Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / National / উপস্থাপিত হলো ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা’, ষাটোর্ধ্ব যেকোনো ব্যক্তিই হতে পারবেন উপকৃত

উপস্থাপিত হলো ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা’, ষাটোর্ধ্ব যেকোনো ব্যক্তিই হতে পারবেন উপকৃত

২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের দলীয় ইশতেহার অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারিসহ সব ধরনের অনানুষ্ঠানিক খাতের ষাটোর্ধ্ব জনগণের জন্য একটি সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রণয়ন এবং কর্তৃপক্ষ স্থাপনের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সেই নির্দেশ মোতাবেক প্রথম উদ্যোগ নেওয়ার ৮ বছর পর অবশেষে সব শ্রেণির বয়স্ক নাগরিকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে বহুল আকাঙ্ক্ষিত সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে শুরু করতে যাচ্ছে সরকার।

দেশের ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সি নাগরিকদের যে-কেউ প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ চাঁদা হিসেবে জমা দিয়ে এই পেনশন সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। সর্বনিম্ন মাসিক ফি-র পরিমাণ ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। মোবাইলে আর্থিক পরিষেবা (এমএফএস) ও এজেন্ট ব্যাংকিংসহ সমস্ত অনলাইন পদ্ধতিতে এই ফি পরিশোধ করা যাবে।

পেনশন সুবিধা পেতে হলে অন্তর্ভুক্তির পর কমপক্ষে ১০ বছর ধরে তা পরিচালনা করতে হবে। তবে এই পেনশনে নাম অন্তর্ভুক্ত করানো বাধ্যতামূলক করা হবে না। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপিত একটি সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রণয়নের কৌশলপত্রে এসব তথ্য জানানো হয়।

৬০ বছর বয়সে অবসর নেওয়ার পর পেনশন হিসেবে এককালীন অর্থ পাওয়াসহ প্রত্যেক নাগরিক তার নিজের কন্ট্রিবিউশন অনুযায়ী আজীবন মাসিক পেনশন সুবিধা পাবেন। আর সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির পর কেউ মারা গেলে তার পরিবারের সদস্যরা সুবিধা পাবেন।

পেনশন তহবিলে নাগরিকদের চাঁদা হিসেবে জমা দেওয়া তহবিল সরকার ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগের পাশাপাশি সরকারের লাভজনক অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করা হবে। এতে সরকারের ব্যাংক ঋণ-নির্ভরতা কমবে।

বিনিয়োগ থেকে পাওয়া মুনাফার পাশাপাশি তহবিলে সরকারের কন্ট্রিবিউশনও থাকবে। যদিও সরকারের অবদান কত শতাংশ হবে, তা নির্ধারণ করা হয়নি।

এই পেনশন ব্যবস্থা চালুর পর বয়স্কভাতাসহ বর্তমানে বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বেশ কিছু কর্মসূচি সংকুচিত করে পেনশন তহবিলে অর্থ ব্যয় করবে।

দেশজুড়ে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা পুরোদমে চালু হওয়ার পর থেকে সরকারি চাকরিতে নিয়োগপ্রাপ্তদেরও এই পেনশন ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গভাবে দেশজুড়ে বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

বর্তমানে সরকারি চাকরিরতদের পাশাপাশি তার আগ পর্যন্ত যারা সরকারি চাকরিতে যোগদান করবেন, তারা এখনকার মতোই সরকার থেকে পেনশন পাবেন।

কোন বছর থেকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশকারীদের ক্ষেত্রে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা কার্যকর হবে, তা সরকার নির্ধারণ করে দেবে।

১০ বছরে সরকারি চাকরিজীবীদের মাসিক সর্বোচ্চ গ্রস পেনশনের পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে, তার ওপর প্রতিবছর ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট যুক্ত হচ্ছে।

পেনশনার ও পারিবারিক পেনশনারের মৃত্যুর পর তাদের নাবালক সন্তান এবং অবিবাহিত মেয়ে ও প্রতিবন্ধী সন্তান আজীবন পেনশন সুবিধা পাচ্ছেন।

কিন্তু বেসরকারি খাতে কর্মরতদের জন্য অবসর জীবনে ও তাদের সন্তানদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোনো সুবিধা নেই।

সর্বশেষ লেবার ফোর্স সার্ভের অনুসারে, বর্তমানে বেসরকারি খাতে কর্মচারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫.৮৫ কোটিতে, যেখানে সরকারি কর্মরত মানুষের সংখ্যা ২২.৮৯ লাখ।

বেসরকারি প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরতদের একাংশ কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড (সিপিএফ) ও গ্র্যাচুইটি সুবিধা পেলেও অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরতরা অবসরকালে কোনো সুবিধাই পান না।

তখন সন্তানদের পাশে না পেলে রোগাক্রান্ত ভগ্ন শরীর নিয়ে জীবনের শেষ দিনগুলো কাটাতে হয় মারাত্মক অর্থ সংকটে। ২০৪০ সালের পর ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট (জনমিতিক লভ্যাংশ) শেষ হতে থাকবে, তখন এ ধরনের বয়স্ক মানুষের সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়বে।

বয়সের কাঠামো অনুসারে বাংলাদেশ এখনও তরুণ দেশ, তবে দ্রুতই বয়স্ক দেশ হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে বয়স্ক রাষ্ট্রের পর্যায়ে পৌঁছবে।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৫০ সাল নাগাদ ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সি মানুষের সংখ্যা ৪০ মিলিয়নের উপরে পৌঁছতে পারে। ২০২০ সালে এই বয়সি মানুষের সংখ্যা ছিল মাত্র ১০ মিলিয়ন। অর্থাৎ পরবর্তী তিন দশকের প্রতি দশকে ১০ মিলিয়ন মানুষ বয়স্ক নাগরিকের কাতারে নাম লেখাবেন।

বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা বিষয়ক কৌশলপত্রটি উপস্থাপন করেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার। এ সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।

কৌশলপত্রে অর্থ বিভাগ প্রথান তিনটি লক্ষ্য সংবলিত সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রবর্তনের কথা বলা হয়।

প্রধান লক্ষ্যগুলো হলো—বৃদ্ধ বয়সে কর্মরত জনগোষ্ঠীর আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং এর মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রার মানকে দারিদ্র্যসীমার উপরে রাখা; নিম্ন আয়ের মানুষের সঞ্চয়ের প্রবণতা বৃদ্ধি করা এবং তাদের একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় এনে তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করা; এবং ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে একীভূত করে সেটিকে বিনিয়োগে রূপান্তর করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার মাধ্যমে মূলধন সঞ্চয়কে উৎসাহিত করা।

অর্থমন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশের আপামর জনগণের জন্য বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী একটি সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের যে অঙ্গীকার করেছিলেন, তার আলোকে এ কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার আলোকে প্রণীত কৌশলপত্রটির উপর প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য জরুরি ভিত্তিতে একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে অর্থ বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, কৌশলপত্রে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর করার কথা বলা হয়েছিল। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আগামী অর্থবছরেই এটি চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় চলতি অর্থবছরের মধ্যেই এ সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালা প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করবে বলে জানান তারা।

ওই আইনের আওতায় অর্থ বিভাগের অধীনে একটি ‘সর্বজনীন পেনশন অথরিটি’ গঠন করা হবে। পুরোপুরি আইটিভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠান সারা দেশের মানুষের পেনশন ব্যবস্থাপনা করবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কৌশলপত্রটি চূড়ান্ত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে এই পেনশন ব্যবস্থা ঘোষণা করবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে প্রত্যেককে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করতে হবে।

যেভাবে বিলম্বিত হলো সর্বজনীন পেনশন স্কিম

২০১৪ সালের এপ্রিলে এনজিও প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রাক্‌-বাজেট আলোচনায় প্রথমবারের মতো বেসরকারি খাতের জন্য পেনশন ব্যবস্থা চালুর কথা বলেন তৎকালীন অর্মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

ওই বছরের জুনে বাজেট বক্তব্যেও এ ঘোষণা দেওয়ার পর পেনশন স্কিম চূড়ান্ত করতে ফিন্যান্সিয়াল ইন্সটিটিউশন ডিভিশনকে (এফআইডি) নির্দেশ দেন তিনি।

পরের বছরগুলোর বাজেট বক্তব্যে প্রতিশ্রুতি নবায়ন করে ২০১৮ সালে পাইলটভিত্তিতে বেসরকারি ব্যাংক ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জন্য এবং ২০২১ সালে সবার জন্য পেনশন চালুর ঘোষণা দেন তিনি।

কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের কোন বিভাগের অধীনে পেনশন সুবিধা পরিচালিত হবে, তা নিয়ে দ্বন্দ্বে কেটে যায় দুই বছর।

পরের দু-বছরে অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি দল ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ ঘুরে এসে কিভাবে এটি চালু করা যায়, তা নিয়ে একটি রিপোর্ট জমা দেয়।

কিন্তু ওই টিমের প্রধান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব এবিএম নাজমুস সাকিব ২০১৭ সালে অফিস অব দ্য চিফ কন্ট্রোলার অব ইম্পোর্টস অ্যান্ড এক্সপোর্টসে বদলি হয়ে যান। গত বছর অবসরপূর্ব ছুটিতে (পিআরএল) যান তিনি।

২০২০ সালে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নাজমুস সাকিবকে নিয়োগ দিয়ে কনসেপ্ট পেপার তৈরির কাজ শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে সেই উদ্যোগও ভেস্তে যায়। এ কারণে কবে আবার কাজ শুরু হবে, তা বলতে পারছেন না কেউ।

অর্থবিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, বিপুল সংখ্যক মানুষকে অর্থসাহায্য প্রদানের জন্য পরিকল্পনা প্রস্তুতপূর্বক সবকিছু শুরু করা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ বিষয়। এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রযুক্তিগত অবকাঠামো গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রয়োজন উপযুক্ত বিদেশি পরিমর্শদাতা।

About Ibrahim Hassan

Check Also

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সেন্টমার্টিন লিজ দেওয়ার বিষয়ে যা জানালেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গুজব ছড়িয়েছে যে অন্তর্বর্তী সরকার সেন্টমার্টিন দ্বীপকে লিজ দিচ্ছে। তবে প্রধান …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *