বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হতে যাওয়ায় পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে গত ২৭ জানুয়ারী জাতীয় সংসদে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ পাস হয়। ফলশ্রুতিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারী নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়োগের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদিত ও গঠিত হয় সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটি।
এদিকে অনুসন্ধান কমিটিতে নিয়োগ পাওয়া অধিকাংশ ব্যাক্তিদের নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক বিরোধীদলসমূহ শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে এসেছে। এ প্রসঙ্গে আজ মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘প্রায় সবাই প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে, এ অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশে যে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে, তাদের লক্ষ্য থাকবে বিদায়ী কমিশনের মতোই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা।’
গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এ সময় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ইকবাল হাসান মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে অনুসন্ধান কমিটি এবং তাদের দ্বারা গঠিত নির্বাচন কমিশন কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করতে পারবে না। এ কারণে বিএনপি অনুসন্ধান কমিটির বিষয়ে কোনো আগ্রহ প্রকাশ করতে চায় না। বিএনপি মনে করে, এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অর্থহীন ও অগ্রহণযোগ্য। তা ছাড়া যাঁদের সমন্বয়ে এই অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাঁরা প্রায় সবাই প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘অনুসন্ধান কমিটির প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ছিলেন। তাঁর ছোট ভাই সাজ্জাদুল হাসান প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করেছেন। মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, পিএসসির (সরকারি কর্ম কমিশন) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইনসহ অন্যরাও বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে এ অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশে যে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে, তাদের লক্ষ্য থাকবে বিদায়ী কমিশনের মতোই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা। এটা জনগণের সঙ্গে আরেকটি একটি প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। এ ধরনের তামাশা জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে। বিএনপি মনে করে, কেবল নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসংক্রান্ত সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরই একটি নির্বাচনের মাধ্যমে এ সংকট উত্তরণ সম্ভব।’
তাহলে নিরপেক্ষ ইসি পাওয়ার পথ কী—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকে বলে আসছি, আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সচেতনভাবে এবং পরিকল্পিতভাবে ২০০৮ সালের পর থেকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সব স্তম্ভ ও প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে এবং নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। কেয়ারটেকার সরকারপদ্ধতি যেটা সংবিধানে ছিল, সেটা বাতিল করে দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে এসেছে। আমরা হাজারবার বলেছি, বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি, এ সংস্কৃতির কারণে এখানে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন ছাড়া কখনো অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন করা সম্ভব নয়।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আজকে নির্বাচন কমিশন শুধু যে ব্যর্থ হচ্ছে তা নয়, তারা চুরি করছে, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়েছে। এটা অবিশ্বাস্য যে তারা ইভিএম কিনেছে ১১ গুণ বেশি দামে, ভারত থেকে। এ রকম একটা জঘন্য পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে কমিশন। বাংলাদেশের যে আত্মা, ১৯৭১ সালে যার জন্য আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, একটা গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের জন্য, তার সবকিছুই ধ্বংস করে দিয়েছ আওয়ামী লীগ, শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য।’
এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের একমাত্র উপায় হিসেবে দলটির মহাসচিবের কথাই পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন সরকারের বিদায় ও নিরপেক্ষ সরকারের আগমন ব্যতীত এসকল প্রতিষ্ঠান থেকে অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রণয়ন সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, দেশের অন্যতম শক্তিশালী এই রাজনৈতিক দলটি গতকালকেই অনুসন্ধান কমিটির কাছে কোনো নাম প্রস্তাব বা সুপারিশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।