রাজনীতি
Hits: 1612
বাংলাদেশের নিকট অতীত রাজনৈতিক ইতিহাস বলে, জাতীয় পার্টি (জাপা) সব সমই ক্ষমতার যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার হয়। যার সঙ্গে জাপা সেই ক্ষমতায়; এমনটা এখন সবার ধারণা। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও কি সেটাই বহাল থাকবে, নাকি বদলে যাবে সেই সিঁড়ি? যুক্তফ্রন্টসহ নানা দলের বিকল্প জাতীয় ঐক্যকে প্রধানমন্ত্রীর সাধুবাদ জানানোয় এমন প্রশ্ন মুখে মুখে।
আসছে ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ক্ষমতারোহনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে অনেক আগেই। ভোটের মাঠের পাশাপাশি রাজনৈতিক জোটেও গুরুত্ব দিচ্ছে সব দল। ইতিমধ্যে যুক্তফ্রন্ট বিকল্পধারা সম্মিলিতভাবে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ও বিরোধী বিএনপিজোট তাদের সাধুবাদ জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ’বাংলাদেশে তো দল দুটি; আওয়ামী লীগ আর এন্টি আওয়ামী লীগ। এন্টি আওয়ামী লীগাররা সব এক হলে তো ভালো। তাদের নিয়ে নির্বাচন করা যাবে। আমরা তাদের সাধুবাদ জানাবো।’
আরো পড়ুন
Error: No articles to display
যুপৎআন্দোলনে এরশাদের স্বৈরশাসনের অবসানের পর ৯১ এ বিএনপি ও ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এই স্বৈরশাসককেই ক্ষমতার সিঁড়ি বনে যান। ২০০৮ এর নির্বাচনে এরশাদকে নিয়ে মহাজোট করে ভোটে জয় পায় আওয়ামী লীগ। সর্বশেষ জোটের বাইরে দিয়ে ২০১৪ সালের নির্বাচনে কোয়ালিশন সরকার গঠন করে দলটি। এবার কী জোটবে এরশাদের ভাগ্যে? যদিও এরশাদ বলছেন, ’এবার আর কারো ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হবেন না। ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চান।’ মরার আগে নাকি এটি তার শেষ ইচ্ছা!
১০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংসদের অফিসে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বৈঠক হয়। এতে জোটগ ঠন ও আগামী নির্বাচন নিয়ে নানা কথা হয়। এরমধ্যে এরশাদ মহাজোটে যাওয়ার জন্য ৮০ আসন দাবি করেন, এবং ক্ষমতায় গেলে ১০টি মন্ত্রণালয়ও তার চাওয়া বলে জানান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন, ’জোটের আকার বড় হবে। এত আসন দেয়া যাবে না।’ এসময় তাকে ৩৫টি আসন ও সরকার গঠন করলে ৬টি মন্ত্রণালয় দেয়ার প্রস্তাব করা হয়।
এদিকে সব সময় ক্ষমতার ক্রিম খাওয়া জাপাকে নানা প্রস্তাবে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করছে ১২ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিও। তাদেরও টার্গেট যোকোনো মূল্যে ক্ষমতায় আসা। এতে যেকাউকে ক্ষমতার বেশ বড় ভাগও দিতে রাজি দলটি। এখন দেখার অপেক্ষা কী করেন সদা ডিগবাজিতে ওস্তাদ সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ!
তবে আওয়ামী লীগ এখনো শেষ দৃশ্যপটের অপেক্ষায়। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন এলে নানান শ্রেণিপেশার লোকজন তৎপর হন। দলগুলো তাদের জোট-মহাজোট গঠনে তৎপর হয়। আমরাও আমাদের জোট নিয়ে কথা বলছি, এবার জোটের আকার বড় হবে। কারা থাকবে বা থাকেবে না, এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে ৭০টি আসন জোটের শরীকরা পেতে পারেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, যুক্তফ্রন্ট ও বিকল্পধারাসহ বিভিন্ন দলগুলো বিএনপিকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য করলে আওয়ামী লীগ তার ১৪ দলের সব শরীক, জাতীয় পার্টি ও দলছুটদের ছোট ছোট দল এবং বামদলগুলোকে নিয়ে মহাজোট গঠন করবে। আর বিএনপি-জামায়াতের ঐক্য অটুট থাকলে এবং নির্বাচনে না এলে বিভিন্ন দল নিয়ে ’জাতীয় ঐক্য’ই আলাদাভাবে নির্বাচনে মাঠে থাকবে। আর তখন তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করতে পারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গেল বারের জাপার মতো যুক্তফ্রন্টের জাতীয় ঐক্য হতে পারে বিরোধীদল।
এ বিষয়ে জাতীয় ঐক্যের উদ্যোক্তাদের একজন ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, "আমাদের প্রথম চাওয়া বা দাবি হচ্ছে, সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ। এই পরিবেশ পেলে আমরা জাতীয় ঐক্য- ভোটে যাবো কিনা সিদ্ধান্ত নেবো। বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করে ভোটে যাবো, নাকি পৃথকভাবে শুধু ’জাতীয় ঐক্য’ ভোটে যাবো, সবই পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে।"
জনগণের সমর্থন পেলে ভোটে যাবেন বলেও জানান মান্না।
এদিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ’জোট ভোট সব কিছুই পরিবেশ-পরিস্থিতির আলোকে হয়। কী হবে এখনই বলা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে আমাদের এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আলোচনার পর্যায়ে আছে।’
আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ’১৪ দলীয় জোট আমাদের নির্বাচনী জোট। জোট অটুট থাকবে। আমরা একসঙ্গে থেকেই নির্বাচন করবো।’
প্রকৃতপক্ষে রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। যেকোনো সময় পরিস্থিতির উন্নতি বা অবনতি হবে পারে। সেটি মথায় রেখেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা তাদের ক্ষমতা অটুট রাখতে যেকাউকে ছাড় দেবে। এজন্য জোট সম্প্রসারণেও বেশ তৎপর তারা। ইতিমধ্যে সিপিবি, কৃষক শ্রমিক জনতালীগ, বিএনফসহ কয়েকটি ছোট দলের প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
উৎসঃ poriborton