি।

আজমত উল্লাহ খান যিনি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে রয়েছেন তিনি বলেন, জাহাঙ্গীর নিজের কিছু লোক নিয়ে সব সময় চলতেন। দলের কোনো ধরনের নেতাকর্মীরা তার সাথে তেমন থাকতেন না। তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে এখন সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো বেশি গতিশীল হবে। আওয়ামী লীগের যারা পুরনো, নিবেদিতপ্রাণ ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মী যারা রয়েছেন তারাই এখন ঐক্যবদ্ধভাবে দলকে নেতৃত্ব দেবেন।

মতিউর রহমান যিনি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তিনি বর্তমান সময়কার যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের চাচা। মতিউর রহমান দেশের একটি অন্য্তম জনপ্রিয় দৈনিককে বলেন, জাহাঙ্গীরের অপসারণের পর আওয়ামী লীগের যে সকল নেতা-কর্মী সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন তাদের মধ্যে স্বস্তি চলে এসেছে। জাহাঙ্গীর ছাড়াও যারা গাজীপুরের যারা গুরুত্বপূর্ণ নেতা তাদের মষ্যে ঐক্যবদ্ধতা রয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলছি। আমাদের ভেতরে যে আন্তরিকতা রয়েছে সেটায় কোনো ঘাটতি নেই, হবেও না। এখানে অনেক ভালো নামের এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা আছেন। তাদের নেতৃত্বের মাধ্যমে সংগঠন এগিয়ে যাবে।

এদিকে বিভিন্ন এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে পারেন বলে মনে করছেন জাহাঙ্গীরের যারা অনুসারী রয়েছেন তারা। গতকাল ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় জাহাঙ্গীরের ঘনিষ্ঠ ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনিরের বেশ কয়েক জন সমর্থকদের মধ্যে বেশ দীর্ঘ সময় ধরে সং/ঘ’র্ষের ঘটনা ঘটেছে এবং এই ঘটনায় একজন আ’হ/ত হয়েছেন।

 

About

Check Also

মাত্র ১৫ মিনিটে বাংলাদেশ দখলের হুমকি, উত্তেজনা পশ্চিমবঙ্গে

পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ‍্যালঘু সেলের মালদা জেলা সভাপতি টিঙ্কু রহমান বুধবার (১১ ডিসেম্বর) এক বিতর্কিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *