বহুল সমালোচনা ও অভিযোগকে সাথে নিয়ে ২০১৭ সালে দায়িত্ব পাওয়া বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারী। অধিকাংশ বিশ্লেষকের মতে, কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থা এবং নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থার চরম সংকট তৈরি করেই বিদায় নিতে যাচ্ছেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই কিছু পদক্ষেপে নির্বাচন কমিশন নিয়ে মানুষের মনে আশা জাগিয়েছিল। কিন্তু কিছুদিনের কার্যক্রমে তারাই প্রমাণ করেছেন তারা পক্ষপাতদুষ্ট, তাদের সততা নিয়ে প্রশ্ন আছে। নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন করেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনিয়মের তথ্য তুলে ধরা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উলটো অনিয়মকে অস্বীকার করেছেন। নিম্নমানের ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনা হয়েছে।’
এ সময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘দুবার ফল প্রকাশ করে প্রমাণ করেছে এই মেশিনে জালিয়াতি করা যায়। এই কমিশন নির্বাচন ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশন নিয়ে যে আস্থার সংকট তৈরি করল তা সহজেই পূরণ হওয়ার নয়। এজন্য সঠিক ও যোগ্য ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া উচিত। যদিও নির্বাচন কমিশনাররা বারবারই দাবি করে আসছেন, তারা আইনের মধ্যে থেকেই কাজ করেছেন। নির্বাচনও আইনানুগ হয়েছে।’
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম গতকাল বুধবার বলেন, ‘আমরা আইনানুগভাবে সব নির্বাচন করেছি। গ্রহণযোগ্যতা বিষয়টি একেক জনের কাছে একেক ধরনের। তবে আমরা বলতে পারি, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু নির্বাচনের অয়িমের তথ্য সঠিক সময়ে না পেলে আমাদের কিছু করার থাকে না। কারণ আমরা সংবিধান ও আইন মেনে চলেছি।’
আগামী সোমবার নির্বাচন ভবনে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কমিশন সচিবালয় ত্যাগ করবেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা। এর আগে আগামী রবিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বঙ্গভবনে সাক্ষাৎ করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ চারজন কমিশনার।
ওইদিন সকালে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে একশ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার হাতে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র তুলে দেবে কমিশন। ওই অনুষ্ঠানে সিইসি কেএম নূরুল হুদা নিজেই নিজের কার্ড নেবেন। একই অনুষ্ঠানে বাংলা ভাষায় অনূদিত ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৭৯২’ এবং সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইন নিয়ে তৈরি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হবে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে, বর্তমান কমিশন বিদায় নিলেও যে আস্থার সংকট তৈরি করেছেন তা পূরণ হওয়া দুষ্কর-এমন মন্তব্য নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের। তাঁরা বলেন, কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ নেতৃত্বাধীন কমিশনের সময়ে (২০১২-২০১৭) নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থার সংকট তৈরি হয়। কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন কমিশন মেয়াদের প্রথম দুই বছরে ইসির ওপর কিছুটা আস্থার জায়গা তৈরি হয়। ইসির সংলাপ, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় অনেক নির্বাচনেও অংশ নেয় বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল। ওইসব নির্বাচনে ইসির নমনীয় ও বিতর্কিত অবস্থানই আস্থার এ সংকট তৈরি করেছে।
উল্লেখ্য, গত ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনে যোগ দেন সিইসি কেএম নূরুল হুদা ও চার কমিশনার। আগামী সোমবার ১৪ ফেব্রুয়ারি তাদের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগে গত ২৭ জানুয়ারী জাতীয় সংসদে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ পাস হয়। স্বাধীনতার পর এবারই প্রথমবারের মতো আইন অনুযায়ী গঠিত হচ্ছে নতুন নির্বাচন কমিশন। নতুন কমিশন তৈরীতে সার্চ কমিটি কাজ করছে। যে প্রক্রিয়ায় সার্চ কমিটি কাজ করছে তাতে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারির আগে নতুন কমিশন গঠনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। এমন অবস্থায় কয়েকদিনের জন্য কমিশনারবিহীন থাকতে পারে নির্বাচন কমিশন।