Thursday , October 24 2024
Home / Countrywide / এত লাভ এবং দামের পার্থক্য কেন, প্রশ্ন তুললেন ব্যবসায়ী নেতা

এত লাভ এবং দামের পার্থক্য কেন, প্রশ্ন তুললেন ব্যবসায়ী নেতা

খাদ্যশস্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ পড়তে হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায়। এই অবস্থায় সরকার নানা ধরনের মৌখিক আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সেটা জনগণের কোন কাজে আসছে না। বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে দৈনন্দিন পণ্য বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের মজুদ ও সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা বলছে কিন্তু সেটার বিষয়ে কোনো ফল আসছে না। এ ব্যাপারে টিসিবির তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। পণ্য সরবরাহ স্থিতিশীল থাকলেও ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার মাধ্যমে দাম বাড়াতে শুরু করেছে।

মো. জসিম উদ্দিন যিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি হিসেবে রয়েছেন তিনি দেশের নিত্যপন্যের দামের উর্ধ্বমূখীতা প্রসঙ্গে বলেন, সুযোগের অপব্যবহার না করে মানুষের যাতে কল্যান হয় সে জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এত লাভ কেন করতে হবে আপনাদের? আমরা ব্যবসা করবো সেটা ঠিক আছে, কিন্তু আমরা এমন কিছু করব না যা সমগ্র ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের উপর দোষ বা বদনাম বয়ে আনবে। ‘

গতকাল রবিবার এফবিসিসিআই আয়োজিত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর মজুদ, আমদানি, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি বিষয়ক মতবিনিময়সভায় জসিম উদ্দিন এসব কথা বলেন। রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই ভবনে এই মতবিনিময়সভা হয়। নিত্যপণ্যের আমদানিকারক, আড়তদার ও বিভিন্ন খুচরা বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা মতবিনিময়ে অংশ নেন।

কারসাজি করে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে মনে করেন এফবিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে যেদিন পেঁয়াজের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হলো, সেদিন বিকেলেই প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০-১৫ টাকা কমে গেল। শুল্কমুক্ত সুবিধায় পেঁয়াজ আমদানির আগেই দাম কমানোর মানে হলো আগেও কমানোর সুযোগ ছিল।

জসিম উদ্দিন বলেন, বাজার কারসাজির সঙ্গে জড়িত দু-একজন ব্যবসায়ীর কারণে পুরো ব্যবসায়ী সমাজের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে দেওয়া যায় না। তাই ব্যবসায়ীদের জবাবদিহির মধ্যে আসতে হবে।

বাজার পরিস্থিতির ওপর আলোচনা করতে গিয়ে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, শ্যামবাজারে এক আড়ত থেকে আরেক আড়তে ভিন্ন ভিন্ন দামে পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হয়। আবার খুচরা বাজারেও এক বাজার থেকে আরেক বাজারে দামের পার্থক্য কেজিতে ১০-১৫ টাকা। এই অবস্থা অস্বাভাবিক। এর জন্য অল্প কয়েকজন ব্যবসায়ী দায়ী। ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই ব্যবসা করব, কিন্তু এমন কিছু করব না, যাতে পুরো ব্যবসায়ীসমাজের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’

জসিম উদ্দিন বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে সাধারণ মানুষের আয় কমে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়লে মানুষের কষ্ট হয়; কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে মাছ, মাংস, মুরগি, পেঁয়াজ, চালের মতো পণ্যের দাম অসম্ভব রকম বেড়ে গেছে। নিত্যপণ্য একেক বাজারে একেক দামে বিক্রি হওয়া নিয়েও ক্ষো’/ভ জানান এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি। তিনি বলেন, রংপুরে একটি পণ্য পাঁচ টাকায় বিক্রি হয়। ঢাকার কারওয়ান বাজারে সেটির দাম বেড়ে হয় ১০ টাকা। গুলশানে গেলে ২০-২৫ টাকা হয়ে যায়।

জসিম উদ্দিন আরো বলেন, এক কেজি চাল বিভিন্ন বাজারে বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। অরা’জকতা চলছে—এটা ঠিক নয়। আগে কেজিতে ৫০ পয়সা বা এক টাকা লাভ করতেন ব্যবসায়ীরা। এখন কেজিতে পাঁচ-ছয় টাকাও মুনাফা করছেন কেউ কেউ।

এ সময় এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, শ্যামবাজারে আজ (গতকাল) দেশি পেঁয়াজ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ সেই পেঁয়াজ গুলশানের বাজারে ৬০ টাকা, নিউ মার্কেটে ৬৫ ও শান্তিনগর বাজারে ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেন এমন হবে? বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের সদিচ্ছা আছে উল্লেখ করে জসিম উদ্দিন বলেন, বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে এফবিসিসিআই কাজ করবে।

পেঁয়াজের আড়তদার ও আমদানিকারকরা দাম বাড়া-কমার পেছনে নানা যুক্তি দেন। তাঁরা বলেন, পেঁয়াজ পরিবহনে চাঁদাবাজি, ভারতে বৃষ্টি ও সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বাড়তি বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার কারণে পণ্যটির দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বলেন, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়লে ব্যবসায়ীদের নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করা হয়। তাঁরা মনে করেন, ঢালাওভাবে মন্তব্য না করে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে, তারা ওই সব ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে পারে।

এ ব্যাপারে পরবর্তী সময় পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানিয়ে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি ব্যবসায়ীদের আরো কোনো সমস্যা থাকলে তা এফবিসিসিআইকে জানানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে এফবিসিসিআইয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যক্রম শুরু হবে। কমিটিগুলো ব্যবসায়ীদের সমস্যা সমাধানে নিরলসভাবে কাজ করবে।

এদিকে, বিশ্বব্যাপী খাদ্যে পন্যের দাম বেড়েছে কিছুটা, কিন্তু সেই তুলনায় বাংলাদেশে নিত্য পন্যের দাম বেড়েছে অনেক বেশি। খাদ্য মূল্য সূচক অনুযায়ী বর্তমান সময়ে বাজারে দাম এক বছর আগের তুলনায় ৪০% বেড়েছে। বিশেষ করে উদ্ভিজ্জ তেলের দাম বেড়েছে, যা গত এক বছরে প্রায় ৯০% বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যান্য দ্রব্যমূল্য, যেমন বিভিন্ন ধরনের ধাতব পন্য, তেল এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামও ২০২০ সালের মাঝামাঝি থেকে ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে যারা নিম্ন আয়ের মানুষ তারা বেশ বিপাকে পড়বে বলে ধারনা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশে সরকার মুখে পন্যদ্রব্য নিয়ন্ত্রনের কথা বললেও তা কার্যকর করার তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায় না।

 

 

 

 

About

Check Also

বাংলাদেশের কী লাগবে জানতে চেয়েছে বিশ্বব্যাংক

বাংলাদেশের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের কাছে অর্থ সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় অঙ্ক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *