পাঁচ বছরের দায়িত্ব পালন শেষে ১৪ ফেব্রুয়ারী মেয়াদ শেষ হলো কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের। এ উপলক্ষ্যে গতকাল সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক বিদায়ী অনুষ্ঠানে সিইসি নূরুল হুদা বলেন, ‘পাঁচ বছরের দায়িত্বে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। তবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছি। আমাদের ওপর যে দায়িত্ব ছিল, কঠোর পরিশ্রম করে সে দায়িত্ব পালন করেছি।’
তিনি বলেন, ‘গত ৫ বছর নির্বাচন কমিশন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। ইভিএমএ ভোট গ্রহণ কমিশনের বড় সাফল্য। আইনের মাধ্যমে নির্বাচনকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার চেষ্টা ছিল।’
এসময় তিনি আরও বলেন, ‘দায়িত্ব পালনে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তারপরেও সফলভাবে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। তবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কিছু ভুল হয়েছে। শতভাগ সফলতা অর্জন করতে পারেনি। নির্বাচনে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।;
ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা নিয়ে সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশন পাঁচ বছরে দুবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করেছে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের মাঠপর্যায়ে অফিসসমূহের মাধ্যমে সারাবছরই ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। বর্তমানে (১৯ জানুয়ারি ২০২২) দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৩১ লাখ ২৩ হাজার ১৭৫ জন।
সিইসি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন ৫ বছরে রাষ্ট্রপতি, জাতীয় সংসদ, জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন এবং সকল স্থানীয় সরকার পরিষদের সাধারণ ও উপনির্বাচনসহ ৬ হাজার ৬৯০টি নির্বাচন অনুষ্ঠান করেছে।
প্রবাসী ভোটার তালিকাভুক্তি নিয়ে তিনি বলেন, আপনারা জানেন প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন। জাতীয় পরিচয়প্রাপ্তি প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি। তাদের এ দাবি পূরণে নির্বাচন কমিশন বিদেশে বসবাসরত প্রত্যেক নাগরিককে ভোটার তালিকাভুক্ত করা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। বেশ কয়েকটি দেশে কার্যক্রম শুরু করা হলেও বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে তা এগিয়ে নেওয়া যায়নি। আশা করি পরবর্তী কমিশন এ কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
পিতামাতার পরিচয়হীনদের ভোটার তালিকাভুক্তি নিয়ে তিনি বলেন, যারা তাদের পিতামাতার পরিচয় জানে না বা জানাতে চান না, তাদের কীভাবে ভোটার করা যায় তা দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে যারা এতিমখানায় বড় হয়েছে বা তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী তাদের পিতামাতার নাম জানা থাকে না বা অনেকে জানাতে চায় না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের অংশগ্রহণে একটি ওয়ার্কশপও করা হয়েছে।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বিষয়ে তিনি বলেন, তিনটি রাজনৈতিক দলকে নতুন করে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলের বিধিবিধান যথাযথ প্রতিপালন না করায় তিনটি দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও দক্ষতার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনায় সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পাঁচ বছরে ২৪ লাখ ৭০ হাজার ৮৮১ জন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে জিআইএস পদ্ধতি ব্যবহার করে জাতীয় সংসদের ২৫টি আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো সিটমহলগুলোকে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ ও যুগ্ম সচিব এসএম আসাদুজ্জমান উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সাবেক বেসামরিক আমলা কেএম নূরুল হুদাকে সিইসি; মাহবুব তালকুদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও সামরিক আমলা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। পাঁচ বছরে এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে জাতীয় ও স্থানীয় মিলিয়ে সর্বমোট ৬৬৯০টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।